Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বন্যপ্রাণ রক্ষায় প্রশ্নচিহ্ন

আদিবাসীদের পরবে খুন বুনো শুয়োর

সোমবার ছিল আদিবাসীদের ‘করম’ পুজো। এই উপলক্ষে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় উৎসবে মেতে ওঠেন আদিবাসীরা।

মৃত বুনো শুয়োর। নিজস্ব চিত্র

মৃত বুনো শুয়োর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৮
Share: Save:

আদিবাসীদের শিকার উৎসবের আগে আগে বন্যপ্রাণ রক্ষার বিষয়ে সরকারি ভাবে প্রচার চালানো হয়েছিল বন দফতরের তরফে। কয়েক মাস আগে সেঁন্দরা পরবের আগে কোলাঘাট, পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন দফতরের উদ্যোগে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালানো হয়। তবুও শিকার আটকানো যায়নি। সেই সময় গোসাপ, পাখি শিকার করার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। কিন্তু তারপরেও ফের আদিবাসী শিকারিদের হাতে প্রাণ গেল বন্যপ্রাণীর। ফলে বন্যপ্রাণী শিকার নিষেধে বন দফতরের সচেতনতার প্রচার আদিবাসী সমাজের তৃণমূল স্তর পর্যন্ত যে পৌঁছয়নি এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করল।

সোমবার ছিল আদিবাসীদের ‘করম’ পুজো। এই উপলক্ষে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় উৎসবে মেতে ওঠেন আদিবাসীরা। তবে এই উৎসব উপলক্ষে কোনওরকম শিকারের রেওয়াজ না থাকলেও পুজোর পরের দিন শিকারে বের হয়েছিলেন ডেবরার সাকির্দা গ্রামের জনা পঞ্চাশেক আদিবাসী। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে সাকির্দা গ্রামে শিকারে বেরিয়ে পড়েন এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। একটি বুনো শুয়োর দেখতে পেয়ে সেটিকে তাড়া করে শিকারিরা। তাড়া খেয়ে শুয়োরটি মাঠ বরাবর ছুটতে শুরু করে। তার পিছনে হাতে লাঠি, বল্লম ও টাঙ্গি নিয়ে ধাওয়া করে শিকারিরা। শিকারিদের তাড়ায় প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বুনো শুয়োরটি চলে আসে পাঁশকুড়ার মাইশোরা বাজারের কাছে। শিকারিদের একটি দল বাইকে করে সেখানেও পৌঁছে যায়। তাদের হাতে ছিল অস্ত্র। মাইশোরায় একটি খালে পড়ে গিয়ে কাহিল হয়ে যায় শুয়োরটি। সেই সুযোগে ওই শিকারিরা তার মাথায় লাঠি মেরে ও পিঠে টাঙ্গির কোপ বসিয়ে তাকে মেরে ফেলে। এরপর একটি বাঁশে মৃত শুয়োরের পা বেঁধে সেটিকে বাইকে করে নিয়ে চম্পট দেয় তারা।

প্রকাশ্যে দিনের আলোয় এভাবে একটি বুনো শুয়োরকে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করেনি বলে অভিযোগ। অনুপম সামন্ত নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘বুনো শুয়োরটিকে মারতে মাইশোরা বাজারে জনা চল্লিশেক শিকারি এসেছিল। প্রত্যেকের হাতেই ছিল ধারাল অস্ত্র। ফলে স্থানীয় লোকজনদের কেউ ওদের কিছু বলতে সাহস করেনি।’’ পরে বুনোশুয়োর পিটিয়ে মারার খবর পেয়ে ছুটে আসেন পাঁশকুড়ার ডেপুটি রেঞ্জার অনির্বাণ মিত্র ও পাঁশকুড়া থানার পুলিশ। ততক্ষণে এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছে ওই শিকারিরা।

অনির্বাণবাবু বলেন, ‘‘ওই শিকারিরা পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থেকে এসেছিল। আমরা আসার আগেই ওরা এলাকা ছেড়ে চলে যায়।’’ তবে যে ভাবে একটি বন্যপ্রাণীকে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা তাড়া করে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল, তাতে বন্যপ্রাণ হত্যা নিয়ে সচেতনতার প্রচার নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিল।

পূর্ব মেদিনীপুরে এডিএফও বলরাম পাঁজা বলেন, ‘‘ঘটনা জানতে পেরে পাঁশকুড়ার রেঞ্জ অফিসারকে ঘটনাস্থলে যেতে বলি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বনাধিকারিক সন্দীপ বেরওয়াল বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Wildlife Wild Pig Adivasi People
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy