Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

সুস্থতার হারে আলোর রেখা পরিযায়ীরাই

এখন সেই সংখ্যার হিসেবই জানান দিচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে করোনায় সুস্থতার হারে ঢের এগিয়ে পরিযায়ীরা। দেখা যাচ্ছে, করোনা আক্রান্ত পরিযায়ীদের মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে করোনায় সুস্থতার হারে ঢের এগিয়ে পরিযায়ীরা।(নিজস্ব চিত্র)

পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে করোনায় সুস্থতার হারে ঢের এগিয়ে পরিযায়ীরা।(নিজস্ব চিত্র)

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২০ ০২:৫৯
Share: Save:

তাঁদের নিয়েই ভয়-ভীতি-উদ্বেগ। পরিসংখ্যানও বলছে, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভিন্‌ রাজ্য থেকে জেলায় ফিরতেই করোনার সব হিসেব ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। চড়চড়িয়ে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা।

এখন সেই সংখ্যার হিসেবই জানান দিচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে করোনায় সুস্থতার হারে ঢের এগিয়ে পরিযায়ীরা। দেখা যাচ্ছে, করোনা আক্রান্ত পরিযায়ীদের মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আক্রান্ত পরিযায়ীদের মধ্যে মৃত্যুর হারও মাত্র ১.৪ শতাংশ।
এই হিসেবে আশার আলো দেখছে জেলার স্বাস্থ্যভবন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা প্রায় রোজই বাড়ছে। করোনা আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যেও সুস্থতার হার অনেক বেশি।’’ তিনি আরও জুড়ছেন, ‘‘এখন প্রতিদিন জেলায় নতুন করে যত রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন, তার থেকেও বেশি রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন।’’

সামগ্রিক ভাবে এই জেলায় আক্রান্ত হওয়ার হারও কম। হিসেব বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় করোনা পরীক্ষা হয়েছে ২১,৯০৬ জনের। আর করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩২১ জন। অর্থাৎ মাত্র দেড় শতাংশের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘এই তথ্য অবশ্যই স্বস্তির।’’

ভিন্ রাজ্য ফেরত পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল জেলায়। কারণ, পরিযায়ী-যোগেই পশ্চিম মেদিনীপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছিল, এখনও বাড়ছে। জানা যাচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে ৩২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে ২৮৫ জন অর্থাৎ, ৮৮ শতাংশই পরিযায়ী। এঁদের বেশিরভাগই আবার মহারাষ্ট্র ফেরত। বাকি বড় অংশ দিল্লি এবং গুজরাত থেকে ফিরেছেন। তবে সুস্থতাতেও এগিয়ে পরিযায়ীরা। জেলার স্বাস্থ্যভবনের এক সূত্রে খবর, করোনা আক্রান্ত ওই ২৮৫ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে ইতিমধ্যে ২৫৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অর্থাৎ, সুস্থতার হার ৯০.৮৭ শতাংশ। ২২ জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দাসপুরের ২ জন, ঘাটালের ২ জন। জেলায় এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি মৃত ৫ জনের সঙ্গে ভিন্ রাজ্যের যোগ নেই।

জেলা স্বাস্থ্যভবনের এক সূত্রের মতে, জেলায় করোনা সংক্রমণ যেমন নিঃশব্দে ছড়াচ্ছে, তেমনই বহু আক্রান্তের শরীরে অজান্তে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। ওই সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, সম্প্রতি আইসিএমআর-এর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ) এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত কন্টেনমেন্ট জ়োনে একটা বড় অংশের শরীরেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এর ফলেই সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যার থেকে টপকে গিয়েছে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে গেলে ভাইরাস নতুন করে ছড়াতে পারে না। জনগোষ্ঠীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে শুরু করলে গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় নতুন সংক্রমণের হার আরও কমবে।

ওই সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তুলনায় বেশি। জেলায় দেখা যাচ্ছে, মৃতের তুলনায় প্রায় ৬৫গুণ বেশি পরিযায়ী শ্রমিক সুস্থ হয়েছেন মারণ ভাইরাসকে হারিয়ে। উদ্বেগের মাঝে এই পরিসংখ্যানও স্বস্তি দিচ্ছে। আক্রান্ত পরিযায়ীদের অনেকে আবার হাসপাতালে ভর্তির পাঁচ-ছ’দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, ‘‘যত দিন যাবে, সংক্রমণের হার কমবে, সুস্থ মানুষের হার তত বাড়বে।’’ তিনি মানছেন, ‘‘পরিযায়ীদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনায় বেশি। জেলায় দ্রুত সেরে ওঠার হারও আশাব্যঞ্জকই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus West Midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy