প্রাণপণ: ভেঙে পড়েছে গাছ। দোকান বাঁচানোর চেষ্টা মেদিনীপুরের লোকনাথপল্লিতে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। অনেক কাঁচাবাড়ি ভেঙেছে। বহু মানুষ এখনও অস্থায়ী নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকেই আপৎকালীন তৎপরতায় পুনর্গঠনের কাজে নেমে পড়েছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক রশ্মি কমল মানছেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ে জেলার বেশ কিছু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, এখনও সব এলাকা থেকে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য মেলেনি। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করা হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রতিমা দাস বলেন, ‘‘দ্রুত কিছু মেরামতির কাজে হাত লাগানো হয়েছে।’’
জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের বলি হয়েছেন দু’জন। একটি ঘটনা ঘটেছে মোহনপুরে, অন্যটি খড়্গপুর গ্রামীণে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমপান থেকে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে, আগাম সতর্কতা হিসেবে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছিল। তাও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি। আসলে ঝড় যেন তাণ্ডব চালিয়েছে। ঝড়ের ভয়াল গতিতে বেশ কিছু এলাকায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।’’
বুধবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। পরে সব লন্ডভন্ড করেছে ঘূর্ণিঝড় আমপান। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কত? ব্লকগুলি থেকে আসা প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ১১,৫৩২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১,১২০টি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০,৪১২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশিরভাগই কাঁচাবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা বেশি দাঁতন-১ এবং ২, মোহনপুর, কেশিয়াড়ি প্রভৃতি এলাকায়। দুর্গত মানুষের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৯৪৬। অর্থাৎ, ঘূর্ণিঝড়ের জেরে এই সংখ্যক মানুষ খুবই সমস্যায় পড়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতায় জেলায় রেসকিউ সেন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হয়েছে। জেলা জুড়ে ১,৩৬৯টি রেসকিউ সেন্টার খুলতে হয়েছে। বেশিরভাগই স্কুলবাড়িতে। জানা যাচ্ছে, বুধবার রাত পর্যন্ত এই সেন্টারগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন ৭১ হাজার ১৩৬ জন। প্রশাসনিক উদ্যোগেই এই সংখ্যক মানুষকে ওই নিরাপদ আশ্রয়গুলিতে সরানো হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে বুধবারই দাঁতনে গিয়েছিলেন জেলাশাসক রশ্মি কমল। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক উত্তম অধিকারী, অতিরিক্ত জেলাশাসক সৌর মণ্ডল প্রমুখ। আমপান পরবর্তী পরিস্থিতির পর্যালোচনায় বৃহস্পতিবার কালেক্টরেটে এক বৈঠকও হয়েছে। প্রশাসনিক এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের থেকে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট নিয়েছেন জেলাশাসক। একেবারে গ্রাম পঞ্চায়েতস্তর পর্যন্ত খোঁজখবর নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘আমপান আমাদের এই জেলাকে ধ্বংসের কিনারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জেলার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কারণ মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন, সে ভাবেই ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন।’’
বুধবার জেলায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও কখনও হালকা, কখনও মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ঘাটালে, ১৫১ মিলিমিটার। সবংয়ে ৭২ মিলিমিটার, মেদিনীপুরে ৭০ মিলিমিটার। দুর্যোগে বেশ কিছু উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের আবাসনের পাঁচিল ভেঙেছে। জেলা স্বাস্থ্যভবনের রিজার্ভ স্টোরের (ডিআরএস) পাঁচিলও ভেঙেছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, ‘‘দমকা হাওয়া আর ঝড়ে গাছ পড়ে কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’
বুধবার বিকেল থেকেই ঝড়ের দাপটে বাড়ে, ভাঙে গাছ। মেদিনীপুরের পুর-প্রশাসক দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, ‘‘শহরে কিছু জায়গায় ছোট-বড় গাছ উপড়ে পড়েছিল। বুধবার রাতেই গাছ সরানোর কাজে নেমে পড়েছিলেন পুরকর্মীরা।’’
কেশপুর, শালবনির কিছু এলাকায় গাছ উপড়ে সাময়িকভাবে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নিচু এলাকা এবং বিপদসঙ্কুল এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। না হলে আরও ভয়াবহ ক্ষতি হত।’’ কিছু জায়গায় হোর্ডিং ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনের দাবি, ত্রাণের জন্য খাবার, ত্রিপল প্রভৃতি মজুত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে তা বিলিও শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy