Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজনীতি নয়, দাবি পুকুরের সুরক্ষার

বছর সতেরোর ওমনাথ সিংহদের অভাবের সংসার। বাবা পেশায় রিকশা চালক। মা গৃহবধূ। তিন ভাই-বোনের সংসারে চতুর্থ শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা এগোয়নি। রোজগারের টানে মাত্র সতেরো বছর বয়সেই রাজমিস্ত্রির সঙ্গে থেকে কাজ শিখছিল ওমনাথ।

ওমনাথ সিংহ।

ওমনাথ সিংহ।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০১:১৬
Share: Save:

স্বজন বিয়োগে তাল কাটল উৎসবের। মামাবাড়িতে ছটপুজোর আনন্দের মাঝে ঘটল বিপত্তি। জলে ডুবে মৃত্যু হল এক নাবালকের। নাতিকে হারিয়ে আগামী বছর থেকে ছটপুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন দাদু।

বছর সতেরোর ওমনাথ সিংহদের অভাবের সংসার। বাবা পেশায় রিকশা চালক। মা গৃহবধূ। তিন ভাই-বোনের সংসারে চতুর্থ শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা এগোয়নি। রোজগারের টানে মাত্র সতেরো বছর বয়সেই রাজমিস্ত্রির সঙ্গে থেকে কাজ শিখছিল ওমনাথ। রবিবার তার মৃত্যুর পরে নিমপুরা ক্ষুদিরামপল্লির এক চিলতে ঝুপড়িতে শুধুই আর্তনাদ। এ দিন ভোরে মামাবাড়ির ছটপুজোয় সূর্যপ্রণাম করতে পরিজনেদের সঙ্গে কাছেই পুকুরঘাটে গিয়েছিল ওই তরুণ। প্রান্তিক ময়দান সংলগ্ন রেলের জমিতে পুরসভার খনন করা পুকুরে ভিড় জমিয়েছিলেন কয়েকশো পুণ্যার্থী। সেখানেই পুজো চলাকালীন পুকুরের জলে নেমে পড়ে ওমনাথ। তার পরে পুরসভার বেঁধে দেওয়া দড়ির বিপদসীমা পেরিয়ে যেতেই গভীর জলে তলিয়ে যায় ওই কিশোর। দীর্ঘক্ষণ তল্লাশির পরে স্থানীয়দের চেষ্টায় উদ্ধার হয় ওই তরুণের নিথর দেহ। তার পরে এই জলে ডুবে মৃত্যু নিয়ে রাজনীতির জল অনেক ঘোলা হয়েছে। তবে সব ছাপিয়ে ধরা পড়ছে ছেলেহারা পরিবারের হাহাকার। রাজনীতি নয়, পুরসভার কাছে পুকুরপাড়ের সুরক্ষা চাইছে পরিবার থেকে এলাকাবাসী।

রিকশা চালক বিক্রম সিংহের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে ওমনাথ। অভাবের সংসারে ছেলেদের বেশিদূর পড়াশোনা হয়নি। ওমনাথের দাদা সোমনাথ সাবানের কারখানায় মজুরের কাজ করেন। বছর খানেক ধরে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসাবে কাজ করছিল ওমনাথও। সেই আয়েই চলত সংসার, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বোন নেহার পড়াশোনা। অভাবের সঙ্গে রোজকার এই যুদ্ধের যন্ত্রণা দূরে সরিয়েই ছটপুজোর আনন্দের মেতে ছিল গোটা পরিবার। তারই তাল কাটল ওমনাথের মৃত্যুতে।

ছেলের মৃত্যুর জন্য পুকুরঘাটের অব্যবস্থাকে দায়ী করে ওমনাথের মা আশা সিংহ বলেন, “পুকুরঘাটে পাতলা একটি দড়ি দিয়ে ঘিরে বিপদসীমা তৈরি হয়েছিল। সেই দড়ি ধরে বাঁচার চেষ্টা করলেও ছিঁড়ে যাবে। আমার ছেলে তলিয়ে যাওয়ার পরে চিৎকার করলেও প্রশাসনের কেউ এগিয়ে আসেনি। এর দায় পুরসভা ও প্রশাসনকে নিতে হবে। আমি রাজনীতি চাই না। সুরক্ষা চাই। আর যেন কারও এমন ক্ষতি না হয়।”

একই দাবি তুলেছেন মৃতের মাসি ভবানী সাউ। পড়শি সুবোধকুমার যাদব বলেন, “আমরাও তো ওই পুকুরেই পুজো দিতে গিয়েছিলাম। অনেকের মতো ওমনাথও স্নান করতে নেমেছিল। কিন্তু কোনও সুরক্ষা ছিল না। বাঁশ দিয়ে পুকুর ঘিরে দিলে এমন ঘটনা ঘটত না।”

এমন ঘটনায় তাল কেটেছে উৎসবের আনন্দে। এমনকী আগামীদিনে পুজো না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মৃত তরুণের মামাবাড়ি। ওমনাথের দাদু শঙ্কর সাউ বলেন, “আমার বাড়ির পুজোয় শনিবার বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত আনন্দ করছিল নাতি। সকলের মঙ্গল কামনায় পুজো। সেখানে যখন আমার নাতিই থাকল না তখন আর

আগামী বছর থেকে পুজো করব না ঠিক করেছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Kharagpur Chhath Death Drowning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy