কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে সমর দেবনাথ (বাঁ দিকে), সুদীপ সরকার (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
মিথ্যে কথা বলে বিশ্বাস ভেঙে দেওয়ার জন্যেই দিঘার হোটেলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু সমর দেবনাথকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন সুদীপ সরকার। তদন্তে পুলিশ আরও জেনেছে, সমকামী সম্পর্কের সেই টানাপড়েন থেকেই বুধবার রাতে সুদীপ চাপার দিয়ে সমরকে কুপিয়ে নিজে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। হোটেল ম্যানেজারের অভিযোগের ভিত্তিতে দিঘা পুলিশ সুদীপের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে।
এ দিন কাঁথি হাসপাতালের বেডে বসে সুদীপ বলে, “সমরকে ভালবাসি। কিন্তু, ও আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সে জন্যই ওকে শাস্তি দিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করি। কিন্তু, আফশোস দু’টোর কোনওটাই হল না!” সমরও সম্পর্কের কথা মানছেন। বলছেন সুদীপের কথাতেই তিনি দিঘার হোটেলে উঠেছিলেন। তবে তাঁর অভিযোগ, “ও আমাকে খুন করার পরিকল্পনা করেই ব্যাগে চপার, দড়ি নিয়ে আসে। রাতে হঠাত্ আক্রমণ করে।” নদিয়ার তাহেরপুরের বাসিন্দা সমরের মাথায়, পিঠে, হাতে আঘাত করেছে। এ দিন সকালে তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে চিকিত্সকেরা জানাচ্ছেন, সমর আপাতত বিপদমুক্ত।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বছর তিনেক আগে কলকাতার সল্টলেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার সময় দু’জনের আলাপ হয়। সেখান থেকেই ঘনিষ্ঠতা। একে অপরের বাড়িতেও যেতেন। সুদীপ পুলিশকে বলেছেন, গত দুর্গাপুজোর পর নভেম্বরে বাড়ির আলমারি ভেঙে চল্লিশ হাজার টাকা আর কিছু গয়নাগাটি নিয়ে দু’জনে জম্মু-কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এমন সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু সমরের বিয়ের খবর সুদীপ জানার পর থেকেই। সুদীপের কথায়, “ও আমাকে গোপন করে একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে শুরু করে। এমনকী গোপনে বিয়েও করে। ওর বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই আমার জীবন ছারখার হয়ে গিয়েছে।” সমরের বাড়ি বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে। এ দিন সকালে তাঁর বাবা, কাকারা দিঘায় পৌঁছন। তাঁরাও ছেলের সমকামী সম্পর্কের কথা মেনেছেন।
দিঘা থানার পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার দুপুরে সমর-সুদীপ আলাদা ভাবে এসে এক হোটেলে ওঠে। হোটেলের রেজিস্ট্রারে নিজেদের বন্ধু বলে পরিচয় দেয়। রাতের খাওয়া তাঁরা হোটেলের ঘরেই সারেন। এ পর্যন্ত পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু, রাত দশটার পর তাঁদের ঘর থেকে প্রবল চিত্কার-চেঁচামেচি শুনে হোটেলের কর্মীরা ছুটে গিয়ে দেখেন, সমর রক্তাক্ত হয়ে বিছানায় পড়ে। আর সুদীপ সিলিং থেকে ঝুলছেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে পাঠায়।
সম্পর্কের কোন অবস্থায় এমনটা হতে পারে? মনোবিদ মোহিত রণদীপের ব্যাখ্যা, “আর পাঁচটা সম্পর্কের মতো সমকামী সম্পর্কেও ভাললাগা, খারপ লাগা থাকে। আর ভালবাসার সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে অধিকারবোধ। যখন তা ধাক্কা খায়, তখন ভালবাসা ঘৃণায় পরিবর্তিত হয়। তৈরি হয় আক্রোশ, হতাশা। সবটা মিলেমিশে এমন ঘটনা বিরল নয়।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার চেষ্টা আসলে নিজেকে শাস্তি দেওয়া।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy