প্রচারে মিঠুন।
তারকা প্রার্থীদের সমর্থনে পশ্চিম মেদিনীপুর মাতালেন আর এক তারকা। মঙ্গলবার জেলার তিনটি এলাকায় তৃণমূলের তরফে পৃথক তিনটি সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেগুলি হল গোপীবল্লভপুর, কলাইকুন্ডা এবং দাসপুরের সোনাখালিতে। এই তিন সভাতেই হাজির থেকে তৃণমূলকে বিপুল ভোটে জয়ী করার আবেদন জানালেন অভিনেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তী। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও।
প্রথম সভা ছিল গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের ছাতিনাশোল তরণ সঙ্ঘের মাঠে। প্রবল রোদ উপেক্ষা করেও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ দিন সভায় হাজির হয়েছিলেন প্রায় হাজার পঁচিশেক মানুষ। দুপুর দু’টো নাগাদ ধুলো উড়িয়ে মাঠে নামে হেলিকপ্টার। জনতার দিকে হাত নাড়তে নাড়তে মঞ্চে ওঠেন মিঠুন চক্রবর্তী ও মদন মিত্র। মঞ্চে তখন ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা প্রমুখ। তবে যাঁর সমর্থনে এ দিন গোপীবল্লভপুরের এই সভা, সেই তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেন হাজির ছিলেন না। দলীয় সূত্রে খবর, এ দিন বেলপাহাড়িতে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
মেদিনীপুরের প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে ।
এ দিনের সভায় প্রথম বক্তৃতা রাখেন মদন মিত্র। সারদা কাণ্ড ঘিরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁর তোপ, “রোজ সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর সময় দু’টো কথা শুনে বেরোতে হয়। কোথায় যাচ্ছেন বলুন আর এ বার ইডি কি আপনাকে ডাকবে?” এই প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজে দিয়েই বলেন, “কিন্তু এখনও তো ইডির ডাক পেলাম মা। দিল্লি জেনে রাখুন, আপনাদের যেমন ইডি আছে। আমাদের তেমন ডিডি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আছেন।” সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের বিষয়ে তাঁর কটাক্ষ, “নেতাই, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর সবেতেই সিবিআই তদন্ত করেছে। নোবেল চুরিতেও সেই সিবিআই। সব শেষে তারা বলেছে আমরা পারব না। আমি সিআইডিকে অভিনন্দন জানাই। তারা অন্ধ্রপ্রদেশের জঙ্গল থেকে নেতাইয়ের পাঁচ হার্মাদকে গতকাল গ্রেফতার করেছে।” নির্বাচন কমিশনকেও একহাত নিয়ে মদনবাবু বলেন, “পারলে পুরো ফোর্স পাঠিয়ে দিন জঙ্গলমহলে। আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ নিলাম, ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে আমরা ৩ লক্ষ ভোটে জিতব।” তিনি আরও বলেন, “সি পিএম কী ভাবে ভোট করেছিল মনে আছে তো? এ বার সেই ভাবে ভোট করাতে হবে। কাল নির্বাচন কমিশন বলবে মদন মিত্র ভোট লুঠের কথা বলেছে। তা হলে কি বামেরাও এত দিন ভোট লুঠ করেছে? তবে বলে রাখলাম, আগামী ২৫ বছর জঙ্গলমহলে বামেদের ঢোকার রাস্তা নেই।”
এরপরই বক্তৃতা শুরু করেন মিঠুন চক্রবর্তী। নায়কোচিত ভঙ্গীতে জনতা উদ্দেশে তুই, তুমি সম্বোধন করে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, “সবাই মিলে ভোট কাটাকুটির গেম খেলছে। এমনভাবে রাজনীতি করুন যাতে পশ্চিমবঙ্গের ভাল হয়।” নিজের রাজনীতিতে যোগদান প্রসঙ্গে এ দিন তিনি বলেন, “এখনও প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যেতে চাই না। তবে বরাবরই বাংলার জন্য ভাল কাজের কথা বলতাম।এখন দিদির সঙ্গে সারা বাংলা ঘুরছি। অপপ্রচারে কান দেবেন না। উমাকে জিতিয়ে তৃণমূলের ভোটের পাল্লা ভারী করুন।”
এরপর দুপুর ৩টে ১৫ নাগাদ কলাইকুন্ডার সভায় পৌঁছান তাঁরা। সেখানেও মোদীকে আক্রমণ করে মদন মিত্র বলেন, “গত পরশু একটা লোক এসেছিল। সে একসময় চা বিক্রি করত। চা ওয়ালাদের আমি সম্মান করি। কিন্তু ওই মোদী যা বলে গিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের কোনও চা ওয়ালা ও’রকম নোংরা কথা বলেন না।” এরপরই মোদীকে তাঁর চ্যালেঞ্জ, “ক্ষমতা থাকলে আবার পশ্চিমবঙ্গে আসুন। আমি ১০ কোটি লোক দিয়ে ঘিরে রেখে দেব। তার জন্য জেলে যেতে হলেও রাজি আছি।”
সর্বশেষ সভাটি হয় দাসপুরের সোনাখালিতে। সোনাখালি হাইস্কুল মাঠে সাড়ে চারটে নাগাদ সভা শুরু হয়। আগের দু’টো সভার জের টেনে এখানেও বামেদের কটাক্ষ করে মদন মিত্র বলেন, “আগে প্রচারে বেরোত গৌতম দেব, আর এখন বুদ্ধ। উনি বলেছেন মমতা সারদার প্রতীক। উনি ঠিকই বলেছেন মমতা সারদার প্রতীক, তবে চিটফান্ডের নয়, মা সারদা।” কুণাল ঘোষ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “উনি বলছেন আমি নাকি সারদার সব জানি। আরে, আমি সব জানলে আমাকে জেলে পোরা হত। তাহলে ও জেলে পচছে কেন? দোষীর শাস্তি হবেই। আমার দল কাউকে রেহাই দেয়না।” দেবের সমর্থনে এই সভায় মিঠুন বলেন, “দেব আমার ছেলের মতো। আমার বিশ্বাস দেব ৫ লক্ষ ভোটে জিতবে।” এমনকী দেব ভোটে জিতলে আবার ঘাটালে আসার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। এ দিনের সভায় হাজির ছিলেন ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই, দাসপুরের বিধায়ক মমতা ভুইঁয়া প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন দাসপুর-২ ব্লকের সভাপতি তপন দত্ত।
কলাইকুন্ডায় রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy