Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

টেট নিয়ে নাজেহাল গ্রাহক থেকে ব্যঙ্ক কর্মী

টেট বিপত্তি চলছে ফর্ম বিলি থেকেই। প্রার্থীরা ফর্ম তোলার জন্য লাইন দিচ্ছেন রাত দেড়টা থেকে। সারা রাত দাঁড়িয়ে থেকেও কোথাও মিলছে না ফর্ম, কোথাও জুটছে পুলিশের লাঠি। অন্য দিকে যে সব ব্যাঙ্ক গুলি থেকে ফর্ম দেওয়া হচ্ছে, সেখানকার সাধারণ গ্রাহকরা চরম হয়রানির শিকার। কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে সামান্য কিছু কাজের জন্য, কোথাও আবার নিরাপত্তাকর্মীদের তল্লাশি আর জেরায় জেরবার তাঁরা।

টেট-এর ফর্ম পেতে রোদ উপেক্ষা করেই দীর্ঘ লাইন। ঝাড়গ্রাম শহরে।

টেট-এর ফর্ম পেতে রোদ উপেক্ষা করেই দীর্ঘ লাইন। ঝাড়গ্রাম শহরে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

টেট বিপত্তি চলছে ফর্ম বিলি থেকেই। প্রার্থীরা ফর্ম তোলার জন্য লাইন দিচ্ছেন রাত দেড়টা থেকে। সারা রাত দাঁড়িয়ে থেকেও কোথাও মিলছে না ফর্ম, কোথাও জুটছে পুলিশের লাঠি। অন্য দিকে যে সব ব্যাঙ্ক গুলি থেকে ফর্ম দেওয়া হচ্ছে, সেখানকার সাধারণ গ্রাহকরা চরম হয়রানির শিকার। কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে সামান্য কিছু কাজের জন্য, কোথাও আবার নিরাপত্তাকর্মীদের তল্লাশি আর জেরায় জেরবার তাঁরা।

প্রথম দিন থেকে টেট প্রার্থীদের লম্বা লাইন পড়েছে সুতাহাটার চৈতন্যপুরের একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের শাখায়। ওই ব্যাঙ্কের সাধারণ গ্রাহকদের অভিযোগ, এমনিতেই ওই ব্যাঙ্কের জায়গা ছোট। সেখানে প্রার্থীদের বিশাল লাইনে দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়।

গোদের উপর বিষ ফোঁড়া পুলিশি নিরাপত্তা। ভিড় ঠেলে ব্যাঙ্কে ঢুকতে গেলে প্রথমেই পুলিশি জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে দেখে নিচ্ছে টেটের ফর্ম নেওয়ার জন্য কেউ গ্রাহক সেজে ব্যাঙ্কে ঢুকছে কিনা।

ঝাড়গ্রামের ওই ব্যাঙ্কের গ্রাহক অঞ্জু সিংহ বলেন, “টাকা জমা দেব বলে গিয়েছিলাম। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে ব্যাঙ্কের ভিতর ঢোকা অসম্ভব।” গ্রাহকদের বক্তব্য, মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে এই ব্যাঙ্কের একাধিক শাখা রয়েছে। এমনকী অরণ্যশহরেরও আরও একটি শাখা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাণ্ড জ্ঞানহীনতার মাশুল গুনতে হচ্ছে গ্রাহক ও প্রার্থীদের।

একই অভিজ্ঞতা হলদিয়ার চৈতন্যপুরের বাসিন্দা অলোক পড়ুয়ার, ‘‘এ দিন আমি টাকা জমা দিতে এসেছিলাম। ব্যাঙ্কে ঢুকতেই পুলিশকর্মীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। তার উপরে টেটের ফর্ম নেওয়ার জন্য কোনও কাগজপত্র আছে কিনা তাও পুলিশ তল্লাশি করছে।’’ যদিও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, সাধারণ গ্রাহকরা এলেই তাঁদের কাজ আগে করে দেওয়া হচ্ছে। টেটের ফর্ম দেওয়ার জন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে না।

তবে সমস্যা যে হচ্ছে, তা স্বীকার করছেন কোনও কোনও ব্যাঙ্কের আধিকারিকরাও। তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের অফিসের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় গত সোমবার থেকেই ফর্ম নেওয়ার জন্য ভিড় হচ্ছে। ফলে ওই ব্যাঙ্কের প্রায় সব কর্মীদেরই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ফর্মের জন্য টাকা জমার রসিদ তৈরি করতে। ওই শাখার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের ১০ জন কর্মী, পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্য শাখা থেকে বাড়তি কর্মী নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু তাতেও সব কিছু সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। গ্রাহকদের পরিষেবা কিছুটা হলেও ব্যহত হচ্ছে।’’

ওই ব্যাঙ্কের এক পদস্থ আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘গোটা জেলায় আমাদের ব্যাঙ্কের মোট ৫২ টি শাখা রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নির্দেশে চার মহকুমার মাত্র চারটি শাখা থেকে ফর্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ফলে ব্যপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।’’ বৃহস্পতিবার থেকে আরও দু’টি শাখাতে ফর্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অভিযোগ এই বিপুল ভিড় সামাল দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন ব্যঙ্ক কর্মীরাও। যে সব শাখায় ফর্ম দেওয়া হচ্ছে সেখানকার কর্মীদের বহুক্ষণ বসে কাজ করতে হচ্ছে। এই অতিরিক্ত চাপের মুখে ক্ষোভ জমছে তাঁদের মধ্যেও। ঘাটালের একটি ব্যাঙ্কের অবস্থা এমনই যে কর্মীরা সারাদিনে কিছু খেতে পারেননি।

সাধারণ গ্রাহকদের যে অসুবিধা হচ্ছে তা বোঝা গেল এগরার ওই ব্যাঙ্কের শাখায়। প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকে এই ব্যাঙ্কে এসেছেন নেগুয়া গ্রামের বৃদ্ধ আনন্দ নন্দী ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীপ্রিয়া নন্দী। তাঁরা জানান ‘‘সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত বসে রয়েছি পেনশনের জন্য। ওখানে চাপ আছে জানিয়ে আমাদের বসতে বলেছেন কর্মীরা।’’

এরই মধ্যে শুক্রবার ঘাটালে আচমকাই ফর্ম দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আবেদকারীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে পুলিশ লাঠিচার্জও করে। প্রতিবাদে ঘাটাল শহরের ময়রাপুকুরের কাছে রাস্তা অবরোধও হয় কিছুক্ষণ।

ঘাটাল মহকুমায় মাত্র ওই একটি শাখাতেই ফর্ম বিলি হচ্ছে। অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকায় এই বিশাল ভিড়ের ফলে এলাকায় বড় বড় দোকান গুলি আটকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। যানযটও বাড়ছে। শুক্রবার ব্যাঙ্কের দুই দিকে প্রায় দু’শো মিটার লম্বা লাইনও হয়েছিল বলে খবর।

ফর্ম না পেয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তমলুকের প্রার্থীরাও। হলদিয়ার চৈতন্যপুরেও ফর্ম শেষ হয়ে গিয়েছে বলে জানায় ব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ফলে শুরু হয় বিক্ষোভ। মৃদু লাঠি চার্জ করে পুলিশ। পরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মানস দাস জানান, ‘‘আরও ফর্ম পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরের দিন রসিদ নিয়ে গেলেই ফর্ম পাওয়া যাবে। তা ছাড়া সংসদ কার্যালয়ে এলেও মিলবে ফর্ম।’’

—নিজস্ব চিত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy