Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

বেনোজল রুখে সংগঠন তৈরিতে জোর বিজেপির

লোকসভায় বিজেপির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে মেদিনীপুরের এক দলছুট বাম নেতা বিজেপিতে যোগ দিতে চান। সাংগঠনিক দায়িত্বও পেতে চান। তবে এখনই তাঁকে দলে নিতে চাইছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের মত, দলছুট ওই বাম নেতাকে দলে নিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। কারণ, ওই নেতার ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০১:১৪
Share: Save:

লোকসভায় বিজেপির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে মেদিনীপুরের এক দলছুট বাম নেতা বিজেপিতে যোগ দিতে চান। সাংগঠনিক দায়িত্বও পেতে চান। তবে এখনই তাঁকে দলে নিতে চাইছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের মত, দলছুট ওই বাম নেতাকে দলে নিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। কারণ, ওই নেতার ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এটা একটা উদাহরণ মাত্র। জলের মতো বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রবণতায় রাশ টানতে এ বার পদক্ষেপ করতে শুরু করল বিজেপি। দলীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে দলের জেলা নেতৃত্ব ব্লক এবং শহর নেতৃত্বের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন, ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন নয়, এমন কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। জেলা নেতৃত্বের অনুমোদনও নিতে হবে। দলীয় সূত্রে খবর, খুব বড় রকমের সামাজিক অপরাধ এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকলে কোনও দলছুট নেতা-কর্মীকে দলে ঠাঁই না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি।

বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলার সর্বত্রই বিভিন্ন দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার একটা প্রবণতা এখনও চলছে। চন্দ্রকোনা-কেশপুরের মতো এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ আমাদের দলে আসতে চাইছেন। নানা ভাবে যোগাযোগও করছেন। এ ক্ষেত্রে আমরা ভাবমূর্তির বিষয়টিতে প্রাধান্য দিয়েছি। অন্য দল ছেড়ে যাঁরা আসতে চাইছেন, ভাবমূর্তি সন্তোষজনক না-হলে তাঁদের দলে জায়গা দেওয়া হবে না।” কেন্দ্রে সরকার বদলের পরপরই কী এতটা কড়া অবস্থান দলের ছিল? তুষারবাবুর বক্তব্য, “গোড়ার দিকে হয়তো কিছু শিথিলতা ছিল। তবে এ বার আর তা থাকবে না।”

বিজেপির অন্য এক জেলা নেতার কথায়, “সংগঠন বৃদ্ধির সময়ে বেনোজল ঢোকেই। একে আটকানোও কঠিন। তবু যতটা সম্ভব বেনোজল আটকানোর চেষ্টা চলছে। এটা ঠিক, ক্ষেত্র বিশেষে কিছু সময় রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সমঝোতা করতেই হয়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রাথমিক সদস্যপদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু বিধিনিষেধ চালু করা হয়েছে।” ঠিক কী ভাবে বাড়ছে বিজেপি? দলের এক সূত্রের দাবি, গত দেড় মাসে জেলায় বিজেপির প্রায় ১০ হাজার প্রাথমিক সদস্য বেড়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সংখ্যাটা তিনগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। সেই মতোই সংগঠন গোছানোর কাজ চলছে বলে দলীয় সূত্রে খবর।

পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় বিজেপির সংগঠন সে ভাবে মজবুতই ছিল না। কার্যত বিনা সংগঠনেই এ বার লোকসভায় গড়ে ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলেই দলের ভোট বেশি বেড়েছে। অবশ্য নেতৃত্বের দাবি, গ্রামাঞ্চলে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। সর্বত্র অবাধ ভোট হলে শহরাঞ্চলের মতো গ্রামাঞ্চলেও দলের সমর্থন একই ভাবে বাড়ত।

লোকসভা ভোটে দলের সাফল্যের পর অনেকেই বিজেপিতে আসতে চাইছেন। তবে যুবকর্মীদের বিজেপিতে যোগদানের প্রবণতাই বেশি। ইতিমধ্যে অন্য দলে ভাঙনও ধরিয়েছে গেরুয়া-শিবির। দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের অন্তরা ভট্টাচার্য। কিন্তু, মেদিনীপুরের ওই দলছুট বাম নেতাকে এখনই দলে নিতে চাইছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। অন্তরাদেবীর বেলায় অবশ্য বিজেপি নেতৃত্বের কোনও আপত্তিই ছিল না।

বস্তুত, দলে বেনোজল ঢুকতে শুরু করলে আগামী দিনে লোকসভার সাফল্য যে ধরে রাখা কঠিন, তা ভালই বুঝছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। রাজনৈতিক শিবিরের মত, সে কারণেই জেলার সর্বত্র সংগঠনকে শৃঙ্খলায় বাধার বার্তা দেওয়া হয়েছে। দলের এক সূত্রে খবর, সংগঠন বৃদ্ধির জন্য এ বার কেশপুরের দিকে নজর দিচ্ছে বিজেপি। চলতি মাসেই কেশপুরের কর্মীদের নিয়ে মেদিনীপুরে এক বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন দলের জেলা সভাপতিও।

বিজেপি নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপাতত কাউকে ব্লকের দায়িত্ব দেওয়া হবে না। ওই বৈঠকে আলোচনার প্রেক্ষিতে এক-একজনকে এক-একটি অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে অঞ্চল নেতাদের মধ্যে থেকেই কাউকে ব্লকের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

organization bjp barunda medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE