কোকোকে বাঁচানোর চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র ।
রান্নার জায়গায় বিষধর সাপ। ক্ষতি হতে পারে মনিবের। পোষ্য দুই পথকুকুর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সাপের উপর। দু’জনের শরীরই বিষিয়ে গিয়েছিল। মনিব গিয়েছিলেন বাইরে। ফিরে এসে তিনি দেখেন, নেতিয়ে পড়েছে তাঁর দুই পোষ্য। একজনকে বাঁচানো গেলেও। মৃত্যু হয়েছে আরেকজনের।
খড়্গপুরের হিজলির বাসিন্দা সুচরিতা সিংহ পেশায় গৃহশিক্ষক। বিবাহিত ওই তরুণী বরাবরই পশুপ্রেমী। বছর দেড়েক আগের কথা। তাঁর বাড়ির সামনে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন দুই সদ্যোজাত পথ কুকুরকে। তাদের তুলে এনেছিলেন ঘরে। নাম রেখেছিলেন কোকো ও পেপসি। সাধ্যমতো যত্নআত্তির করতেন। পাছে পড়শিরা কিছু বলে সে জন্য নিজের বাসস্থানের চৌহদ্দির মধ্যেই দুই পোষ্যকে রাখতেন সুচরিতা। কোকো ও পেপসিও মনিব বলতে অজ্ঞান। রবিবার সুরচিতা গিয়েছিলেন রেশনের জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে। ফিরে এসে তিনি দেখেন, রান্নাঘরে অসুস্থ হয়ে পড়ে দু’জন। প্রথমটায় সুচরিতা ঠাওর করতে পারেননি কী হয়েছে। পশুপ্রেমী হওয়ার সুবাদে কিছুটা পরিচিতি ছিল তাঁর। মেদিনীপুরের একটি পশুপ্রেমী সংস্থাকে খবর দেন তিনি। সংস্থার হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন শিবু রাণা, দেবরাজ চক্রবর্তী প্রমুখ পশুপ্রেমী। দুই পথকুকুরের শরীরে ক্ষত দেখে তাঁরাই জানান, বিষধর সাপে ছোবল মেরেছে তাদের। চিকিৎসা শুরু হলেও কোকোকে বাঁচানো যায়নি। শিবু বলছেন, ‘‘মনিবকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে পোষ্যটি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কুকুর কতটা প্রভুভক্ত প্রাণী, তা ফের প্রমাণিত। প্রাণ দিয়ে আরও একবার এটা প্রমাণ করে গেল পোষ্যটি।’’
সুচরিতার কথায়, "আমি যেখানে রান্না করি রোজ, সেখানেই ঘটনাটি ঘটেছে। ওই কুকুরটি সাপের ছোবল খেয়েছে। ঘটনার সময় অবশ্য আমি ওখানে ছিলাম না। রেশন আনতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, ওর এই অবস্থা। চিকিৎসা শুরু করা হয়েছিল। তবে চেষ্টা করেও কুকুরটি বাঁচাতে পারলাম না। মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে।" সুচরিতা জানাচ্ছেন, এর আগে তাঁর প্রাণ রক্ষায় কোকো খরিস সাপ মেরেছিল। একবার নয়, দু'- দু'বার। কেন বাঁচানো গেল না কোকোকে? শিবু বলছেন, ‘‘এভিএস পাওয়া যায়নি। চেষ্টা করেও কুকুরটিকে বাঁচাতে পারিনি।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, শিবুরা এভিএস (জলাতঙ্কের প্রতিষেধক) আনতে গিয়েছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। পশু চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এভিএস প্রয়োগ হয় মানবদেহে। পশুর দেহে নয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবে মেডিক্যাল থেকে এভিএস পাননি তাঁরা। তা হলে পশুকে সাপে ছোবল দিলে কী ভাবে তাদের চিকিৎসা হয়? পশু চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। সাধারণত স্যালাইন দেওয়া হয়। কিছু ওষুধ আছে। তবে নিয়মে না থাকলেও মানব দেহে প্রয়োগযোগ্য এভিএস কখনও কখনও দেওয়া হয় কুকুরকে। তাতে ফলও মেলে। মেদিনীপুরের পশু হাসপাতালের চিকিৎসক সত্যেন্দ্রনাথ দাস বলেন, "পশুর জন্য অ্যান্টিভেনম হয় না সেই অর্থে।" রান্নাঘরে হয়েছিল লড়াই। মনিব ঘরে নেই তো কী হয়েছে। শত্রুরা তো মনিবের ক্ষতি করতে পারে যে কোনও সময়। কোকো, পেপসি প্রাণপণ লড়েছিল চন্দ্রবোড়ার সঙ্গে। সে লড়াইয়ে গঙ্গাপ্রাপ্তি হয়েছে কোকো আর চন্দ্রবোড়ার। পেপসি আঁকড়ে কোকোর শোক ভুলতে চাইছেন সুচরিতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy