Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

গাড়িতে অবরুদ্ধ পথ, দাবি পার্কিং জোনের

গাড়ি রাখার নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। ছোট গলি রাস্তার পাশেই সার দিয়ে রাখা মোটর সাইকেল, সাইকেল, রিকশা। এই অবস্থায় কেউ যদি মেদিনীপুরের বড় বাজারে মোটর বাইক নিয়ে ঢোকে, তার প্রাণান্তকর দশা হবে। কারণ, ১২ ফুট রাস্তার ৮ ফুটই চলে গিয়েছে সাইকেল, রিকশা বা মোটর সাইকেলের দখলে। পথ চলার জায়গাই নেই। সামান্য ভিড় হলেই যানজট, চিৎকার চেঁচামেচি।

রাস্তার উপরেই পার্কিং করা মোটরবাইক। এমন যানজটই রোজনামচা মেদিনীপুরের রাজাবাজারে।

রাস্তার উপরেই পার্কিং করা মোটরবাইক। এমন যানজটই রোজনামচা মেদিনীপুরের রাজাবাজারে।

সুমন ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৬
Share: Save:

গাড়ি রাখার নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। ছোট গলি রাস্তার পাশেই সার দিয়ে রাখা মোটর সাইকেল, সাইকেল, রিকশা। এই অবস্থায় কেউ যদি মেদিনীপুরের বড় বাজারে মোটর বাইক নিয়ে ঢোকে, তার প্রাণান্তকর দশা হবে। কারণ, ১২ ফুট রাস্তার ৮ ফুটই চলে গিয়েছে সাইকেল, রিকশা বা মোটর সাইকেলের দখলে। পথ চলার জায়গাই নেই। সামান্য ভিড় হলেই যানজট, চিৎকার চেঁচামেচি।

বড়বাজার না হয় গলির ভেতরে। কিন্তু শহরের বড় রাস্তাগুলি! মুক্তি নেই সেখানেও। সর্বত্র বেআইনি পার্কিংয়ের জেরে শহরবাসীর নাভিশ্বাস দশা। এখন প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই মোটর সাইকেল রয়েছে। অনেক বাড়িতে একাধিক মোটর বাইকও রয়েছে। চার চাকার গাড়িও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সাইকেল, মোটর সাইকেল, রিকশা, চার চাকায় চেপে যাঁরা ব্যাঙ্কে বা বাজারে আসছেন তাঁরা ব্যাঙ্ক বা দোকানের একেবারে সামনে রাখছেন গাড়ি। কেউই দু-পা হাঁটতে রাজি নন। যাঁরা বিভিন্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন, তাঁরাও রাস্তা আটকেই রাখেন গাড়ি। আর তার জেরে বেদখল হচ্ছে রাস্তা। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

মেদিনীপুর শহর জুড়ে বেআইনি পার্কিংয়ের এই ছবি নিত্যদিনের। যার জেরেরে যানজট হয়। প্রশাসনিক কর্তা থেকে রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রী, পুরসভা, মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ সকলেই এ কথা জানেন। নিজেরা দুর্ভোগে পড়লে বিরক্তও হন। তবু পার্কিং জোন তৈরির কথা কেউ ভাবেননি। না পুরসভা, না মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ কারও এ ব্যাপারে পরিকল্পনা নেই। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “পার্কিং জোনের জন্য জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবু কী করা যায় ভাবব।” মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ)-র চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতিও মানছেন, “পার্কিং জোন না হলে দুর্ঘটনা বাড়বে। তাই আমরাও পার্কিং জোন তৈরির জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেছি। কিন্তু জায়গা মিলছে না বলে সমস্যা হচ্ছে।” শহরবাসীর একাংশ যদিও বলছেন, পার্কিং জোন তৈরির জায়গা পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রাস্তার দু’ধারে বহু জায়গা রয়েছে যেখানে সহজেই পার্কিং জোন করা যায়।

নিমতলাচকে সংকীর্ণ পথে চলাই দায়।

তবে এটা ঠিক, আর দেরি করলে শহরে জায়গা পাওয়া সত্যি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, রাস্তার দু’ধারে সামান্য জায়গা পেলেই কেউ বসিয়ে দিচ্ছে গুমটি, কেউ বা বানিয়ে ফেলছে স্থায়ী দোকান। যেমন পঞ্চুরচক ও গোলকুয়াচক। শহরের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার মাঝে রয়েছে মেদিনীপুর কলেজ। অন্য দিকে স্কুল ও কলেজের মাঠ। দু’দিকে অনেকটাই জায়গা, যেখানে সহজে পার্কিং জোন করা যায় বলে একাংশ শহরবাসীর অভিমত। ইতিমধ্যেই ওই এলাকাটিও হকারদের দখলে যেতে শুরু করেছে। যে সামান্য অংশ ফাঁকা রয়েছে, কিছুদিনের মধ্যে তা-ও হয়তো ভরে যাবে। এলআইসি চক থেকে গাঁধী মূর্তি যাওয়ার রাস্তার এক দিক হকারদের দখলে চলে গেলেও অন্য দিকের কিছুটা অংশ এখনও ফাঁকা। কেরানিতলা থেকে জজকোর্টগামী রাস্তার দু’দিক কিছু দিন আগেও ফাঁকাই ছিল। এখন দ্রুত হকারদের দখলে চলে চাচ্ছে। ওই এলাকায় আবার একাধিক বড় বড় বাজার তৈরি হয়েছে। ফলে নিত্য যানজট লেগে থাকে। তার মধ্যে দিয়েই চলাচল করে বাস, লরি, চার চাকার ছোট গাড়ি, সাইকেল, মোটর সাইকেল, রিকশা। পথ চলতে নাভিশ্বাস ওঠে শহরবাসীর।

সমস্যা সমাধানে মেদিনীপুরে পার্কিং জোন তৈরির দাবি জোরাল হচ্ছে। পার্কিং জোন হলে শুধু যানজট আটকানো যাবে তা-ই নয়, এড়ানো যাবে দুর্ঘটনা। শহরে গতি আসবে। পুরসভার আয়ও বাড়বে। তৈরি হবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। কারণ, গাড়ি রাখার বিনিময়ে পুরসভা ভাড়া নিতে পারবে। আর সেই টাকা আদায়ের জন্য লোক নিয়োগ করা যাবে। তবে সব থেকে বড় কথা হল, গতিরুদ্ধ শহর ফিরে পাবে ছন্দ। পার্কিং জোন হয়ে তৈরি হলে জায়গাটা বেআইনি দখলদারের হাত থেকেও বাঁচবে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “অবিলম্বে পার্কিং জোন নিয়ে ভাবতেই হবে। নতুবা ভবিষ্যতে পথ চলা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।” শম্ভুনাথবাবুর আরও পরামর্শ, “মানুষকেও সচেতন হতে হবে। বাড়ি থেকে দু’মিনিটের হাঁটা পথেও অনেকে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তার ধারে গাড়ি রেখে যানজট তৈরি করছেন। এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার।”

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE