Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪

রং বদলের কেশপুরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা বাম শিবিরে

দুপুরের তেজি রোদ মাথায় নিয়ে লাল পতাকা হাতে ধীর লয়ে হেঁটে চলেছিলেন জনা তিরিশেক লোক। সামনে কেশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রামেশ্বর দোলই। পাশে কেশপুর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি শেখ জাহাঙ্গির, সিপিএমের কেশপুর জোনাল সম্পাদক মানিক মিশ্র। পেছনের মাইক বাঁধা গাড়ি থেকে স্লোগান উঠছে— ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার। তিনটি গাড়ি করে কর্মী-সমর্থকরা এসেছেন কেশপুর জোনাল অফিস থেকে। সেখানে রয়েছেন এলাকার কিছু ঘরছাড়া নেতাও।

খেতুয়ায় দলীয় কার্যালয় খুলছেন বাম কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।

খেতুয়ায় দলীয় কার্যালয় খুলছেন বাম কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক আইচ
মেদিনীপুর: শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

দুপুরের তেজি রোদ মাথায় নিয়ে লাল পতাকা হাতে ধীর লয়ে হেঁটে চলেছিলেন জনা তিরিশেক লোক। সামনে কেশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রামেশ্বর দোলই। পাশে কেশপুর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি শেখ জাহাঙ্গির, সিপিএমের কেশপুর জোনাল সম্পাদক মানিক মিশ্র। পেছনের মাইক বাঁধা গাড়ি থেকে স্লোগান উঠছে— ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার। তিনটি গাড়ি করে কর্মী-সমর্থকরা এসেছেন কেশপুর জোনাল অফিস থেকে। সেখানে রয়েছেন এলাকার কিছু ঘরছাড়া নেতাও।

দু’পাশের দোকানপাট আর গৃহস্থ বাড়ির দরজা, জানালায় মিছিল দেখার ভিড় কম নয়। কিন্তু প্রায় প্রত্যেকেরই মুখ ভাবলেশহীন। দেখে বোঝার উপায় নেই মিছিলের ডাক তাঁদের কানে ঢুকছে কিনা! প্রায় সবার দিকেই করজোড়ে নমস্কার রাখছিলেন রামেশ্বরবাবু। প্রত্যুত্তর মেলেনি কারও তরফে। একটি বাড়ির জানালায় দাঁড়িয়েছিলেন পরিবারের সকলে। সেখান থেকেই এক ভদ্রমহিলা চারদিকে দেখে নিলেন। তারপর আস্তে আস্তে জানালার ভেতর থেকেই মিছিলের উদ্দেশে হাত নাড়লেন। তার পর তাঁর পাশের দাঁড়ানো এক ভদ্রলোকও। বাবা-মাকে দেখে বা কিছু না-বুঝেই কোলের শিশুটিও নাড়ল হাত।

শনিবার আনন্দপুরের খেতুয়া লোকাল কমিটির অফিস খুলে বসলেন এলাকার কিছু সি পি এম কর্মী ও নেতা। যে অফিস ২০১১ সালের ‘পরিবর্তন’-এর পরই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে গত লোকসভা ভোটের আগেও পুলিশের সাহায্যে একবার খোলা হয়েছিল। কিন্তু ভোটের পরই তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। এ দিন জনা ৩৫ নেতা ও কর্মী এসে ঘরদোর পরিষ্কার করলনে। তাঁরা সেখানেই বসবাস শুরু করেছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন রান্নার সরঞ্জাম, সব্জি, চাল ডাল, জল ভর্তি পাত্রও। কারণ দীর্ঘদিন তাঁরা ফিরতে পারেননি নিজের বা়ড়ি।

কেশপুর ব্লকের জয়েন্ট বিডিও সুতনু সামন্ত এবং আনন্দপুর থানার ওসি অমিত মুখোপাধ্যায় বিশাল সিআরপিএফ বাহিনী নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে জনে জনে জিজ্ঞাসা করছেন কোনো সমস্যা আছে কিনা, ভোট দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন কিনা। উত্তর একই, ‘‘না স্যার, কোনো সমস্যা নেই।’’ দু’জনেই তাঁদের ফোন নম্বর দিয়ে এসেছেন। প্রয়োজন হলেই যেন তাঁদের ফোন করা হয়। দূরে সিপিএমের মিছিল অবশ্য নিজের মতোই এগিয়ে চলল। স্থানীয় কেউ যে এসে মিছিলে যোগ দিলেন, এমন কিছু নজরে পড়ল না।

সিপিএমের জোনাল সম্পাদক মানিক সেনগুপ্ত অভিযোগ করলেন, পার্টি অফিস খোলার কথা শুনেই সকাল থেকে এলাকাতে চাপা সন্ত্রাস ছড়িয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। তাঁর দাবি, ‘‘পার্টি অফিসের ঠিক উল্টোদিকে রাতারাতি ত্রিপল খাটিয়ে একটি অফিস তৈরি হয়ে গিয়েছে। শুধু আমাদের অফিসের উপরে নজরদারি করার জন্য। তবে প্রশাসনের কর্তারা নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের কর্মীরাও আর কোনো বাধাতে ভয় পাবেন না।’’

এলাকার সিপিএম কর্মী বনবিহারী পোড়া, মোবারক আলি, বরজাহান খান তপন ভুঁইয়ারা দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া। তাঁরাই জানালেন আপাতত পার্টি অফিসেই থাকবেন, পরের কথা পরে ভাবা যাবে। ততক্ষণে দেখা গেল রাস্তার উল্টোদিকে জনা পঞ্চাশ লোক জড়ো হয়ে গিয়েছেন। নানারকম টিপ্পনীও উড়ে আসছে। হাতে কোনও পতাকা নেই, তবু বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয়। এর পরেও রামেশ্বরবাবু আশাবাদী, ‘‘ঠিকমতো ভোট হলে এখানেও আমরা এগিয়ে।’’

হাওয়া বেশ গরম মনে করে পুলিশ কর্তারা আরো এক গাড়ি পুলিশ আনালেন। দু’পক্ষের মাঝে পুলিশের সংখ্যা বেড়ে গেলো। দুপাশেই দুপুরের খাওয়ার তোড়জোড় চলছে। খেতুয়া বাজারের এক দোকানদার সব দেখেশুনে মন্তব্য করলেন। আগে ছিলো এদের দাপট, এখন হাওয়া ঘুরে গেছে। দাপট এখন অন্যদলের।

বেশ বোঝা যায় কেশপুর আছে কেশপুরেই।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election keshpur cpm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE