দাঁতনের নিমপুরে বিজেপির প্রতিনিধিদল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ
পক্ষপাতদুষ্ট পুলিশ বেছে বেছে বিজেপি সমর্থকদেরই গ্রেফতার করছে। আর, অভিযোগ জানানোর পরেও বহাল তবিয়তে ঘুরছেন তাঁদের উপরে হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বুধবার দাঁতনের চকইসমাইল অঞ্চলের নিমপুরে গিয়ে এমনই অভিযোগ তুলল বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্ব। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি, আক্রান্ত তাঁরাই। পুলিশ বলছে, তাঁদের ভূমিকা নিরপেক্ষই।
নিমপুরে পৌঁছে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিজেপির প্রতিনিধিরা অভিযোগের সুরে বলেন, শুক্রবার দাঁতন থেকে মাখড়া কাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিল সেরে ফেরার পথে দলীয় কর্মী অশ্বিনী পাত্রকে মারধর করে তৃণমূল সমর্থকেরা। শনিবার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি নবকুমার মহাপাত্র, কালিচরণ পাত্র-সহ ১৯ জনের নামে অভিযোগ জানান বিজেপি কর্মী, প্রহৃত অশ্বিনীবাবুর বোন আরতি পাত্র। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। বরং ‘ভুয়ো’ অভিযোগে দলের দুই কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ দিকে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, শুক্রবার বিকেলে দলীয় বৈঠকে যাওয়ার পথে বিজেপির কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হন দলের অঞ্চল সভাপতি নবকুমার মহাপাত্র। রাতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে অশ্বিনী পাত্র, অশোক পাত্র-সহ ১১ জন বিজেপির নেতা-কর্মীর নামে অভিযোগ হয়। এই উদাহরণ তুলে বিজেপি নেতৃত্ব বলছেন, তৃণমূলের অভিযোগের ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই গ্রেফতার হন দলের কর্মী বিভূতি পাত্র ও ভবেশ প্রামাণিক। অথচ তৃণমূলের ১৯ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগে ঘটনার পাঁচ দিন পরেও কাউকেই ধরেনি পুলিশ। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাবলু বরম বলছেন, “পুলিশ পক্ষপাতদুষ্ট। এই ঘটনাই তার প্রমাণ।” পুলিশ অবশ্য ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তের দাবি করেছে।
বুধবার এগরা-সোলপাট্টা সড়কের নিমপুর বাসস্ট্যান্ড ধরে দক্ষিণ দিকের মোরাম রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গ্রামে ঢুকতেই দেখা গেল পুলিশ টহল দিচ্ছে। রাস্তাঘাট কার্যত জনশূন্য। জেলা সাধারণ সম্পাদক বাবলু বরম, রাজ্য বিজেপির যুব নেতা দীপঙ্কর মজুমদাররা পৌঁছাতেই বিজেপির ভবেশ প্রামাণিকের স্ত্রী আশালতাদেবী ও বিভূতি পাত্রের স্ত্রী কনকদেবী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “দোকান ভাঙচুর হল। দলেরই লোক মার খেল। ধরাও পড়ল আমাদেরই লোক! পুলিশ এখনও আমাদের খুঁজছে। আর যাঁদের নামে অভিযোগ করছি তাঁরা পুলিশের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” গ্রামের এক মহিলা বলেন, “ওঁদের কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে বিজেপি করা কী অপরাধ?”
তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া আক্রান্ত কর্মী অশ্বিনী পাত্রের বাড়িতেও যান বিজেপির প্রতিনিধিরা। অশ্বিনীবাবু তাঁদের বলেন, “বাড়িতে ঢুকলে ওঁরা (তৃণমূল) পুলিশকে খবর দিচ্ছে। তাই পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আপনারা এসেছেন শুনে আশ্বস্থ হয়ে বাড়ি এলাম।” অশ্বিনীবাবুর বোন আরতি পাত্র ফের অভিযোগ করেন, “দাদাকে মারধরের সময়ে তৃণমূলের লোকেরা সম্মানহানির হুমকি দিয়েছিল।” পুলিশকে জানাননি? আরতিদেবী বলেন, “পুলিশ মিথ্যে বলছি বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।”
বিজেপি কর্মীকে মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি নবকুমার মহাপাত্রের বাড়িতে যেতেই স্ত্রী সবিতা বললেন, “উনি কটকে।” তাঁর পাশেই ছিলেন নবকুমারবাবুর মা অশীতিপর লাবণ্যময়ীদেবী। ছেলে কোথায়? লাবণ্যময়ীদেবী বলেন, “এই তো কিছুক্ষণ আগে কোথায় গেল।” সঙ্গে সঙ্গে সবিতাদেবীর জবাব, লাবণ্যময়ীদেবী মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন! বাড়ি ছাড়ার পরেই ফোন আসে নবকুমারবাবুর। তিনি বলেন, “আমি অসুস্থ হয়ে কটকের হাসপাতালে। বিজেপি মিথ্যে মামলা করেছে। এ জন্য পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে।” আত্মসমার্পণ করবেন? তাঁর জবাব, “না।”
পুলিশ তাঁদের রেয়াত করছে না জানিয়ে তৃণমূলের বুথ সভাপতি শঙ্কর জানা বলেন, “সোমবার রাতে পুলিশ এসেছিল। দলের অনেকে আতঙ্কে রয়েছেন।” দাঁতন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিক্রম প্রধানের অভিযোগ, গ্রামে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। ওই গ্রামে না গেলেও দাঁতনে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পুলিশ যেতে নিষেধ করায় দলবল নিয়ে যায়নি। শুধু দু’জন জেলা নেতা গিয়েছেন।” তাঁর কথায়, “প্রতিরোধ কমিটি গড়তে বলেছি। পুলিশ আসলে শাসকদলের অংশ মাত্র।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy