—ফাইল চিত্র
বছর পাঁচেক আগেই তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু বাজেটে এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। সমীক্ষা করে পরিকল্পনা তৈরির কাজও হয়েছিল। অবশেষে এ বারের বাজেটে রাজ্যের ঝুলিতে এল দু’টি ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর’। আর এই দু’টির সঙ্গেই জড়িয়ে গেল রেলশহর খড়্গপুর।
সোমবার লোকসভায় বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন খড়্গপুর-বিজয়ওয়াড়া এবং ভুসাওয়াল-খড়্গপুর-ডানকুনি ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরে’র কথা ঘোষণা করেন। এর জেরে পণ্য পরিবহণে গতি আসবে বলে দাবি কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রকের। ২০১৬ সালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সুরেশ প্রভু বাজেটে এই দুই ফ্রেট করিডরের ঘোষণা করেছিলেন। ফলে, একই বিষয়কে নতুন মোড়কে দেখানোর অভিযোগ করছে তৃণমূল।
যদিও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “২০১৬ সালের পর থেকে দুই ফ্রেট করিডরের জন্য সমীক্ষা করে পরিকল্পনা জমা পড়েছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বার প্রস্তাবিত দুই ফ্রেট করিডরের নির্মাণকাজ চালুর কথা বাজেটে ঘোষণা হল।” এ প্রসঙ্গে খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার আদিত্য চৌধুরী বলছেন, “আমরা বাজেট শুনে দু’টি ফ্রেট করিডরের কথা জানতে পেরেছি। কিন্তু বিস্তারিত রিপোর্ট এখনও হাতে পাইনি।”
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুর থেকে বিজয়ওয়াড়া পর্যন্ত ১হাজার ১১৫কিলোমিটার দূরত্বের এই ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর’ রেলের পরিভাষায় ‘ইস্ট-কোস্ট করিডর’। খড়্গপুরের হিজলি স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু হবে এই করিডর। তবে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ নিয়ে তিনটি রাজ্যের ৪টি রেল ডিভিশনের উপর দিয়ে করিডর তৈরি হবে। আপাতত এই করিডর বাবদ ৪০হাজার ৩৪৪কোটি টাকা ব্যায় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। আর ভুসাওয়াল-খড়্গপুর-ডানকুনি রুটের ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর’টি রেলের পক্ষ থেকে ‘ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর’ নাম দেওয়া হয়েছে। খড়্গপুরের হিজলির কাছে ইস্ট-কোস্ট করিডরের সঙ্গেও সংযুক্ত হবে এই ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর। শেষ হবে ডানকুনির কাছে কামারকুণ্ডু স্টেশনে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ় ও মহারাষ্ট্র নিয়ে ৫টি রাজ্যের ৪টি রেল জোনের উপর দিয়ে তৈরি হবে এই করিডর। এক্ষেত্রে আপাতত ১হাজার ৮৬৮কিলোমিটার এই করিডরের জন্য ৮৬হাজার ৮০৫কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার আদিত্য চৌধুরীর কথায়, “এই ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর হলে দ্রুত বেশি সংখ্যক পণ্য পরিবহণ সম্ভব হওয়ার পাশাপাশি আয় আরও বাড়বে বলেই আশা করছি।”
বাজেটের এই ঘোষণায় উৎসাহী ব্যবসায়ী মহল। খড়্গপুর ডিভিশনে রেলের সাধারণ লাইনেই মালগাড়ি চলাচল করে। ফলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মালগাড়িকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরে সেই সমস্যা মিটবে। খড়্গপুর ট্রাক ওনার্স অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক উজ্জ্বল দাস বলেন, “এখন মালগাড়ির নির্দিষ্ট সময়সূচি না থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। এতে লোকসান হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট রুটে মালগাড়ি চললে নির্ধারিত সময়েই ট্রাক পাঠানো যাবে। এতে স্থানীয় পরিবহণ লাভজনক হবে। শ্রমিকদের কাজেরও সুযোগ বাড়বে।”
অবশ্য মূলত যাঁদের কথা ভেবে এই ফ্রেট করিডরের পরিকল্পনা করছে রেল, সেই শিল্প সংস্থাগুলি সংশয় রয়েছে। খড়্গপুরের রশ্মি মেটালিক্স গোষ্ঠীর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অভিজিৎ রায় বলেন, “নতুন কিছু হলে নিশ্চয়ই সুফল পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের কাঁচামাল মূলত পারাদ্বীপ ও হলদিয়া বন্দর থেকে আসে। সেক্ষেত্রে এই দুই ফ্রেট করিডরে কতটা সুফল পাব তা এখনই বুঝতে পারছি না।” টাটা মেটালিক্সের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজেশ মিশ্রও বলছেন, “আমাদের কয়লা আসে ওড়িশার ধামরা, পারাদ্বীপ ও হলদিয়া থেকে। লোহাচুর আসে ওড়িশার জোডা, নয়ামুন্ডি থেকে আসে। আর উৎপাদিত পন্য সড়কপথে পরিবহণ হয়। তাই এই করিডরে আমরা খুব একটা সুফল পাব বলে মনে হচ্ছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy