তৃণমূলের ক্লাব সংযোগ নতুন নয়। উপলক্ষ রামনবমী। এ বার ক্লাব সংযোগে নামছে গেরুয়া শিবিরও।
মেদিনীপুরে ‘শ্রীরামনবমী সমারোহ সমিতি’র উদ্যোগে রামনবমী পালিত হয়। গেরুয়া শিবিরের অনেকেই মানেন, এই সমিতি ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ’ (আরএসএস) প্রভাবিত। রামনবমী পালনের প্রস্তুতি ঘিরে সম্প্রতি মেদিনীপুরে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সঙ্ঘের কার্যকর্তারা ছিলেন। বিজেপি নেতৃত্বও ছিলেন। রামনবমীকে সামনে রেখে ক্লাব সংযোগের বিষয়টি নিয়ে সেখানে কথা হয়েছে।
সূত্রের খবর, বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সমিতির কার্যকর্তারা মেদিনীপুরের ক্লাবে ক্লাবে যাবেন। ক্লাবের সকলকে সমিতির রামনবমীর উৎসবে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাবেন। ৫ এপ্রিল সমিতির বাইক মিছিল রয়েছে। শহরের অরবিন্দনগরের মাঠ থেকে এই মিছিল শুরু হবে। মূলত এই মিছিলে শামিল হওয়ারই আহ্বান জানাবেন। ক্লাবে ক্লাবে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেবেন। বার্তা দেবেন, ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই...রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে হিন্দুত্বের উৎসবে সবাই একত্রিত হন’। সমিতির তরফে আশীর্বাদ ভৌমিক বলেন, ‘‘এতে অন্যায় কী? আমরা সকলের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছব। ক্লাবেও পৌঁছব। অনেকেই আমাদের উৎসবে আসেন।’’ আশীর্বাদ বিজেপির যুবমোর্চার জেলা সভাপতি। এ ভাবে ক্লাব সংযোগের পিছনে কী সঙ্ঘের কার্যকর্তাদেরই পরামর্শ রয়েছে, সে নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। ওই প্রস্তুতি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আরএসএসের কার্যকর্তা সমীরণ মজুমদার প্রমুখও।
তৃণমূলের ক্লাব সংযোগ নতুন নয়। ক্ষমতায় আসার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্লাবগুলির জন্য অনুদান চালু করেছিল তৃণমূল সরকার। যে কোনও নির্বাচন এলে তা আরও বাড়ে। পরিস্থিতি দেখে ইদানীং একই পন্থা নেয় গেরুয়া শিবিরও। অনেকে মনে করাচ্ছেন, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি সক্রিয় করেছিল তাদের ‘ক্লাব অ্যান্ড স্পোটর্স সেল’- কে। সেলের উদ্যোগে জেলাব্যাপী যোগাসন প্রতিযোগিতা হয়েছিল।
প্রশাসনের দাবি, খেলার মানের উন্নতি ঘটাতে ক্লাবগুলিকে অর্থ সাহায্য করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটে দলের হয়ে ক্লাবের ছেলেদের নামাতেই খয়রাতি করেছে তৃণমূল সরকার। সরকারি অর্থে ক্লাবগুলিকে কেনার চেষ্টা করা হয়েছে। বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের কথায়, ‘‘ক্লাবগুলিকে ‘ভোট মেশিনারি’ হিসাবে ব্যবহার করবে বলেই তো এত দান- খয়রাতি করেছে। অনুদান পাইয়ে দিয়ে আনুগত্য এবং সমর্থন কেনার চেষ্টা করেছে শাসক দল। আর অন্য কিছু নয়।’’ তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘খেলাধুলোর উন্নতির স্বার্থেই ক্লাবগুলিকে অনুদান দিয়েছে আমাদের সরকার। আর আমাদের সরকারের কাজকর্ম ভাল লেগেছে বলেই অনেক ক্লাব নিজে থেকে রাজ্য সরকারের সমর্থনে প্রচারে নেমেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে।’’
শহরে বিভিন্ন ক্লাবের উদ্যোগেও রামনবমীর শোভাযাত্রা হয়। কোনও ক্লাবের পরিচিতি তৃণমূল প্রভাবিত হিসাবে, কোনও ক্লাবের পরিচিতি বিজেপি প্রভাবিত হিসাবে। সামনে ক্লাব। সম্মুখসমরে যুযুধান।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)