আভা খাটুয়া। ছবি সংগৃহীত।
খুশিটা ঐতিহাসিক। কিন্তু পরিবারে শোকের আবহ। বৌদির আকস্মিক মৃত্যু ঘটেছে কয়েকদিন আগে। সেই শোকেই এসেছে খুশির খবর। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের খুড়শি গ্রামের মেয়ে আভা খাটুয়া প্যারিস অলিপিক্সে সুযোগ পেয়েছেন। যোগ দেবেন শটপাট ইভেন্টে। সে খবরে খুশির বাঁধ ভেঙেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্রীড়া মহলে। খুশি লড়াকু আভার হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন যাঁরা। খুশি নারায়ণগড় জুড়ে। এলাকাবাসীর শুভেচ্ছায় ভরে উঠছে সমাজমাধ্যম।
নারায়ণগড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম খুড়শির লক্ষ্মীকান্ত খাটুয়া ভাগচাষি। মেয়েকে পড়ানোর এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সে ভাবে সহযোগিতা করতে পারেননি তিনি। কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন চকমুকুন্দ বাসন্তী বিদ্যাপীঠের ক্রীড়া শিক্ষক সাধন প্রামাণিক। তিনি আভার মধ্যে প্রতিভা টের পেয়েছিলেন। মেদিনীপুরে কোনও প্রতিযোগিতা হলে আভাকে শহরে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসতেন। তিনিই জেলার অ্যাথলেটিক্স প্রশিক্ষক সুব্রত পানের কাছে আভাকে ভর্তি করান। সালটা ছিল ২০০৯। আভা তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। মেদিনীপুরে সুব্রতবাবুর বাড়িতে থেকে ২-৩ দিন অনুশীলন করে আবার গ্রামে ফিরতেন আভা। দৌড়, জ্যাভলিন থ্রো, হাইজাম্প ও লংজাম্প প্রশিক্ষণ নিতেন।
২০১০ সালে প্রথম জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় পদক পান আভা। ২০১১ সালে মাধ্যমিক পাশ করে গোপীনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন আভা। এই বিদ্যালয়ের তখনকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নয়ন জানা এবং ক্রীড়া শিক্ষক শুভ্রশঙ্কর রায় আভার প্রশিক্ষণে অনেক সহায়তা করেছেন। আভা বেলদা কলেজের ছাত্রী ছিলেন। এই সময় সাফল্য আসতে থাকে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে অন্ধ্রপ্রদেশে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় হেপ্টাথেলন বিভাগে সোনা পান আভা। তাঁর হাত ধরেই সর্বভারতীয় স্তরে প্রথম সোনা পায় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। পরে আভা হেপ্টাথেলন ছেড়ে শটপাটে মন দেন।
যাঁর হাত ধরে আভার প্রথম শহরে আসা সেই সাধনবাবু এখন খড়্গপুর মাওয়া ঈশ্বরচন্দ্র হাইস্কুলে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘‘অনেক ছাত্র ছাত্রীকে রাস্তা দেখানোর চেষ্টা করেছি। সবাই সফল হতে পারেনি। খেলাধুলোর জগতে সর্বোচ্চ জায়গায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে আভা। আশীর্বাদ করছি, সফল হয়ে ফিরুক।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের সম্পাদক সোমনাথ দাস বলেন, ‘‘আভা বিদ্যালয় স্তর থেকেই পরিশ্রম শুরু করেছিল, তাই এতদূর পৌছোতে পেরেছে। ওঁকে দেখে বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা খেলাধুলোয় উৎসাহিত হবে।’’ আভার প্রথম হেপ্টাথেলন প্রশিক্ষক সুব্রত পান বলেন, ‘‘এটা খুবই ভাল খবর। প্যারিসে আভা নিজের সেরা পারফর্ম্যান্স করে ফিরুক।’’ মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সঞ্জিত তোরই বলেন, ‘‘আভা জেলার নাম উজ্জ্বল করেছে। জেলাবাসীর তরফে ওঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ওঁর জন্য আমরা সবরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।’’ আভার অলিম্পিক্সের সুযোগে খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া আধিকারিক সুহাস বারিক। তিনি বলেন, ‘‘আভা আমাদের গর্ব। বিশ্ব বিদ্যালয়ের মুকুটে প্রথম সোনার পালক আভাই যোগ করেছিল। আন্তর্জাতিক স্তরে ওর সাফল্য কামনা করি।’’ নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট বলেন, ‘‘খুব দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তার সাফল্য কামনা করছি।’’
সাইয়ে আভার প্রশিক্ষক ছিলেন সুভাষ সরকার। ইউক্রেনের ইউরি মেনে কোভা’র কাছে কয়েকমাস প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। আভা জাতীয় ক্যাম্পের প্রশিক্ষক, সাই এর প্রশিক্ষক ও ফেডারেশনের কর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বর্তমানে আভা ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং উইমেন শটপাটে ২৩ নম্বরে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে অলিম্পিক্সে অনেকেই ১৯ থেকে ২০ মিটার থ্রো করেন। তাই ফাইনাল রাউন্ডে ওঠাই এখন আমার প্রধান লক্ষ্য।’’
এখন বাড়িতেই রয়েছেন আভা। তবে আজ, শনিবার পাটিয়ালার উদ্দেশে রওনা দেবেন। বর্তমানে পাটিয়ালা জাতীয় ক্যাম্পে অনুশীলন করেন। তিনি মুম্বইয়ে কাস্টমে কর্মরত। মুম্বই থেকেই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। তবে আভা জানিয়েছেন, তিনি অন্তর থেকে বাংলার হয়ে খেলতে চান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy