গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়িতে ভিড় পরিযায়ীদের। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
খোলা আকাশের নীচে ৪৮ ঘন্টা কাটালেন প্রায় চারশো পরিযায়ী শ্রমিক। কালবৈশাখীর ঝড়-বৃষ্টিতেও মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি।
ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলা প্রশাসন দায় নিতে না চাওয়ায় ওই শ্রমিকদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়ি এলাকায়। তথ্য যাচাই না করে একসঙ্গে এত শ্রমিকের রাজ্যে ঢোকার ক্ষেত্রে আপত্তি তোলে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ। এই টানাপড়েনে শুক্রবার দিনভর ক্ষোভ ছড়ায় পরিযায়ীদের মধ্যে। শেষে রাতে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৮টি সরকারি বাসে শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো হয়। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরে ৮টি সরকারি বাসে ওই শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাসে ওঠার আগে শ্রমিকদের খাবারও দেওয়া হয়েছে।’’
ওড়িশা সীমানা লাগোয়া গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়ি নাকা চেকিং পয়েন্টে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জড়ো হন কয়েকশো পরিযায়ী শ্রমিক। শুক্রবার বিকেলে সংখ্যাটা বেড়ে হয় ৩৮৬। নদিয়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের ওই শ্রমিকেরা ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশায়কাজ করতে গিয়ে লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন। অনেকে হেঁটে, কেউ কেউ আবার সাইকেলে বাড়ির পথ ধরেন। ওই শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের কেউ কেউ ওড়িশায় ১৪ দিন নিভৃতবাসে ছিলেন। তার পরে ওড়িশা প্রশাসন আর দায় নিতে চায়নি। একাংশ শ্রমিকের অভিযোগ, অন্ধ্র ও ছত্তীসগঢ় থেকে তাঁরা কেউ সাইকেলে, কেউ পায়ে হেঁটে ওড়িশায় পৌঁছন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা জানার পরে ময়ূরভঞ্জ জেলা প্রশাসন তাঁদের বাংলায় ফিরে যেতে বলে। ওড়িশায় তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়নি। পরিযায়ীরা ঝাড়গ্রামে ঢুকতে চাইলেও অনুমতি মেলেনি। ফলে ক্ষোভ ছড়ায়। অভুক্ত শ্রমিকদের শুক্রবার বিকেলে ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে ঘুগনি, মুড়ি, পানীয় জলে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় ঝড়বৃষ্টিতে বিপত্তি বাড়ে। খোলা আকাশের নীচে ভিজতে থাকেন শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের আটকে থাকার বিষয়টি সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সরব হন মানবাধিকার কর্মীরা। খবর পৌঁছয় নবান্নে। নবান্নের নির্দেশে শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর তোড়জোড় শুরু হয়। বাসে ওঠার আগে শুকনো খাবার দেওয়া হয়। জেলাশাসকের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর আগাম খবর ওড়িশার তরফে জানানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে কালবৈশাখীর প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও খুব দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ করে শ্রমিকদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।
ওই শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর পরে হাতিবাড়ি সীমানায় ওড়িশার দিক থেকে আরও কয়েকশো পরিযায়ী শ্রমিক এসে জড়ো হয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়ি সীমানা থেকে ওড়িশার দিক থেকে আসা ২৯১ জন পরিয়াযীকে ৫টি সরকারি বাসে মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে পাঠানো হয়েছে। এখনও হাতিবাড়ি সীমানায় অপেক্ষায় রয়েছেন আরও কয়েকশো শ্রমিক। তাঁদেরও ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy