কোলাঘাটে প্রশাসনিক সভায় মধ্যমণি মুখ্যমন্ত্রী। রয়েছেন মন্ত্রী-আমলা-সাংসদ-বিধায়করাও। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
তমলুক, হলদিয়ার মতো কোলাঘাট-মেচেদাকে নতুন পুরসভা করার কথা আগেই ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। এ বার আরও একধাপ এগিয়ে হলদিয়া, তমলুক, মহিষাদল, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রাম, কোলাঘাট এলাকাকে নিয়ে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বা পুরনিগম গড়ার কথা জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপনগরীর ফুটবল মাঠে এ দিন প্রশাসনিক সভা করেন তিনি। পরে বলাকা মঞ্চে হয় প্রশাসনিক বৈঠক। তারপর সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হলদিয়া, তমলুক, নন্দকুমার, মহিষাদল, চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রাম থেকে একেবারে কোলাঘাট পর্যন্ত এলাকা নিয়ে যাতে একটা বড় মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন করা যায় তা নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পুর দফতরের সচিব পর্যালোচনা করছেন।” মুখ্যমন্ত্রীর মতে, ছোট ছোট পুরসভা হলে তাঁর পরিকাঠামো দুর্বল হয়। ফলে কাজ করতে অসুবিধা হয়। সে জন্যই ছোট ছোট পুরসভাগুলিকে নিয়ে পুরনিগম গড়ার জন্য পর্যালোচনা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এ বারের সফরে পূর্ব মেদিনীপুরের নতুন প্রাপ্তির তালিকায় এই পুরনিগম গড়ার ঘোষণাই অন্যতম। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে আশার আলো দেখছেন প্রস্তাবিত পুরনিগম এলাকার বাসিন্দারা। জেলা সদর তমলুক পুরসভা দেড়শো বছরের পুরনো, আর শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত হলদিয়া পুরসভার বয়স মাত্র ১৭ বছর। তমলুক ও হলদিয়া এই দুই পুরসভার সঙ্গে কোলাঘাট-মেচেদাকে নতুন পুরসভা হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা করা হয়েছে কিছু দিন আগেই। মহিষাদল পুরসভা গড়ার দাবিও দীর্ঘদিনের। এই অবস্থায় হলদিয়া, তমলুকের সঙ্গে মহিষাদল, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রাম, কোলাঘাট-মেচেদা নিয়ে নতুন পুরনিগম গড়া হলে এলাকার সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নতি হবে বলে আশা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পুরসভায় উন্নীত হলে যেমন এলাকার রাস্তাঘাট, পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ-সহ নানা বিষয়ে পরিকাঠামো ও পরিষেবার উন্নতি হবে বলে নাগরিকরা আশা করেন, কিছু ক্ষেত্রে সংশয়ও রয়েছে তাঁদের। নন্দীগ্রামের কেন্দেমারির বাসিন্দা মনোজ দাস বলেন, “আমাদের এলাকা দীর্ঘদিন ধরে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের আওতায় রয়েছে। কিন্তু সে ভাবে উন্নয়নের কাজ হয়নি। পুরনিগম হলে প্রতিশ্রুতিমতো উন্নয়ন হবে কিনা সংশয় রয়েছে।” হলদিয়া পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৌমিক সেনগুপ্ত জানালেন, হলদিয়া পুরসভা হওয়ার পর ১৭ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও এলাকার রাস্তাঘাট, নিকাশি-সহ বিভিন্ন পরিষেবা বেহাল। অবস্থার উন্নতি কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয়ে হলদিয়াবাসী।
তমলুক পুর-এলাকার বাসিন্দা জয়দেব মাজী, মহিষাদলের গড়কমলপুরের বাসিন্দা শিক্ষক সৌরভ ভুঁইয়াও মানছেন, শুধু পুরনিগম গড়ে লাভ নেই, দরকার পরিষেবার মানোন্নয়ন। জয়দেববাবুর কথায়, “পুরসভা হিসেবে দেড়শো বছর পার হলেও তমলুক শহরের পরিকাঠামো বেহাল। আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী যে উদ্দেশ্য নিয়ে পুরনিগম গড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন, তা যেন পূরণ হয়।” চণ্ডীপুরের বাসিন্দা শান্তনু বেরা আবার তাঁর এলাকা কোনও দিন পুরনিগমের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে ভাবেননি। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে তিনি আশার আলো দেখছেন। কোলাঘাটের বড়িশা এলাকার বাসিন্দা অনুপ দাস আবার বলেন, “কোলাঘাট-মেচেদা পুরসভা হবে আগেই জেনেছিলাম। আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট, পানীয় জলের ব্যবস্থা, নিকাশি ব্যবস্থা ভাল নয়। পুরনিগম হলে এ সবের হাল ফিরবে বলে আশা করছি।”
পুরনিগম গড়ার প্রতিশ্রুতি ছাড়াও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জেলার পাঁশকুড়ায় পানীয় জল প্রকল্পের জন্য ১৮৬ কোটি টাকার কাজের শিলান্যাস ও ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়নায় কাঁসাই নদীর উপর সেতুর আপ্রোচ রোডের শিলান্যাস করেন। প্রশাসনিক বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, দিঘা সীমানার সমস্যা সমাধানে ওড়িশা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, একশো দিনের কাজ-সহ গরিব মানুষের বিভিন্ন প্রকল্পে কোনও দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। তাঁর কথায়, “ঘুষ নিয়ে কাজ করা যাবে না। কোনরকম অন্যায় দেখলে আমি অ্যারেস্ট পর্যন্ত করাতে পারি।” এ দিনের প্রশাসনিক সভায় জেলার দুই সাংসদ শিশির ও শুভেন্দু অধিকারী এবং বিধায়করা উপস্থিত ছিলেন। কিছু দিন আগে জেলায় তৃণমূলের দলীয় এক বৈঠকে শিশির অধিকারীর উপস্থিতিতে বিধায়ক অখিল গিরি, শিউলি সাহাকে দলেরই একাংশ হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। শিশিরবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে বৈঠক ছেড়েছিলেন অখিলবাবু। এ দিন সকলকেই মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চে বসে থাকতে দেখা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy