Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

জ্বর! বিনা চিকিৎসায় বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ

করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে রোগী না ফেরানোর কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২০ ০৪:০১
Share: Save:

জ্বরের উপসর্গ ছিল বৃদ্ধের। রাত থেকে তাঁকে নিয়ে পরিজনেরা ঘুরেছেন গ্রামের কোয়াক ডাক্তার থেকে নার্সিংহোমে। ঠাঁই হয়নি কোথাও। সরকারি হাসপাতালেও নাকি চিকিৎসা মেলেনি। শেষে বিনা চিকিৎসায় ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।

শনিবার সকাল থেকে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় খড়্গপুর-২ ব্লকের মেউদিচকের কনিখা গ্রামে। শুক্রবার গভীর রাতে মারা যান ওই গ্রামের বাসিন্দা শঙ্করপ্রসাদ দে (৬২)। পেশায় ধানের গোলার মালিক ছিলেন শঙ্করপ্রসাদ। শুক্রবার রাতেই জ্বরের উপসর্গে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এর পরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও তাঁর চিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ পরিজনেদের। রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলেও ভর্তি নিতে চাননি কর্তৃপক্ষ। বৃদ্ধকে করোনা হাসপাতালে (লেভেল-২) নিয়ে যেতে বলা হয়। অবশ্য করোনা হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে মেদিনীপুর মেডিক্যালের গেটের কাছেই বৃদ্ধ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাতেই দেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিন সকালে সরব হন গ্রামবাসী। মৃতদেহ ভ্যানে ফেলে রেখে চলে বিক্ষোভ। পুলিশ এলে বিক্ষোভ আরও জোরাল হয়। পরে পুলিশি আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গ্রামেই বৃদ্ধের সৎকারের ব্যবস্থা হয়।

করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে রোগী না ফেরানোর কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতেও যে পরিস্থিতি বদলায়নি শঙ্করপ্রসাদের পরিজনেদের অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “সরকারিভাবে বলা হয়েছে কোনও নার্সিংহোম বা হাসপাতাল রোগী ফেরাতে পারবে না। যদি এমন অভিযোগ আমার কাছে আসে আমি কড়া পদক্ষেপ করব।”

পরিজনেদের দাবি, শুক্রবার রাতে বাজারে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন শঙ্করপ্রসাদ। তাঁর জ্বর ছিল। পরিজনেরা স্থানীয় কোয়াক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তবে করোনা সন্দেহে রোগী দেখতে রাজি হননি কোয়াক। পরে বসন্তপুরের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় বৃদ্ধকে। অভিযোগ, সেখানে দোতলা থেকে উঁকি মেরে কর্তৃপক্ষ রোগীকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অ্যাম্বুল্যান্সও দিতে চাননি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। শেষে গাড়ি ভাড়া করে বৃদ্ধকে মেদিনীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃদ্ধের ভাইপো গৌতম দে বলেন, “জ্বরের কথা শুনেই কোয়াক চিকিৎসক, নার্সিংহোম থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কাকাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। শেষ সময়ে মেদিনীপুর মেডিক্যালে অনেক অনুরোধ করার পরে এক চিকিৎসক কোনওক্রমে স্টেথোস্কোপ ঠেকিয়ে বলেছেন কাকার মৃত্যু হয়েছে। এ কোন রাজ্যে আমরা বাস করছি!” যদিও বসন্তপুরের ওই নার্সিংহোমের মালিক কালী জানার ছেলে সূর্য জানা বলেন, “আমাদের নার্সিংহোমে রোগীকে আনা হয়নি। ফোন করে অ্যাম্বুল্যান্স চাইছিল। কিন্তু এখন চালক পাওয়া কঠিন। তাই অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া যায়নি।” আর মেদিনীপুর মেডিক্যালের বক্তব্য, উপসর্গ দেখেই ওই রোগীকে করোনা হাসপাতালে (লেভেল ২) ‘রেফার’ করা হয়েছিল।

এ দিন বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে ময়নাতদন্তের কথা বললে উত্তেজনা বাড়ে। শেষে অভিযোগ হলে তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মৃতের ছেলে শুভ দে বলেন, “বাবার মৃত্যু আমরা মানতে পারছি না। নার্সিংহোম, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কোথাও বাবার চিকিৎসা হল না। একটু সামলে উঠেই আমি অভিযোগ করব।” মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা সমীরকুমার দে। তিনি বলেন, “এ নিয়ে যতদূর যেতে হয় যাব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy