ঋণ আদায় করতে গিয়ে বিপাকে ব্যাঙ্ক। প্রতীকী চিত্র।
চাকরি পেয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন স্কুলের একাধিক শিক্ষাকর্মী। আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি চাকরি গিয়েছে তাঁদের। পূর্ব ও পশ্চিম, মেদিনীপুরের দুই জেলা মিলিয়ে সেই ৫৭ জন ঋণগ্রহীতা চাকরিচুত্যত শিক্ষাকর্মীর ব্যাঙ্কের কাছে বকেয়া টাকার পরিমাণ প্রা।য় পাঁচ কোটি। বিপাকে পড়ে বকেয়া আদায়ে ওই শিক্ষাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি চিঠি পাঠাচ্ছে তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। তবে ব্যাঙ্কের দাবি, ওই বকেয়া টাকায় ব্যাঙ্কের ‘স্বাস্থ্যহানি’ হবে না। ব্যাঙ্ক শক্তভিতের উপরই দাঁড়িয়ে রয়েছে।
দুই মেদিনীপুর জেলার ২৫টি ব্লক জুড়ে ঘাটাল-তমলুক সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মোট ২৭টি শাখা রয়েছে। ঘাটাল, তমলুক ও হলদিয়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে ব্যাঙ্কের শাখাগুলি। গত তিন-চার বছর আগে নিয়ম মেনেই ওই ব্যাঙ্ক থেকে বর্তমানে চাকরি হারানো শিক্ষাকর্মীদের ঋণ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সকলের ‘স্যালারি অ্যাকাউন্ট’ ছিল ওই ব্যাঙ্কে। ফলে কেউ ‘সার্ভিস সিক্যুরিটি’র নিরিখে, কেউ আবার ‘ব্যক্তিগত ঋণ’ নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে মোট ৫৭ জন ঋণ নিয়েছিলেন বলে ব্যাঙ্ক সূ্ত্রের খবর। টাকার মোট অঙ্ক ৫ কোটি। এঁদের মধ্যে ঘাটাল মহকুমার তিন জন বাকিরা তমলুক ও হলদিয়া মহকুমা এলাকার বাসিন্দা। মাসে মাসে বেতনের টাকা থেকে কিস্তি মেটাতেন তাঁরা। কিন্তু মাস দেড়-দুই আগে থেকে হাই কোর্টের নির্দেশে পর্যায়ক্রমে রাজ্যের আরও অনেকের সঙ্গে ওই ৫৭ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। তারপর থেকেই বন্ধ ঋণের কিস্তি মেটানো। ফলে বকেয়া টাকা আদায়ে ফাঁপরে পড়েছেন তমলুক ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, স্কুলে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি সামনে আসার পরই ঋণ সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেন এই ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ। গত বছরের শেষ থেকেই বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়। ঋণ নেওয়া গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের তালিকাও তৈরি করেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। হাই কোর্টের নির্দেশের পরে ওই ৫৭ জন ঋণগ্রহীতার চাকরি হারানোর বিষয়টি সামনে আসে। এরপরই তাঁদের অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
জানা গিয়েছে, অধিকাংশেরই গত ডিসেম্বর, কারও কারও জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বেতন ঢুকেছিল অ্যাকাউন্টে। ওই ৫৭ জনের একাংশের তার বাইরেও কিছু টাকা ব্যাঙ্কে জমা ছিল। তবে সে সব মিলিয়েও ব্যাঙ্ক এক কোটি টাকার মতো আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। বাকি এখনও প্রায় ৪ কোটি টাকা। সেই টাকা কী ভাবে আদায় হবে, তা নিয়েই এখন মাথাব্যথা ব্যাঙ্ক কর্তাদের। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চাকরিচ্যুত ওই ৫৭ জনের বাড়িতে ব্যাঙ্কের তরফে থেকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। চিঠিতে বকেয়ার টাকা এক মাসের (৩০ এপ্রিল) মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে। টাকা শোধ না করলে আইনানুগ পদক্ষেপের কথাও জানানো হয়েছে। যদিও সদ্য চাকরি যাওয়া ঘাটাল ব্লকের এক ঋণগ্রহীতা বলছেন, “ ব্যাঙ্কের টাকা অবশ্যই শোধ করব। তবে হয়তো সময়ে পারব না।”
ডেপুটি আরসিএস তথা তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক (সিইও) হিরোজ মাইতি ববলেন, “ব্যাঙ্ক তার নিয়ম মেনে লোন দিয়েছিল। তার মধ্যে ৫৭ জনের চাকরি চলে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক তাদের তালিকা তৈরি করে বাড়িতে চিঠি পাঠাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা শোধ না করলে ব্যাঙ্ক আইনানুগ পদক্ষেপ করবে।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “এই ব্যাঙ্কের মোট দাদনের পরিমাণ ১২৪০ কোটি টাকা। ফলে ওই পরিমাণ বকেয়া টাকায় ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্যহানি ঘটবে না।”
তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক পরিচালন কমিটির সভাপতি গোপাল মাইতি এবং সম্পাদক কৌশিক কুলভীও বলছেন, “আইন মেনে ঋণের বকেয়া টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ব্যাঙ্ক। আদায়ও হবে। আমাদের ব্যাঙ্ক শক্তভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। ব্যাঙ্কের আর্থিক গতিও স্বাভাবিক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy