বড়পোলের কাছে চলে অবরোধ। নিজস্ব চিত্র।
নগদ প্রায় ৭১ হাজার টাকা-সহ এক বিজেপি প্রার্থীকে আটক করল পুলিশ। শুক্রবার রাতে খড়ারের ঘটনা।
খড়ার পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বিজেপি প্রার্থীর নাম ফাল্গুনী মিশ্র। আজ, রবিবার ভোট। তার একদিন আগে এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে তেতে ওঠে খড়ার। ওই প্রার্থীর শাস্তির দাবিতে খড়ারের বড় পোলের কাছে পথ অবরোধ করা হয়। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘খড়ারে এক প্রার্থীর কাছ থেকে ৭০ হাজার ৮০০ টাকা উদ্ধার হয়েছে।”
জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ খড়ার পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী ফাল্গুনী মিশ্র স্থানীয় রুইদাস পল্লির কাছে ঘোরাফেরা করছিলেন। অত রাতে তাঁকে ঘোরাফেরা করতে দেখে কয়েকজনের সন্দেহ হয়। সেই সময়ে খড়ার ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীরা এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে রুইদাস পল্লিতে যায় পুলিশ। বিজেপি প্রার্থীর প্যান্টের পকেট থেকে নগদ টাকা উদ্ধার হয়। তিনি কেন ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন তা বলতে পারেননি। তাঁকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার রাতেই জামিনে ছাড়া পান তিনি। উদ্ধার হওয়া টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির দাবি, “আমরা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম। এবার হাতেনাতে ধরাও পড়ল। বিজেপির সঙ্গে মানুষ নেই। প্রচারেই তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এবার দিল্লির চুরি করার টাকা দিয়ে ভোট কিনতে নেমেছে তারা।”
ভোট ঘোষণার পর থেকেই এবার নজরে রয়েছে খড়ার। ওই ৮ নম্বর ওয়ার্ডেই দলীয় কর্মীদের একাংশের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন খড়ার পুরসভার প্রাক্তন প্রশাসক তথা ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অরূপ রায়। খড়ার পুর এলাকায় দলের একাংশ বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেখানকার একাধিক তৃণমূল প্রার্থী। এই পুর এলাকায় প্রচারে এসে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ নিরাপত্তার জন্য কাঁচা বাঁশ কেটে রাখতে বলেছিলেন। এবার সেখানে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ উঠল। ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক তথা দলের তরফে মহকুমার পাঁচ পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত শীতল কপাটের অবশ্য দাবি, “অল্প টাকা ছিল। ওই টাকা ভোটের দিন বুথে বুথে খরচের জন্য দল থেকে দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল ও পুলিশ ইচ্ছে করে আমাদের প্রার্থীকে হেনস্থা করছে।” তিনি জুড়েছেন, ‘‘ঘাটাল মহকুমার পাঁচ পুরসভাতেই মানুষ বিজেপির সঙ্গেই আছেন। সেটা বুঝে বহিরাগতদের এনে ভয় দেখাচ্ছে শাসক দল।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরাও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের আবহ তৈরির অভিযোগ করেছেন। সব অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত বলেন, “ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভা জয়ের বিষয়েই আমরা নিশ্চিত।’’
শুক্রবার রাত থেকে খড়্গপুর শহরের বিভিন্ন এলাকাতেও নানা অভিযোগ শোনা গিয়েছে। ওই রাতে শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী সিপিআই প্রার্থী প্রভাতকুমার সিংহ ও তাঁর সঙ্গীর বাইকের বাক্সে টাকা রয়েছে বলে দাবি করে তৃণমূল। তারপরে পুলিশ তাঁদের হয়রানি করে বলে অভিযোগ। যদিও কিছু পাওয়া যায়নি। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডেও আর প্রতাপ নামে এক বিজেপির বুথ সভাপতির গ্রেফতারি ঘিরেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ তাঁদের অভিযোগের গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে দাবি করেছেন ওই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অনুশ্রী বেহেরা। যদিও বিষয়টি নিয়ে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের কাছে পুলিশ সম্পর্কে কোনও অভিযোগ আসেনি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থী প্রভাতকুমার ও তাঁর সঙ্গী ‘আমরা বামপন্থী’ সংগঠনের আহ্বায়ক অনিল দাস বাইক করে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে কয়েকজন তৃণমূল কর্মী জিনতলার কাছে তাঁদের ঘেরাও করে বলে অভিযোগ। প্রভাতকুমারের দাবি, ‘‘আমরা টাকা নিয়ে যাচ্ছি দাবি করে তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্ট উজ্বল মল্লিক-সহ ২০ জন তৃণমূল কর্মী আমাদের আটকে রাখে। ওঁরাই পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ আমাদের বাইকের বাক্স খুলে কাপড়ের টুকরো ছাড়া কিছুই পায়নি। অথচ তারপরেও তৃণমূলের জমায়েত না সরিয়ে আমাদের এলাকা ছাড়তে বলে পুলিশ।’’
তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্ট উজ্জ্বলের অবশ্য দাবি, ‘‘আমি বা আমাদের কর্মীরা কেউ বাম প্রার্থীকে আটক করিনি। পুলিশ কিছু সন্দেহ করে আটক করেছিল শুনেছি।”
খড়্গপুরের সিপিআই নেতা বিপ্লব ভট্টের অভিযোগ, ‘‘মানুষ এ বার বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই তৃণমূলকে রক্ষায় মাঠে নেমেছে প্রশাসন। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা পেলে মোকাবিলা করা হবে।” খড়্গপুর শহরের কংগ্রেস নেতা দেবাশিস ঘোষ বলেন, “এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কিন্তু পুলিশ যেভাবে শাসকদলকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে তাতে অশান্তির আশঙ্কা করছি।’’ খড়্গপুরের বিজেপি নেতা তথা সাংসদ প্রতিনিধি অভিষেক আগরওয়ালের অভিযোগ, ‘‘প্রশাসন অযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। মানুষ নিরাপদে ভোট দিতে যেতে পারবে কি না সন্দেহ।’’ ভোটের আগের দিন খড়্গপুর শহরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা দাবি করেন, ‘‘খড়্গপুরের ৩৫টি ওয়ার্ডের সব কটি জিতব বলেই মনে করছি। বিরোধীরা বিভ্রান্ত করতে চাইছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ নিজেদের কাজ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy