Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

এনআরসি রাজনীতির মিল-অমিল 

মঞ্চ পৃথক হলেও দু’জনের কথায় ঘুরে ফিরে এল সেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) কথা। যদিও একজন দিলেন অভয় বার্তা। আর আরেকজনের কথায় ধরা পড়ল আশঙ্কা।

বক্তা: সভায় সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: কিংশুক আইচ

বক্তা: সভায় সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: কিংশুক আইচ

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২০
Share: Save:

প্রায় একই সময় বলা শুরু করলেন দু’জন। বীরসিংহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুরে সূর্যকান্ত মিশ্র।

মঞ্চ পৃথক হলেও দু’জনের কথায় ঘুরে ফিরে এল সেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) কথা। যদিও একজন দিলেন অভয় বার্তা। আর আরেকজনের কথায় ধরা পড়ল আশঙ্কা।

মঙ্গলবার বীরসিংহে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উদযাপনের সূচনা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি বীরসিংহের মাটিতে এসে বলে যাচ্ছি, বাংলায় কোনওমতে এনআরসি হতে দেব না। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ প্রায় পিঠোপিঠি সময়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত কিন্তু বললেন, ‘‘ওরা (বিজেপি) বলছে, এখানে না কি দু’কোটি মানুষের নাম বাদ দেবে। বাংলার উপর সব চাইতে বেশি আক্রমণ। তার কারণ বাংলা হচ্ছে বামপন্থীদের ঘাঁটি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আগে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করবে, তারপর এনআরসি করবে, এটাই হচ্ছে ওদের (বিজেপির) পরিকল্পনা।’’

শুধু আশঙ্কা প্রকাশ করেই থেমে যাননি সূর্যকান্ত। মেদিনীপুর শহরের পঞ্চুরচকে ভিড়ে ঠাসা দলীয় সমাবেশে কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, এ সংক্রান্ত কাজে জনগণের পাশে থাকার। বিশেষ করে ভোটার তথ্য যাচাইয়ের কাজে মানুষকে সহযোগিতা করতে বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এখানে বেশ কিছু স্মার্টফোন দেখতে পাচ্ছি। আমরা যাঁরা লালঝান্ডা ধরি, যাঁদের স্মার্টফোন আছে, এখন তাঁদের প্রথম কাজ হচ্ছে বাড়ি বাড়ি যাওয়া। যাঁদের স্মার্টফোন নেই, যাঁরা স্মার্টফোন চালাতে জানেন না, তাঁদের বাড়িতে যাওয়া। বাড়িতে গিয়ে ওই তথ্য যাচাই করিয়ে দেওয়া। আরএসএস যেটা চেষ্টা করছে, ভোটার তালিকায়, একে বাদ দাও, ওকে রাখো, এ সব যাতে করতে না- পারে সেটা দেখা।’’ রাজনৈতিক মহলের মতে, এনআরসি বিরোধিতার মাধ্যমে আসলে ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে আন্দোলনের পথে নামাতে চেয়ে‌ছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক।

মুখ্যমন্ত্রীর মুখে প্রায় শোনা যায় বাংলা ভাগের কথা। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি তেমন কিছু না বললেও বিভাজনের রাজনীতির সমালোচনা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। বিভাজনের রাজনীতির কথা বলেছেন সূর্যকান্তও। তবে তার সুরটা কিছুটা আলাদা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের কথায়, ‘‘সরকার (কেন্দ্র) যদি কালকে, কয়েক ঘন্টার মধ্যে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাশ করিয়ে নেয়, যে পশ্চিমবাংলায় দার্জিলিং থাকবে না, এটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে, মেনে নেবেন মানুষ? পশ্চিমবাংলায় আরএসএসের দু’টো রাজ্য কমিটি রয়েছে। উত্তরবঙ্গের জন্য একটা, দক্ষিণবঙ্গের জন্য একটা। ওরা যদি সুযোগ পায়, পশ্চিমবাংলাকে ভাগ করবে। উত্তরবাংলা আর দক্ষিণবাংলা করে ভাগ করবে।’’

এনআরসি বিরোধিতার অবস্থানে মিল থাকলেও সূর্যকান্ত মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বলিহারি! উনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন। আর বেরিয়ে এসে বললেন, প্রধানমন্ত্রী এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনা করেননি। তাহলে আপনি গেলেন কেন?’’ এক ধাপ এগিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, মানুষ আতঙ্কিত। আরে, আতঙ্কিত তো আপনিই করছেন। দিল্লিতে গিয়ে আপনার যেটা বলার কথা, আপনি সেটা বলছেন না। আপনার যেটা করার কথা, আপনি সময় মতো করছেন না।’’ ঘটনাচক্রে এ দিনই উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছেন, এনআরসি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীই আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।

এনআরসিতেই মিল। অমিলও।

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Assam TMC BJP CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy