তালা বন্ধ অধিকাংশ বাড়ি। ছবি: দিগন্ত মান্না।
বছর কয়েক অন্তর একটি করে বিস্ফোরণ হয়। তার পরেই ঘরে তালা দিয়ে এলাকা ছাড়া হন বেআইনি বাজি কারবারে যুক্ত অধিকাংশ গ্রামবাসী। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। রবিবার রাতে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পরেই বেপাত্তা কোলাঘাটের পয়াগের ‘বান্ধার’ পাড়া'র লোকজন! ফলে সোমবার কার্যত খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে পুলিশকেও।
কোলাঘাটের পুলশিটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পয়াগের একটি অংশ ‘বান্ধার’ পাড়া নামে পরিচিত। বাজি বাঁধা থেকে ‘বান্ধার’ শব্দটি এসেছে। পয়াগ গ্রামের বাজির গুণগত মান এতটাই ভাল যে, এখানের বাজি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রফতানি হয়। কালীপুজো এবং সবেবরাত ছাড়াও বছর ভর বিয়েবাড়ি, পুজো ইত্যাদির জন্য বিপুল বরাত পান পয়াগের বাজির কারবারিরা। এখানে মূলত আতসবাজির পাশাপাশি, গাছ বোম, জল বোম এবং চকোলেট বোম তৈরি হত বলে অভিযোগ। ২০১৭ সালে পয়াগে বাজি বাঁধতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক মহিলা ও এক যুবকের। ২০২১ সালে নিতাই বেরা নামে এক ব্যক্তির বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। গুরুতর আহত হন নিতাই। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত দেড় দশকে পয়াগে একাধিক বাজি বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আপাতত বাজি তৈরির পেশা অনেকে পাল্টে নিলেও গ্রামের অন্তত ২৫টি পরিবার এখনও বেআইনি বাজি তৈরি করে বলে অভিযোগ।
দেউলিয়া-খন্যাডিহি গ্রামীণ সড়ক থেকে সরু ঢালাই রাস্তা ধরে আধ কিলোমিটার এগলেই পড়ে ‘বান্ধার পাড়া’। বর্ধিষ্ণু এই পাড়ার অধিকাংশ বাড়িঘর পাকা। এদিন এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, রবিবার বিস্ফোরণের পর রাতেই পাড়ার অধিকাংশ পরিবার বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে এলাকা ছাড়া হয়েছে। তালাবন্ধ অধিকাংশ বাড়ির কাছে পিঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাজি তৈরির অসংখ্য সামগ্রী। তবে বিস্ফোরণ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বাকি বাসিন্দারা। বান্ধার পাড়ার অদূরে নিজদের মধ্যে কথা বলছিলেন কয়েকজন মহিলা। সাংবাদিক দেখেই বন্ধ হয়ে যায় কথাবার্তা। বিস্ফোরণ কোথায় হয়েছে জিজ্ঞেস করায়, আঙুল দিয়ে পথ দেখিয়ে দিলেন। তবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
বিস্ফোরণের পর এলাকা দড়ি দিয়ে ঘিরে দেয় পুলিশ। রাত থেকেই বান্ধার পাড়ায় বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। তদন্তে কোলাঘাট থানার পুলিশ গিয়েছিল। তবে এলাকায় কাউকে না দেখতে ফিরতে হয়েছে পুলিশকে। কোলাঘাট থানার এক আধিকারিক জানান, গ্রামে কেউ নেই। সকলেই বাড়ি ছাড়া। বিস্ফোরণ নিয়ে কোনও অভিযোগও জমা পড়েনি। তাই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত করছে তারা।
বান্ধার পাড়া থেকে বেরিয়ে মূল রাস্তায় দিকে গেলে একটি চায়ের দোকানে বিস্ফোরণ নিয়ে আলোচনা চলছিল। সেখানে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এখন একটু চাপ যাবে। দু'দিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ পরিস্থিতি হয়তো থিতিয়ে যাবে কিছু দিন পরে। যেমন থিতিয়ে গিয়েছে ২০২৩ সালের এগরার খাদিকুল বাজি বিস্ফোরণ মামলা। ওই মামলায় চারজনকে সিআইডি গ্রেফতার করেছিল। তবে তারা জামিনে মুক্ত। আর সিআইডি চার্জশিট দিয়েছে বটে। তবে বাকি অভিযুক্ত এখনও ফেরার।
তাই গ্রামবাসীরাও নিশ্চিত পয়াগে আবার চলবে বেআইনি বাজি কারবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy