জুবিলি বাজারে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
এ বার সবুজ তকমা হারাতে চলেছে ঝাড়গ্রাম। এক দিনেই নতুন তিন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে রবিবার সেই তথ্য দেওয়াও হয়েছে। তারপরেও অবশ্য গোটা বিষয়টি নিয়ে রাত পর্যন্ত চুপ জেলা প্রশাসন ও জেলার স্বাস্থ্য দফতর।
এর আগেও ঝাড়গ্রাম জেলার বাসিন্দা তিন জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সেই সব তথ্য প্রশাসন স্বীকার করেনি। এ বার এক শিশু-সহ আরও তিন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে জঙ্গলমহলের এই জেলায়। শিশুটিকে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় বড়মা করোনা হাসাপতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি দু’জন রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গৃহ নিভৃতবাসে (হোম কোয়রান্টিনে) ছিলেন। তাঁদেরও রাতেই বড়মা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ক’দিন আগেই কলকাতার পার্কস্ট্রিটের এক রেস্তরাঁয় কর্মরত দুই তরুণের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছিল। ঝাড়গ্রামের এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ওই দু’জনও বড়মা হাসপাতালে ভর্তি। বিষয়টি মেনে পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘গত দু'দিনে ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন বড়মায়। তাঁদের প্রত্যেকের চিকিৎসা চলছে।’’ তবে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন এখনও মুখ খুলছে না। জেলাশাসক আয়েষা রানি ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা কেউই ফোন ধরেননি। মেসেজের জবাবও দেননি।
নিয়মমতো সবুজ তালিকায় থাকা কোনও জেলায় করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিললে তা চলে যাবে কমলা তালিকায়। তবে ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রে কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনও সরকারই এখনও তা ঘোষণা করেনি। এ দিকে, গ্রিন জ়োন হিসেবে আজ, সোমবার থেকে জেলায় বাস চলার কথা। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন চুপ থাকায় নিয়ে বিভ্রান্ত জেলাবাসী। ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমের কটাক্ষ, ‘‘জেলাশাসক প্রশাসনের উদ্যোগে শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর বিস্তারিত তথ্য সংবাদ মাধ্যমে জানাতে পারছেন, অথচ যখন একের পর এক আক্রান্ত নিয়ে কিছু বলছেন না। এতে তো বিভ্রান্তি বাড়ছে।’’ সাংসদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরে বার বার ই-মেল করলে তাঁকেও কোনও তথ্য জানানো হচ্ছে না। জেলাশাসক তাঁর ফোনও ধরছেন না।
জেলা প্রশাসন মুখে না মানলেও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। রবিবার দুপুরে যেমন ‘সিল’ করা হয়েছে ঝাড়গ্রাম শহরের জুবিলি বাজার। পরে বাজার জীবাণুমুক্তও করা হয়। এ দিনই মেদিনীপুরের ফুলপাহাড়ির সেন্ট জোসেফ হাসপাতালকে ঝাড়গ্রাম জেলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে জানা গিয়েছে।
জুবিলি বাজার ‘সিল’ হল কেন?
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, বাজারের একটি বড় মুদি দোকানের এক কর্মীর করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ হয়েছে। তিনি লকডাউনে বিনপুরের বাড়িতে ফিরতে পারেননি। বাড়ি ফেরার অনুমতি পাওয়ার জন্য নিজেই গত বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটিতে গিয়ে নমুনা জমা দেন। কলকাতার নিউটাউনের একটি বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে সেই নমুনা যায়। শনিবার রিপোর্ট জেলায় আসে। এ ক’দিন ওই ভালই ভিড় ছিল। ফলে, আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরেরই এক সূত্রে খবর, জামবনির গ্রামের যে শিশুকন্যার শরীরে মারণভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে তার বয়স তিন। লকডাউনের আগে সে মায়ের সঙ্গে খড়্গপুরে নিমপুরায় মামাবাড়িতে গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার শিশুটির বাবা স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ঝাড়গ্রামে ফেরেন। তারপরে তিনজনই ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালটির এআরআই কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করান। নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শনিবার শিশুটির রিপোর্ট পজ়িটিভ জানা যায়। জয়নগর গ্রামের বছর আঠারোর যে তরুণের রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে তাঁর দাদা ওড়িশার সম্বলপুরে শ্রমিকের কাজ করেন। লকডাউনের আগে দাদার কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন ওই তরুণ। দিন সাতেক আগে তাঁরা হেঁটে ঝাড়গ্রাম রওনা দেন। পরে কিছুটা পথ লরিতে ও বাকিটা হেঁটে গত বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে ফেরেন। হাসপাতালে পরীক্ষার পরে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে বাড়িতেই গৃহ নিভৃতবাসে থাকতে বলা হয়েছিল। ওই তরুণের দাদার রিপোর্ট অবশ্য নেগেটিভ এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy