জমি সব দোফসলি। ধানের সঙ্গে ভাল আনাজও চাষ হয়। কিন্তু সেই সব জমি চাষের অযোগ্য হয়ে উঠছে অবৈধ ভেড়ির নোনাজল চুঁইয়ে ঢোকায়। বিঘার পর বিঘা জমিতে ঢুকছে নোনাজল। জেলা প্রশাসনের দোরগোড়ায় ঘুরেও হয়নি কোনও সুরাহা। বাধ্য হয়েই কৃষকেরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সমাধান না হলে আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।
এগরার পানিপারুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বেশ কিছু মৌজায় রাতের অন্ধকারে কৃষি জমিতে বেআইনি ভাবে ভেড়ি তৈরির অভিযোগ উঠেছিল। সেই ভেড়িগুলোর নোনাজলেই শেষ হতে বসেছে এলাকার কৃষিকাজ।
পানিপারুল এলাকায় দোফসলি জমিতে ধান চাষ হয়। আনাজ চাষও করা হয়। বাগিচা ফসল হিসেবে লঙ্কার ব্যাপক হারে চাষাবাদ চলেয়। কয়েক মাস ধরে পানিপারুল, দেবীদাসপুর এলাকায় কৃষকদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে জমি নিয়ে বেআইনি ভাবে ভেড়ি তৈরি করছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। এই দুই মৌজায় প্রায় ৫০০ একর কৃষিজমি রয়েছে।
গত পাঁচ বছরে এই এলাকায় বেআইনি ভাবে ১২টি ভেড়ি তৈরি করা হয়েছে। ভেড়িগুলোর আয়তন প্রায় ১০ একরের মতো। পাশেই ওড়িশা কোস্ট ক্যানাল থেকে সেচযন্ত্রে জল তুলে ভেড়িতে নিয়ে আসা হয়। ভেড়ির সেই নোনাজল চুঁইয়ে পাশের কৃষিজমিতে ঢুকে পড়ছে। নোনাজলে নষ্ট হচ্ছে বিঘার পর বিঘা কৃষি ফসল। ক্ষতি থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে কৃষকেরা ভেড়ির জন্য লিজে জমি দিয়ে দিচ্ছেন। এভাবেই বেড়েই চলছে কৃষিজমির ভেড়িতে ভ্যানামেই চিংড়ির চাষ।
ঠিক একই কায়দায় ভগবানপুরে কয়েকশো একর জমি লিজ নিয়ে ভেড়ি-কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন নিহত তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধান। বেআইনি ভেড়ি বন্ধ-সহ চাষের জমি বাঁচাতে ব্লক মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা গত ৩ মার্চ গণস্বাক্ষরিত আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। তারপরও প্রশাসনের তরফে কোনও সদর্থক উদ্যোগ হয়নি বলে দাবি। তাই কৃষক সংগঠনগুলোর হাত ধরে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। দুই কৃষক হৃষিকেশ জানা ও রাধারমণ দাস বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে ভ্যানামেই চাষের ভেড়ি করা হচ্ছে। ভেড়ির নোনাজল কৃষিজমিতে ঢুকে ফসল নষ্ট হচ্ছে। মাটির উর্বরতা হারিয়ে যাচ্ছে। জেলা ও মহকুমা প্রশাসন থেকে কৃষি দফতরে জানিয়ে লাভ হয়নি। পথে নেমে আন্দোলনে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’’
কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের সভাপতি প্রকাশ রায় চৌধুরী বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে ভেড়ি তৈরির ফলে নোনাজলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করছেন না। প্রয়োজনে কৃষকদের নিয়ে আন্দোলনে নামা হবে।’’ এ ব্যাপারে এগরার মহকুমাশাসক মনজিৎকুমার যাদব বলেন, ‘‘কৃষকদের আবেদন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কৃষি ও ভূমি দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)