Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শিশুর দেহ নিয়ে পাল্টা ধর্না

শনিবার বেলা সওয়া এগারোটা নাগাদ তাল কাটল হঠাৎই। দু’হাতে একরত্তি শিশুর নিথর দেহ আঁকড়ে ধরে সেই জমায়েতের সামনে হাজির হলেন বছর পঞ্চান্নর মানোয়ারা বেগম।

নাতির দেহ কোলে বিক্ষোভে মানোয়ারা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নাতির দেহ কোলে বিক্ষোভে মানোয়ারা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০১:৪১
Share: Save:

জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের। স্লোগান উঠছে, ‘ডাক্তার-রোগী ভাই-ভাই/আমরা সবাই শান্তি চাই’।

শনিবার বেলা সওয়া এগারোটা নাগাদ তাল কাটল হঠাৎই। দু’হাতে একরত্তি শিশুর নিথর দেহ আঁকড়ে ধরে সেই জমায়েতের সামনে হাজির হলেন বছর পঞ্চান্নর মানোয়ারা বেগম। মেদিনীপুর মেডিক্যালের আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সামনে মাটিতে সেই শিশুর দেহ রেখে গর্জে উঠলেন মানোয়ারা, ‘‘তোমরা জীবন দিতে না নিতে বসেছো?’’ মৃত শিশুটি মানোয়ারার নাতি। বয়স মাত্র দু’দিন।

এনআরএস-কাণ্ডের জেরেই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। জরুরি বিভাগের সামনে চলছে অবস্থান-বিক্ষোভ। এ দিন সেখানে শিশুর দেহ নিয়ে পরিজনেদের পাল্টা অবস্থানে শোরগোল পড়ে যায়। মৃত শিশুর বাবা শেখ মনিরুল অভিযোগ করেন, ‘‘হাসপাতালে আমার বাচ্চার কোনও চিকিৎসাই হয়নি। আমি চাই না আর কোনও বাচ্চা এ ভাবে মারা যাক।’’ মৃতের ঠাকুমা মানোয়ারা বেগমের আরও দাবি, সদ্যোজাতকে জল, দুধ দেওয়া হয়নি। মায়ের কাছেও তাকে দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদে মৃত শিশুর পরিজনেরা বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান। পরে পুলিশ এসে আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। শিশুর মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি রওনা দেন পরিজনেরা।

মনিরুলের বাড়ি মেদিনীপুরের আকড়সানগরে। তাঁর স্ত্রী মুস্তারি বিবি গত বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর মেডিক্যালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে ৩২ সপ্তাহে জন্ম হয়েছিল ওই শিশুপুত্রের। অস্ত্রোপচার করে জন্মের পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৪৩-এ ওই সদ্যোজাতকে এসএনসিইউয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। শনিবার সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে সেখানে তার মৃত্যু হয়। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, ‘‘ওই প্রিম্যাচিওরড বেবির ওজন কম ছিল, শ্বাসকষ্টও ছিল। বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা হয়েছে। চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি ছিল না।’’

এই শিশুর চিকিৎসায় জুনিয়র ডাক্তারদের যে কোনও ভূমিকা ছিল না, সিনিয়র ডাক্তাররা মৃতের পরিজনেদের সে কথা বোঝানোরও চেষ্টা করেন। শিশুর দেহ নিয়ে ধর্না-বিক্ষোভের সময় সেখানে আসেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশু বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকেরা। জানান, সব রকম চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক থাকায় শিশুটি চিকিৎসায় সাড়া দিতে পারেনি। শিশুটি যেখানে ভর্তি ছিল, সেই এসএনসিইউয়ে যে জুনিয়র ডাক্তাররা থাকে না, তা-ও জানানো হয়। মেডিক্যালের অধ্যক্ষও বলেন, ‘‘এসএনসিইউয়ে সব সময় সিনিয়র চিকিৎসকরাই থাকেন।’’

মৃত শিশুর পরিজনেরা অবশ্য কোনও যুক্তিই শুনতে রাজি ছিলেন না। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে তাঁরা বারবার একটাই প্রশ্ন করেছেন, ‘‘আমরা তো একজনকে হারালাম। তোমাদের হরতালের জন্য হাসপাতালে কতজন মারা যাচ্ছে সে খোঁজ রাখছ কি?’’ আন্দোলনকারী এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই খুব দুঃখজনক। কোনও চিকিৎসকই চান না রোগীর মৃত্যু হোক। আর এই শিশুটির চিকিৎসায় তো আমাদের কোনও ভূমিকাই ছিল না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy