—প্রতীকী চিত্র।
খেজুরির বিজেপি নেতা রবীন মান্নার গ্রেফতারি নিয়ে সরগরম হচ্ছে জেলা রাজনীতি। পরোয়ানা ছাড়া তাঁকে গ্রেফতার করার অভিযোগে শনিবার গভীর রাতেই থানার সামনে ধর্নায় বসেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার ধৃতকে আদালতে তোলার ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ করছে গেরুয়া শিবির।
শনিবার বিকেলে খেজুরির বাঁশগোড়া বাজারে বিজেপির কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে দলের মণ্ডল সম্পাদক রবীনকে গ্রেফতার করে খেজুরি থানার পুলিশ। অভিযোগ, সাদা পোশাকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সভা শেষে দলের নেতার গ্রেফতারির খবর শুনে খেজুরি থানা এবং হেঁড়িয়া তদন্ত কেন্দ্রে যান স্থানীয় বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিক এবং বিজেপির একাধিক নেতা। যদিও দুটি থানাতেই ধৃতের কোনও সন্ধান জানা যায়নি। এরপর জানা যায়, রবীনকে মারিশদা থানায় রাখা হয়েছে। শনিবার রাত সওয়া ১০টা নাগাদ মারিশদা থানায় যান শুভেন্দু। তিনি সরাসরি থানার ভেতরে ঢুকে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকের কাছে ধৃত দলীয় কর্মীর অ্যারেস্ট মেমো দেখতে চান।
ধৃতের পরিবারকে কেন দীর্ঘক্ষণ বাদেও গ্রেফতারের বিষয় কিছু জানানো হয়নি, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেন বিরোধী দলনেতা। তিনি প্রায় আধঘণ্টা ধরে থানার বাইরে দলের দুই বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে অবস্থান করেন। থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রীতিমতো পুলিশ আধিকারিকদের হুমকির সুরের বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘আমার দলের নেতাকে অপহরণ করা হয়েছে। তার স্ত্রীকে দিয়ে মামলা করাব। মারিশদা থানা ডিউটি অফিসার এবং ওসি, সংশ্লিষ্ট থানার ওসি আর তদন্তকারী আধিকারিককে পার্টি করব। প্রয়োজনে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করব।’’
এ দিন জানা গিয়েছে, কী কারণ গ্রেফতার করা হয়েছে রবীনকে। গত ২৩ নভেম্বর তৃণমূলের প্রচার গাড়ি আটকে শাসকদলের নেতা দেবাশিস পণ্ডা মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। আইনজীবী সূত্রের খবর, দেবাশিসকে খুনের চেষ্টার মামলায় রবীনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও এ দিন বিজেপির দাবি, নথিপত্র ছাড়াই রবীনকে মারিশদা থানা থেকে নিয়ে যাওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর কাঁথি আদালতে তোলা হয়। পরে তাঁকে কাঁথি মহকুমার বিশেষ আদালতেও তোলা হয়। বিজেপির দাবি, মণ্ডল সম্পাদককে আদালতে তোলার ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হয়নি।
আদালতে রবীনের জামিনের জন্য এ দিন আবেদন জানান তাঁর আইনজীবীরা। পাল্টা ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন তদন্তকারীরা। উভয় পক্ষের শুনানির শেষে ধৃত বিজেপি নেতাকে আগামী ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন কাঁথি মহকুমা আদালতের দ্বিতীয় কোর্টের ফার্স্ট ক্লাস জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অতীন মল্লিক। রবীনের আইনজীবী অনির্বাণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আদালত নিয়ে ছেলেখেলা করা হয়েছে। যে কোনও আসামীকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে একই সঙ্গে এফআইআর এবং আরও কয়েকটি নথি একই সঙ্গে জমা দিতে হয়। তবেই ধৃতকে গ্রহণ করতে পারেন আদালত কর্তৃপক্ষ। এদিন এক থানা থেকে এফআইআর, আরেক থানা থেকে অন্য কাগজ এবং মারিশদা থেকে ধৃতকে নিয়ে এসেছে পুলিশ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আদালতের বাইরেই রাখতে হয়েছে মক্কেলকে।’’
শনিবার রাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেন, আজ, সোমবার খেজুরি জুড়ে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল চলবে। তবে জাতীয় সড়ক এবং জরুরি পরিষেবা এর আওতার বাইরে থাকবে। আগামী ৩০ নভেম্বর খেজুরি থানায় বিক্ষোভ এবং ২ ডিসেম্বর খেজুরিতে বড় মাপের প্রতিবাদ সভার শুভেন্দু ঘোষণা করেন।
একই ‘হুমকি’ রবিবার ফের শোনা গিয়েছে শুভেন্দুর গলায়। এ দিন তিনি মেচেদায় ছিলেন। জেলার পুলিশ সুপারকে কার্যত হুমকি দিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘খেজুরিতে সোমবার সকাল ৬ টা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বাত্মক বন্ধ থাকবে। পার্শ্ববর্তী এলাকা ভাঙ্গাবেড়া, তেখালি সর্বত্র বিজেপির কর্মীরা ঝান্ডার সঙ্গে ডান্ডা লাগিয়ে মাঠে থাকবেন। এই ভাইপোর পাপোস যে পুলিশ সুপার, তাঁকে কালকে ছোট্ট একটা সিগন্যাল দেব।’’ উল্লেখ্য, এর আগেও জেলার পূর্বতন পুলিশ সুপারকে শাসকদলের ‘অনুগত’ দাবি করে তাঁকে কার্যত ‘হুমকি’ দিতে শোনা গিয়েছিল শুভেন্দুকে।
বিজেপির ডাকা বন্ধ কর্মসূচিকে ব্যর্থ করতে ময়দানে নেমেছে শাসক দল। খেজুরির দুটি ব্লকে যাতে দোকানপাট বাজার সবকিছুই খোলা থাকে তার জন্য প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। এ ব্যাপারে খেজুরি-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শ্যামল মিশ্র বলেন, ‘‘লিফলেট এবং সমাজ মাধ্যমে বন্ধের বিরোধিতা করে তৃণমূল প্রচার চালাচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় নেতাদেরকে বলা হয়েছে যাতে বাজার এবং দোকানপাট খোলা থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy