Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
যানজটে হাঁসফাস বালিচক

চার বছরেও তৈরি হয়নি উড়ালপুল

শিলান্যাসের পর চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আজও আলোর মুখ দেখেনি বালিচক উড়ালপুল। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাও়ড়া-খড়্গপুর শাখার বালিচক স্টেশনের গা ঘেঁষে গিয়েছে ডেবরা-সবং রাস্তা। ব্যস্ততম এই রেলপথে দিনে অনেক ট্রেন চলাচল করে। ফলে প্রায়ই বন্ধ থাকে রেলগেট।

বালিচক রেলগেটে লরির দীর্ঘ লাইনে নিত্য যানজটের শিকার বাসিন্দারা।ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

বালিচক রেলগেটে লরির দীর্ঘ লাইনে নিত্য যানজটের শিকার বাসিন্দারা।ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০০:২২
Share: Save:

শিলান্যাসের পর চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আজও আলোর মুখ দেখেনি বালিচক উড়ালপুল।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাও়ড়া-খড়্গপুর শাখার বালিচক স্টেশনের গা ঘেঁষে গিয়েছে ডেবরা-সবং রাস্তা। ব্যস্ততম এই রেলপথে দিনে অনেক ট্রেন চলাচল করে। ফলে প্রায়ই বন্ধ থাকে রেলগেট। ব্যস্ত সময়ে রেলগেটের দু’দিকে দীর্ঘ গাড়ির সারির ছবি নিত্যদিনের। যানজটে দুর্ভোগ কমবে কবে, জানতে চায় স্থানীয়রা।

যানজট কমাতে দীর্ঘদিনের দাবি মেনে বালিচক রেলগেটে উড়ালপুল তৈরির সিদ্ধান্ত হয় ২০১১ সালে। রেল ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই উড়ালপুল তৈরি হবে বলে ঠিক হয়। ২০১২ সালে মুকুল রায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ওই উড়ালপুলের কাজের অনুমোদনও হয়ে যায়। ওই বছরই ৪ জুন ডেবরার হরিমতি হাইস্কুল ময়দানের সভা থেকে উড়ালপুলের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পরিষ্কার আকাশ দেখেই বাড়ি থেকে মোটরবাইকে বেরিয়েছিলেন পিংলার বাসিন্দা সুশান্ত নায়েক। খড়্গপুরের বসন্তপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। যাওয়ার পথে বালিচক রেলগেট বন্ধ দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন। তারপর দীর্ঘক্ষণ রেলগেটে দাঁড়িয়ে ভোগান্তি। সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেও গেলেন তিনি। বাড়ি ফিরে যেতে হল তাঁকে। সুশান্তবাবু বলছিলেন, “এই বালিচক রেলগেটে কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টিতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছি। বাইকের পিছনেও গাড়ির সারি থাকায় ফির যেতেও পারি না। এই কষ্ট কবে লাঘব হবে জানিনা।’’

উড়ালপুলের কাজে সমস্যা কোথায়?

জমিজটের কারণেই উড়ালপুলের কাজ আটকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। রেল লাইনের ওপরের অংশে উড়ালপুলের কাজ করার কথা রেলের। তবে উড়ালপুলের দু’দিকে ওঠার সংযোগকারী রাস্তা গড়ার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। ডেবরা-সবং রাস্তার ধারে বালিচক বাজার এলাকায় রায়ত জমিতে অনেক দোকানপাট রয়েছে। প্রথম দিতে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় জেলা পরিষদের মাধ্যমে জমি সরাসরি কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

গত বছর ৫ মে বালিচকে এ নিয়ে এক প্রশাসনিক বৈঠকও হয়। পরে সংবাদপত্রে নির্দিষ্ট জমির জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পূর্ত দফতরের অভিযোগ, এরপরেও জমির মালিকেরা আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেননি। যদিও বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির দাবি, জমির জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও জমিদাতাদের বুঝিয়ে জমি কেনার জন্য কোনও আলোচনা করেনি পূর্ত দফতর। তাই অনেকে সবকিছু বিস্তারিত না জেনে জমি দিতে প্রাথমিক ভাবে রাজি ছিলেন না। পরে কয়েক মাস ধরে কমিটির উদ্যোগে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জমিদাতাদের বাড়িতে গিয়ে বোঝানো হয়। এরপরে জমিদাতাদের অনেকেই জমি দিতে চান। যদিও এরপরেও নানা টালবাহানায় কাজ আর এগোয়নি বলে অভিযোগ। বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলছেন, “উড়ালপুল গড়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দফতরে ঘুরেছি। সর্বত্র আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনও সুফল পাইনি। যতক্ষণ না উড়ালপুল হচ্ছে, ততদিন লড়াই চলবে।”

গত ফেব্রুয়ারি মাসে উড়ালপুলের জমি নিয়ে জমিদাতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পরেও উড়ালপুলের কাজ শুরু হয়নি। যদিও অনেক আগেই নিজেদের অংশের নকশা করে রাজ্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের ডিআরএম রাজকুমার মঙ্গলা বলেন, “বালিচকে রেলের উড়ালপুলের জন্য আমাদের সমস্ত কাজ শেষ। রাজ্যের জমি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকায় কাজ আটকে রয়েছে।”

প্রশ্ন উঠছে, জমিদাতারা রাজি হওয়ার পরেও কেন রাজ্য সরকার জমি কেনার কাজ শুরু করতে পারল না। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, রাজ্য নতুন করে উড়ালপুলের নকশা তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। এমনকী জমি না কিনে যাতে উড়ালপুলের কাজ করা যায় সে বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করছে পূর্ত দফতর। এ নিয়ে বিডিও জয়ন্ত দাস বলেন, “নির্বাচনের আগে বৈঠক করেছিলাম। তারপরে পূর্ত দফতর আর কোনও যোগাযোগ করেনি। নির্বাচনের কারণে কিছুই হয়নি। এ বার আবার আলোচনা শুরু করতে হবে।” জেলা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “জমি না কিনে কী ভাবে ওই উড়ালপুলের কাজ করা যায় সেটা দেখা হচ্ছে। জমি জরিপের কাজ চলছে। নির্বাচনের কারণে সময় দিতে পারিনি। এ বার বিষয়টি দেখব।”

অন্য বিষয়গুলি:

flyover jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE