Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ছ’বছরেও হয়নি কলেজ, ভরসা তাই পাশের জেলা

৭৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন কোলাঘাটের হৃদি জৈন। তাঁর বিষয় ছিল বাণিজ্য। বাড়ির কাছেই রয়েছে রবীন্দ্রভারতী মহাবিদ্যালয় কলেজ রয়েছে।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৬:৪৩
Share: Save:

৭৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন কোলাঘাটের হৃদি জৈন। তাঁর বিষয় ছিল বাণিজ্য। বাড়ির কাছেই রয়েছে রবীন্দ্রভারতী মহাবিদ্যালয় কলেজ রয়েছে। কিন্তু সেখানে পড়তে পারবেন না হৃদি। ওখানে তো বাণিজ্য বিভাগটিই নেই। ফলে বাধ্য হয়েই হিসাবশাস্ত্রে স্নাতকের জন্য হৃদিকে আবেদন করতে হয়েছে ৩০ কিলোমিটার দূরের বাগনান কলেজে। হৃদি বলেন, ‘‘বাড়ির কাছে কলেজ থাকলেও পড়ার সুযোগ নেই।’’

সমস্যাটা শুধু হৃদির নয়, শুধু কোলাঘাটেরও নয়। বস্তুত উচ্চ-মাধ্যমিক পাশের পর কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বহু পড়ুয়া। উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে রাজ্যে মধ্যে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুর। কিন্তু তারপর ভাল ফল করা পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ জেলার কলেজে ভর্তি হতে পারেন না। সেই পরিকাঠামোটাই যে নেই। অথচ জেলায় কলেজের অভাব তেমন নেই। পুরনো কলেজগুলি তো রয়েছেই। গত কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন কলেজও তৈরি হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগই পরিকাঠামোগত নানা সমস্যায় জর্জরিত।

কোলাঘাট ব্লকে রবীন্দ্রভারতী মহাবিদ্যালয় শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। তারপর কেটেছে ছ’টি বছর। আজও নিজস্ব ভবন তৈরি হয়নি। প্রথমে কোলাঘাটের বড়িশা এলাকায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে কলেজ চালু হয়েছিল। পরে ২০১২ সাল নাগাদ কোলাঘাট শহরের মধ্যে কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলে ওই কলেজ স্থানান্তরিত হয়। সে‌ই থেকে তেমনই চলছে কলেজের পঠনপাঠন। স্কুলের কয়েকটি ঘরেই প্রতিদিন কলেজ বসে। সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে ১০ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কলেজের ক্লাস চলে। যেখানে পড়তে আসেন কোলাঘাটের বাইরে শহিদ মাতঙ্গিনী, পাঁশকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ব্লকের একাংশের ছাত্রছাত্রীরা। কলেজের ৭৫ শতাংশই ছাত্রী। প্রথম বছর মাত্র ৫২ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে কলেজ শুরু হলেও এখন সেই সংখ্যাটা ৭০০। কিন্তু এখানে পড়ানো হয় শুধু কলা বিভাগের বাংলা, ইংরাজি, ইতিহাস, এডুকেশন, ভূগোল, সংস্কৃত বিষয়ে অনার্স ও পাস কোর্স এবং সমাজবিজ্ঞানে শুধু পাস কোর্সে পড়ার সুযোগ রয়েছে।

ফলে বিজ্ঞান বা বাণিজ্য বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা পড়ার সুযোগ পান না। তাই বাধ্য হয়েই কয়েকশো ছাত্রছাত্রীকে জেলা অন্যত্র এমনকী জেলার বাইরেও যেতে হয় পড়ার জন্য। কেউ কেউ থেকে যান কলেজের আবাসিক ছাত্র হিসাবে। সে সুযোগও মেলে না অনেক সময়। বাধ্য হয়ে আলাদ ঘর ভাড়া নিয়েও থেকে যেতে হয়।

ছ’বছর আগের একটি কলেজে এখনও কেন পরিকাঠামো চালু হল না?

জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে পূর্ব পাঁশকুড়ার তৎকালীন সিপিএম বিধায়ক অমিয় সাহুর উদ্যোগে কোলাঘাটে ওই কলেজ চালু হয়েছিল। কলেজ ভবনের জন্য আমলহান্ডা এলাকায় জমি চিহ্নিত করাও হয়ে গিয়েছিল। বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে ৫৪ লক্ষ টাকা এসেছিলেন। কিন্তু রাজ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সব অদল বদল হয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই কলেজের পরিচালন সমিতির নিয়ন্ত্রণ এখন তৃণমূলের হাতে। নতুন পরিচালন সমিতি আমলহান্ডায় কলেজ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করে।

তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত পরিচালন সমিতির দাবি, নতুন ভবনের জন্য কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উপনগরীতে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। সে জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম লিমিটেডের কাছে আবেদনও কর হয়। কিন্তু জমি এখনও কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে আসেনি। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি সন্দীপ রায়চৌধুরীর দাবি, ‘‘কলেজ ভবনের জন্য প্রথমে যে জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল তাঁর অবস্থানগত কিছু সমস্যা ছিল। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উপনগরীতে একটি জায়গা চিহ্নিত করে তা পাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আশকরি শীঘ্রই ওই জমি পাওয়া যাবে।’’

সমস্যা শুধু নিজস্ব ভবনের নয়। পড়ুয়ারাই জানিয়েছেন, কলা বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হলেও স্থায়ী শিক্ষক নেই। গোটা কলেজে এখনও মাত্র দু’জন স্থায়ী, চার জন আংশিক সময়ের ও ১২ জন অতিথি শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। ছ’জন অশিক্ষক কর্মী ও দু’জন অস্থায়ী কর্মী ও একজন আংশিক সময়ের সাফাই কর্মী রয়েছেন।

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শিক্ষাবর্ষে অনার্স ও পাস কোর্স মিলিয়ে ৪০১ জন ছাত্র-ছাত্রী এই কলেজে ভর্তি হয়েছিল। চলতি বছরে কলেজে অনলাইনে মোট ১৪০১ টি আবেদন জমা পড়েছে। বুধবারই কলেজে ভর্তির জন্য মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদীপ্ত সর্দার বলেন, ‘‘স্থানাভাবে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগ চালু করা যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা তো নিরুপায়।’’ কলেজের সমস্যার কথা স্বীকার করে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি সন্দীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কলেজের নিজস্ব ভবন না থাকায় বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখা খোলার জন্য বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন করতে পারছি না। তবে আরও শিক্ষক নিয়োগের জন্য অবশ্য আবেদন করা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

colleg district
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy