প্রতীকী ছবি।
দিন কয়েক আগের ঘটনা। দুই হাসপাতাল ঘুরে মেদিনীপুরের লেভেল-২ করোনা হাসপাতালে ভর্তি হন ঘাটালের বাসিন্দা, বছর বত্রিশের তাপস পড়িয়া। ওই যুবকের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। প্রথমে পরিজনেরা তাঁকে নিয়ে যান ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। মেডিক্যাল থেকে আবার তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লেভেল- ২ করোনা হাসপাতালে। দুই হাসপাতাল ঘুরে যে দিন বিকেলে এখানে ভর্তি হন তাপস, তার পরদিনই দুপুরে মৃত্যু হয় তাঁর।
তাপসের ভাই মানস পড়িয়া অভিযোগ করেছিলেন, চিকিৎসার গাফিলতিতেই তাঁর দাদার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাননি। তবে মেদিনীপুরের এই করোনা হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, হাসপাতালে পরপর কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে এমন একাধিকজনের, যাঁদের বয়স তিরিশের আশেপাশে। জানা যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে মেদিনীপুরের এই হাসপাতালেই মৃত্যুর হার বেশি, প্রায় ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ, ১০০ জন রোগী ভর্তি হলে সুস্থ হচ্ছেন ৮৭ জন। মারা যাচ্ছেন ১৩ জন। অথচ, অন্য হাসপাতালে মৃত্যুর হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ।
করোনা মোকাবিলায় মেদিনীপুরে দু’টি হাসপাতাল চালু হয়েছে। আবাসের কাছে লেভেল- ১, আর মোহনপুরের কাছে লেভেল-২। হাঁচি, কাশি প্রভৃতি উপসর্গ রয়েছে, এমন রোগীদের লেভেল-১ হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়। আর জ্বর, শ্বাসকষ্টের মতো (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস বা সারি) উপসর্গ রয়েছে, এমন রোগীদের লেভেল-২ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা যাচ্ছে, লেভেল-১ হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত একজনেরও মৃত্যু হয়নি। তবে লেভেল- ২ হাসপাতালে ইতিমধ্যে ১১ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সূত্রের খবর, ১৩ মে পর্যন্ত দুই করোনা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৫২ জন। এর মধ্যে লেভেল- ১ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬৩ জন। কারও মৃত্যু হয়নি। তবে চিকিৎসাধীন একাধিকজনের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। তাঁদের পাঁশকুড়ার করোনা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য দিকে, লেভেল-২ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৯ জন। চিকিৎসাধীন কারওরই করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসেনি। মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। ওই ১১ জনের প্রথমজন মারা গিয়েছেন ১৪ এপ্রিল, শেষ মৃত্যু ৮ মে।
কারওরই করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ নয়। তবু মৃত্যু। এখানেই এই হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খাতায়কলমে হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৫০টি। ভেন্টিলেটর ৫টি। এখানে ১১ জন চিকিৎসক কথার কথা। ১৭ জন নার্স (সিস্টার ইনচার্জ ৪, স্টাফ নার্স ১৩) থাকার কথা। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স না কি নেই। অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ৩.২ শতাংশ। গোটা বিশ্বে ৬.৬ শতাংশ। আর মেদিনীপুরের এই হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার প্রায় ১৩ শতাংশ। যা অনেককে বিস্মিত করছে। অভিযোগ, এক সময়ে জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে কোনও রোগী মেডিক্যালে এলেই তাঁকে এখানে ‘রেফার’ করা হচ্ছিল। এখন অবশ্য সেই প্রবণতা কমেছে।
জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘মেদিনীপুরের ওই হাসপাতালে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’’ আর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার বক্তব্য, ‘‘অনেক সময়ে চেষ্টা করেও খুব সঙ্কটজনক রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয় না।’’ লেভেল-২ করোনা হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যালই। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, ‘‘চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ ঠিক নয়। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে সবদিক দেখে এখন রোগীকে ওখান থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালেও পাঠানো হচ্ছে।’’ মেডিক্যালের এক সূত্র জানাচ্ছে, ১৪ মে লেভেল-২ করোনা হাসপাতালে ৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় ওই দিন পরে ৩ জনকেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে ‘রেফার’ করা হয়েছিল। ফলে, দিনের শেষে ওই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে হয়েছিল এক। ওই হাসপাতালের এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘পরিস্থিতি দেখে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত দেড় সপ্তাহে তো এখানে কারও মৃত্যুও হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy