প্রতীকী ছবি।
এ যেন আক্ষরিক অর্থেই সবার জন্য ঘর!
স্বামী সরকারি কর্মচারী। তাঁরও চাই ভর্তুকির ঘর।
পুরসভার ঠিকাদারের দোতলা বাড়ি থাকলে কী হবে! সরকারি প্রকল্পে ঘরের প্রত্যাশী তিনিও।
পুরসভার ‘হাউস ফর অল’ প্রকল্পে উপভোক্তাদের একটি তালিকা (ওই তালিকার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছে। তারপরই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বাম, বিজেপির অভিযোগ, প্রাপক-তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের অনেকেই আগে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন। তালিকায় এমন নামও রয়েছে, যাঁদের দোতলা কিংবা তিনতলা পাকা বাড়ি রয়েছে বলে অভিযোগ। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক (সদর) সুবর্ণ রায় পুর-প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন। তালিকার গরমিল সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা ওই তালিকা খতিয়ে দেখে যাঁরা পাওয়ার যোগ্য তাঁদেরই বরাদ্দ দেব।’’
ঝাড়গ্রাম পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৩ জনকে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। সূত্রের খবর, পুর-কার্যালয় থেকে তালিকাটি বুধবার আগাম ফাঁস হয়ে গিয়েছে। সেই তালিকা নিয়েই সরব হয়েছেন সিপিআইয়ের জেলা কমিটির সদস্য প্রতীক মৈত্র। তিনি ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। প্রতীকের অভিযোগ, ওই ৪৩ জনের তালিকায় ৮ জন প্রকৃত উপভোক্তা। বাকিরা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। এবং তাঁদের সকলেরই বাড়ি রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ওই তালিকায় নাম রয়েছে এক সরকারি কর্মীর স্ত্রীর। অথচ তাঁদের কদমকানন এলাকায় দোতলা বাড়ি রয়েছে। একই ভাবে এক ঠিকাদারেরও নাম রয়েছে ওই তালিকায়। পুরসভার ওই ঠিকাদারের দোতলা পাকা বাড়ি রয়েছে। তালিকায় এক বেসরকারি সংস্থার কর্মীর নাম রয়েছে, যাঁর বাবা আগেই পুরসভার বাড়ি পেয়েছেন। পেশায় ব্যবসায়ী এক সক্রিয় তৃণমূল কর্মীর নামেও বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। অথচ তাঁর বড় বাড়ি রয়েছে। ঝাড়গ্রাম ব্লক অফিসের এক কর্মীর ছেলের নামও উপভোক্তা তালিকায় রয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তাঁরও একতলা পাকা বাড়ি রয়েছে।
প্রতীকের অভিযোগ, ‘‘পুরভোটের আগে তৃণমূলের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি পাইয়ে দিয়ে স্বজনপোষণের রাজনীতি চলছে। উপভোক্তা-তালিকাটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করার কথা। সেটি একদিন আগেই আমরা হাতে পেয়ে গিয়েছি।’’ বিজেপি-র নগর মণ্ডলের সভাপতি নন্দন ঠাকুর বলেন, ‘‘প্রকৃত গরিব মানুষ বাড়ি পাচ্ছেন না। এসবই কাটমানি খেয়ে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি। এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন হবে। তথ্য জানার অধিকার আইনে সব ওয়ার্ডের উপভোক্তা তালিকা জানতে চেয়েছি।’’ পুরভোটের আগে এমন অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক-শিবির। শহর তৃণমূলের সভাপতি প্রশান্ত রায় বলেন, ‘‘অভিযোগ শুনেছি। পুরসভার নির্বাহী আধিকারিককে জানিয়ে দিয়েছি, যাঁদের বাড়ি নেই, যাঁরা ঝুপড়িতে বসবাস করেন, বাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।’’
২০১৩-’১৮ পর্যন্ত পুরবোর্ডের ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। গত বছর ডিসেম্বরে তৃণমূলের ক্ষমতাসীন পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে প্রশাসক নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। ঝাড়গ্রামের পুরপ্রশাসক বলেন, ‘‘ওই তালিকাটি বিগত পুরবোর্ডের আমলে তৈরি হয়। এবং বিভাগীয় দফতরে পাঠানো হয়।’’
লোকসভা ভোটের পর ‘কাটমানি’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর জল গড়িয়েছে অনেক দূর। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে উঠে এসেছে ঝাড়গ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সরকারি আবাস প্রকল্পে। বিরোধীরা বলছে, পরিস্থিতি বদলায়নি কিছুই। পুরভোটের আগেও দেখা যাচ্ছে, ‘জল ঢুকছে’ সেই ঘরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy