কুরবান শা’র সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন শুভেন্দু। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
তিনি নেই। আবার আছেনও।
পাঁশকুড়ায় তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি কুরবান শা’কে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তিনি। ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি অর্থাৎ বিজেপি নেতা আনিসুর রহমান এলাকাতেই ছিলেন। দলীয় নেতাকে খুনের ঘটনায় জেলার তৃণমূল নেতা তথা পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও তাঁকেই দায়ী করেছেন। যদিও খুনের ঘটনার পর থেকেই আনিসুর কোথায় আছেন তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশের কাছে তিনি বেপাত্তা। তাঁর খোঁজে ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। তবে পুলিশ এখনও তাঁর খোঁজ না পেলেও শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় তাঁকে দেখা গিয়েছে।
এদিন দুপুরে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের কাছে আনিসুরে রেকর্ড করা একটি ভিডিও বার্তা পৌঁছয়। সেই ভিডিও বার্তায় আনিসুর দাবি করেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই কুবরান খুন হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘খুনের রাজনীতি আমি ও আমার দল বিশ্বাস করে না। আমি কুরবান শা’র পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আমার মনে হয় এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা। খুনের ঘটনায় আসল দোষীকে খুঁজে বার করা হোক। আমি ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করছি।’’ একই সঙ্গে নাম না করলেও অধিকারী পরিবারকে নিশানা করে আনিসুর বলেন, ‘‘ আমি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই জেলার ততা রাজ্যের এক প্রভাবশালী তাবড় নেতা আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন। জেলায় কোথাও কোনও খুন হলেই তার সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে দিচ্ছেন। আসলে আমার সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই করতে না পেরে তিনি এ ভাবে আমার নামে কালি ছেটাচ্ছেন। তদন্তের আগে তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।’’ পুলিশের উদ্দেশে আনিসুরের বক্তব্য, ‘‘আমার পিছনে না ছুটে যারা খুন করল তাদের আগে ধরার চেষ্টা করুন। আমি নিশ্চিতভাবে আইনের সাহায্য নিচ্ছি।’’
প্রসঙ্গত, নবমীর রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারান কুরবান। ঘটনায় আনিসুর রহমান সহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে কুরবানের পরিবার। ইতিমধ্যেই পুলিশ খুনের ঘটনায় আটক তিনজনের মধ্যে শেখ খালেক আহমেদ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। আটক আনিসুরের ভাই তথা পাঁশকুড়া পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার আশিকুর রহমানকে বৃহস্পতিবার ছেড়ে দেয় পুলিশ। ছেড়ে দেওয়া হয়েছে অভিযুক্ত শেখ মোবারকের স্ত্রীকেও।
অন্যদিকে কুরবানের মতো দলের ডাকসাইটে নেতা খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলার ছোট, মাঝারি মাপের নেতাদের মধ্যে। তৃণমূল সূত্রে খবর, নিরাপত্তারক্ষী চেয়ে জেলা নেতৃত্বের কাছে ইতিমধ্যেই বহু নেতা আবেদন জানিয়েছেন। কুরবান হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছে পাঁশকুড়ার উপপুরপ্রধান সইদুল ইসলাম খান ও সংখ্যালঘু সেলের নেতা জইদুল ইসলাম খানকে। এ দিন কুরবানের পরিবারের তরফে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয় কুরবানের বাড়িতেই। সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টা নাগাদ কুরবানের বাড়িতে পৌঁছন শুভেন্দু। কুরবানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। পরে মাইশোরা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান স্বপন খাঁড়াকে ডেকে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা করার পরামর্শ দেন। উল্লেখ্য কুরবানের স্ত্রী সাবান বানু খাতুন মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। পরে কুরবানের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। কুরবানের বাড়িতে প্রায় এক ঘণ্টা ছিলেন শুভেন্দু।
কুরবানের মৃত্যুতে তাঁর শূন্য আসনে উপ নির্বাচনে কুরবানের দাদা আফজল শা’কে ভোটে লড়ার প্রস্তাব দেন শুভেন্দু। সেই সঙ্গে মাইশোরা অঞ্চলের সার্বিক রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ নিতেও বলেন। আফজল বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু আমাকে ভাইয়ের পদে দেখতে চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে আমি এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।’’
তাঁর পরিবারকে সান্ত্বনা জানানো ও নিজেকে নির্দোষ ঘোষণা নিয়ে আনিসুরের ভিডিও বার্তা প্রসঙ্গে কুরবানের স্ত্রী সাবানা বানু বলেন, ‘‘বিষয়টি শুভেন্দুদা দেখছেন। তাঁর ওপর আমাদের আস্থা আছে। আনিসুর কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy