Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

ভাঁড়ার শূন্য সর্ডিহা পঞ্চায়েতের

ভাঁড়ার শূন্য ঝাড়গ্রাম ব্লকের সর্ডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতের! একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দেবযানী মাহাতো এবং পঞ্চায়েতের সচিব মধুসূদন দাসের সই করা চেকেই বিভিন্ন সময়ে তোলা হয়েছে ওই টাকা।

সর্ডিহা গ্রামপঞ্চায়েত কার্যালয়। ঘটনার প্রতিবাদে লাগানো হয়েছে এমনই পোস্টার (ইনসেটে)।ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

সর্ডিহা গ্রামপঞ্চায়েত কার্যালয়। ঘটনার প্রতিবাদে লাগানো হয়েছে এমনই পোস্টার (ইনসেটে)।ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪১
Share: Save:

ভাঁড়ার শূন্য ঝাড়গ্রাম ব্লকের সর্ডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতের! একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দেবযানী মাহাতো এবং পঞ্চায়েতের সচিব মধুসূদন দাসের সই করা চেকেই বিভিন্ন সময়ে তোলা হয়েছে ওই টাকা।

এ ছাড়াও ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার তৈরির জন্য উপভোক্তাদের কাছ থেকে ৭ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮০০ টাকা আদায় করা হয়েছিল। সেই টাকারও কোনও হদিশ নেই। অভিযোগ, সব মিলিয়ে প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বিষয়টি ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য আসরে নেমে পড়েছে শাসকদল। প্রশাসনও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। শাসকদলের স্থানীয় নেতারা পঞ্চায়েতের সচিব মধুসূদনবাবুকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মধুসূদনবাবুকে ওই টাকা ফেরত দিতে হবে। বিরোধীদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে পুরোদস্তুর প্রশাসনিক তদন্ত হলে টাকা-উধাও কাণ্ডে স্থানীয় অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বেরিয়ে পড়বে। সেই আশঙ্কাতেই বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে সিপিএম। এলাকায় পোস্টারও লাগানো হয়েছে।

পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের স্থানীয় শাখায় সর্ডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতের সাতটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। একটি অ্যাকাউন্টে তৃতীয় অর্থ কমিশনের প্রায় ১৩ লক্ষ ৬ হাজার টাকা ছিল। অন্য একটি অ্যাকাউন্টে ছিল ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের ৯ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা। ওই অ্যাকাউন্টে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের আরও ১৬ লক্ষ টাকা জমা পড়েছিল। পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ছিল ২ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা।

জানা গিয়েছে, কাগজে কলমে কোনও প্রকল্পের বরাদ্দ তৃতীয় অর্থ কমিশনের টাকায় দেখানো হলেও ঠিকাদারকে চেক-এ টাকা মেটানো হয়েছে কিন্তু ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ থেকে। যা কখনই করা যায় না। কখনও আবার নগদেও ঠিকাদারকে বিল মেটানো হয়েছে। এ রকমই বেশ কিছু অসঙ্গতি থেকে প্রশাসনের একাংশ মনে করছেন, অনেকটা টাকা সরিয়ে ফেলায় গত কয়েক মাস ধরে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছিল এই পঞ্চায়েতে। যে কারণে, ঠিকাদারদের বিল মেটাতে পারছিলেন না পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এক ঠিকাদারকে চেক-এ টাকা মেটাতে গিয়ে বিপাকে পড়েন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। প্রধান ও সচিবের সই করা চেকটি বাউন্স করে। ওই ঠিকাদারকে পরে নগদে টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন বাকি ঠিকাদাররা। বকেয়া বিলের টাকার দাবিতে তাঁরা প্রশাসনিক মহলে দরবার শুরু করেন। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১২ অগস্ট বিডিও-র প্রতিনিধি পঞ্চায়েত অফিসে তদন্তে যান। এরপরই গত শুক্রবার তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম ব্লক সভাপতি অনিল মণ্ডলের নেতৃত্বে মধুসূদনবাবুকে নিয়ে বৈঠক করা হয়।

পঞ্চায়েতের নিয়ম অনুযায়ী, কেবলমাত্র প্রধান এবং পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক একসঙ্গে সেল্ফ অথবা বেয়ারার চেক-এ সই করে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারেন। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ কাউকে চেক-এর মাধ্যমে টাকা মেটাতে চাইলেও প্রধান এবং নির্বাহী সহায়ককে একসঙ্গে সই করতে হবে। যেহেতু সর্ডিহা পঞ্চায়েতে নির্বাহী সহায়ক পদটি খালি রয়েছে, সেক্ষেত্রে সচিব মধুসূদনবাবুই নির্বাহী সহায়কের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। সেজন্য প্রধানের সঙ্গে প্রতিটি চেক-এ তাঁর সই রয়েছে।

সর্ডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দেবযানী মাহাতোর অবশ্য দাবি, “সচিবের কথা মতো চেক-এ সই করেছি।” শুক্রবার বিকেলে তিনি ঝাড়গ্রাম ব্লকের জয়েন্ট বিডিও চঞ্চল মণ্ডলের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে এসেছেন। সেখানে দেবযানীদেবী দাবি করেছেন, তাঁকে ভুল বুঝিয়ে চেক-এ সই করিয়ে নিয়েছেন মধুসূদনবাবু। পঞ্চায়েতে ২৮ লক্ষ টাকার হিসেবের গরমিল পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন দেবযানীদেবী। চঞ্চলবাবু বলেন, “বিকেলে অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব।

তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম ব্লক সভাপতি অনিল মণ্ডল দলীয় প্রধানকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে বলছেন, “মহিলা প্রধানকে ভুল বুঝিয়ে সচিব মধুসূদনবাবুই এ সব করেছেন। আমরা মধুসূদনবাবুকে বলেছি, টাকা ফেরত না দিলে আইনআইনের পথে চলবে।” অনিলবাবুর অবশ্য দাবি, “৪৯ লক্ষ নয়, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি ২০-২২ লক্ষ টাকা গরমিল হয়েছে।”

অন্য দিকে সচিব মধুসূদন দাসের দাবি, “প্রধানের নির্দেশেই টাকা তুলেছি। স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও পারিনি। বিষয়টি আইনের পথে গেলে কে দোষী সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।” পাশাপাশি, মধুসূদনবাবু জানিয়েছেন, শাসক দল ও প্রশাসনের সঙ্গে পৃথক ভাবে তাঁর আলোচনা হয়েছে। তাঁর কথায় “দু’তরফ থেকেই আমাকে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। দেখি কতটা কী করতে পারি।”

সর্ডিহা পঞ্চায়েতের বিরোধী সদস্য সিপিএমের ভজহরি শিট বলেন, “পঞ্চায়েতের প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেও প্রশাসন আশ্চর্য রকম ভাবে নীরব। প্রধান দেবযানীদেবী দায় এড়াতে পারেন না। কারণ প্রতিটি চেক-এ তাঁর সই রয়েছে।” ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “এখনও এ ব্যাপারে কেউ আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

tmc leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy