Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Death

অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে গিয়ে ছাড়তে হয়েছিল বাড়ি

এপ্রিলের শুরুতে করোনা উপসর্গযুক্ত রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স চালক খুঁজতে শুরু করে কোলাঘাট ব্লক প্রশাসন।

মৃত রাজু মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

মৃত রাজু মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোলাঘাট শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০২:৩৯
Share: Save:

করোনা রোগীর অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে রাজি হননি কোনও চালক। কোলাঘাট ব্লক প্রশাসন যখন কোনও অ্যাম্বুলেন্স চালককে করোনা রোগী পরিবহণে রাজি করাতে পারছিলেন না, তখন স্বেছায় সেই কাজে এগিয়ে এসেছিলেন রাজু মণ্ডল। তবে স্থানীয়দের আপত্তির কারণে কাজের শেষে বাড়িতে ঢুকতে পারতেন না তিনি। থাকতেন কোলাঘাটের পাইকপাড়ি স্বাস্ত্যকেন্দ্রের একটি ঘরে। যে কর্তব্যে অবিচল থাকতে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল সেই কতর্ব্য করতে গিয়েই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল কোলাঘাট ব্লকের একমাত্র করোনা অ্যাম্বুল্যান্স চালক রাজুর। রাজুর মৃত্যুতে নতুন অ্যাম্বুল্যান্স চালকের খোঁজে হন্যে কোলাঘাট ব্লক প্রশাসন।

মার্চের শেষ লগ্নে জেলায় থাবা বসায় করোনা। এপ্রিলের শুরুতে করোনা উপসর্গযুক্ত রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স চালক খুঁজতে শুরু করে কোলাঘাট ব্লক প্রশাসন। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে করোনা রোগী বা উপসর্গযুক্তদের অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে রাজি হননি কেউ। শেষমেশ এগিয়ে আসেন কোলাঘাটের পাইকপাড়ি এলাকার যুবক রাজু মণ্ডল। গত ২৬ এপ্রিল তিনি কাজে যোগ দেন। করোনা রোগী বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে শুরু করার পর তাঁকে এলাকায় ঢুকতে দেননি লোকজন। শেষে কোলাঘাট ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শিবশঙ্কর খানের হস্তক্ষেপে রাজুকে রাখা হয় পাইকপাড়ি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি ঘরে। সরকারি উদ্যোগে তাঁর খাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল হাসপাতালে। বাড়িতে এক ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও দিদিমাকে নিয়ে সংসার ছিল রাজুর।

রবিবার বড়মা হাসপাতালের অদূরে পথ দুর্ঘটনায় রাজুর মৃত্যুর পর কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়লা বোঝাই একটি লরির পিছনে ধাক্কা মারে রাজুর অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু যথেষ্ট ‘দক্ষ’ চালক হিসেবে পরিচিত রাজু কী ভাবে ধাক্কা মারলেন লরির পিছনে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ। এলাকার অনেকের সন্দেহ, করোনা সংক্রমণ বাড়ার জন্য রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছতে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম এবং বিশ্রাম না পাওয়ার কারণে থাকতে পারে এই দুর্ঘটনার পিছনে। রাজুর ভাইয়ের স্ত্রী ঝর্না বলেন, ‘‘দাদাই সংসার চালাতেন। এখন আমাদের সংসার কী ভাবে চলবে? গাড়ি চালানোর হাত ভাল ছিল দাদার। সম্ভবত অন্য কোনও গাড়ি ওকে চেপে দেওয়ায় লরির পিছনে উনি ধাক্কা মারেন।’’

কোলাঘাট ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শিবশঙ্কর খান বলেন, ‘‘রাজু খুবই দক্ষ ছিলেন। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না। সম্ভবত অন্য কোনও গাড়ি ওঁকে চেপে দিয়েছিল। করোনার ভয়কে উপেক্ষা করেই স্বেছায় অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে এগিয়ে এসেছিলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Ambulance Coronavirus in Midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE