মনের-জানলা: ঘরবন্দি প্রৌঢ়া। ঘাটালের আলমগঞ্জে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
বছর তিনেক হল পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে পৃথক জেলা হয়েছে ঝাড়গ্রাম। এ বার করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় দুই জেলা ফের এক!
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের। সেই মতো আপাতত ঝাড়গ্রামের জন্য পৃথক করোনা হাসপাতাল হচ্ছে না। পশ্চিম মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতালেই ঝাড়গ্রামের সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা হবে। মেদিনীপুরে সেই প্রস্তুতি সারা হয়েছে।
অথচ, মেদিনীপুরের এক হাসপাতালকে ঝাড়গ্রামের করোনা হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তরিত করার কাজ শুরু হয়েছিল। এ জন্য মেদিনীপুরে এসেছিলেন ঝাড়গ্রামের বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্য আধিকারিক-কর্মী। নতুন নির্দেশ আসার পরে তাঁরা ফের ঝাড়গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, ‘‘আপাতত ঝাড়গ্রামের জন্য পৃথক পরিকাঠামোয় কোনও করোনা হাসপাতাল থাকছে না। পশ্চিম মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতালেই ঝাড়গ্রামের সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সারা হয়েছে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরে ইতিমধ্যেই দু’টি করোনা হাসপাতাল চালু হয়েছে— লেভেল-১ এবং লেভেল-২। শহরতলির খাসজঙ্গলের আয়ুষ হাসপাতালকে লেভেল-১ করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে। আর শহরতলির মোহনপুরের গ্লোকাল হাসপাতালকে করা হয়েছে লেভেল-২ করোনা হাসপাতাল। দু’টির কোনওটিতেই করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা হবে না, চিকিৎসা হবে করোনা সন্দেহভাজনদের। সন্দেহভাজনদের মধ্যে যাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসবে, তাঁকে বেলেঘাটা আইডি কিংবা অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। কোন হাসপাতালে কোন রোগী থাকবেন, ইতিমধ্যে সেই আলোচনা সারা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের মধ্যে যাঁদের উপসর্গ তুলনায় কম, তাঁদের লেভেল-১ হাসপাতালে আর যাঁদের উপসর্গ তুলনায় বেশি, তাঁদের লেভেল-২ হাসপাতালে রাখা হবে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে প্রথমে মেদিনীপুর শহরতলির ফুলপাহাড়ির সেন্ট জোসেফস্ হাসপাতালকে ঝাড়গ্রামের করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত করা শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন মহলের মত ছিল, এই সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন। কারণ, রাজ্যের অন্য সব জেলার করোনা হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট জেলাতেই হচ্ছে। ব্যতিক্রম হচ্ছিল একমাত্র ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রেই। ক’দিন আগে ভিডিয়ো বৈঠকে ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়েন দুই জেলাশাসক। ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালকে করোনার চিকিৎসাকেন্দ্র করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে বিকল্প খোঁজার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই ঝাড়গ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে মেদিনীপুরে সেন্ট জোসেফস্ হাসপাতালকে বাছা হয়।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রামে কোনও বেসরকারি হাসপাতাল নেই। বিকল্প কোনও বড় পরিকাঠামোও নেই। তাই এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ঠিক ছিল, সেন্ট জোসেফস্ হাসপাতালে আপাতত ১০০টি শয্যার ব্যবস্থা করা হবে। পরিকাঠামো গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। নতুন নির্দেশ আসার পরে অবশ্য কাজ বন্ধ হয়েছে।
সূত্রের খবর, এই সময়ের মধ্যে রোগী নিয়ে দুই জেলার মধ্যে ‘টানাপড়েনও’ চলেছে। গত মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামের দুই সন্দেহভাজনকে মেদিনীপুরে পাঠানো হয়। তাঁদের আয়ুষ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঠিক ছিল, দু’জনকে পরে সেন্ট জোসেফস্ হাসপাতালে পাঠানো হবে। পরে আর পাঠানো হয়নি। দুই সন্দেহভাজন আয়ুষ হাসপাতালেই থেকে যান। ঘটনাচক্রে, এরপরই না কি ঠিক হয়েছে যে, আপাতত ঝাড়গ্রামের জন্য পৃথক করোনা হাসপাতাল চালু হবে না। পশ্চিম মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতালেই ঝাড়গ্রামের করোনা সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা হবে।
তাহলে সেন্ট জোসেফস্ হাসপাতালের ভবিষ্যৎ কী? জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানাচ্ছেন, ওই হাসপাতালটি হাতে (রিজার্ভ) থাকছে। পরে প্রয়োজনে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর— দুই জেলার জন্যই ব্যবহৃত হবে। তিনি মানছেন, এখন ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর দুই জেলাই একসঙ্গে করোনা মোকাবিলার কাজ করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy