পক্ষপাতের অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়ে গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সাধারণ সভায়।
পালাবদলের পর বৃহস্পতিবারই ছিল জেলা পরিষদের দ্বিতীয় সাধারণ সভা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সাধারণ সভা হয়েছিল গত বছর। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন উন্নয়ন নিগমের সভাপতি দীনেন রায় প্রমুখ। ছিলেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষেরাও। সভায় উপস্থিত কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া পক্ষপাতের অভিযোগে সরব হন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার সঙ্গে দেখা করেও একই অভিযোগ জানান তিনি।
মানসবাবু বলেন, “অধিকারের মতো প্রকল্পে সরকারি নির্দেশকেও অমান্য করা হচ্ছে। সবং পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেস পরিচালিত হওয়ায় তাকে অন্ধকারে রেখে উপভোক্তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এক কর্মাধ্যক্ষ যে সব নাম প্রস্তাব করেছেন, সেই সব নামগুলোই জেলা পরিষদ তালিকায় রেখেছে।” সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল পণ্ডারও দাবি, “অধিকার প্রকল্পের তালিকা তৈরি নিয়ে সবং পঞ্চায়েত সমিতির কোনও মতামত নেওয়া হয়নি।” মানসবাবুদের অভিযোগের তির সবং থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য তথা জেলা পরিষদের বিদ্যুত্ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির দিকে। অমূল্যবাবু অবশ্য বলেন, “জেলাশাসক তদন্ত করে দেখুন যাঁরা প্রকল্পের সুবিধে পেয়েছেন, তাঁরা অযোগ্য কি না!”
এ দিন কংগ্রেসের জনপ্রতিনিধিরা যে সব প্রশ্ন তুলে সরব হন, তার জবাব দেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। এক সময় দু’পক্ষের মধ্যে চাপানউতোরও হয়। অবশ্য জল বেশি দূর গড়ায়নি। মানসবাবু জানিয়ে দেন, তাঁদের প্রতিবাদ অন্যায় নিয়ে। ভাল কাজে সব সময় জেলা পরিষদ তাঁদের সহযোগিতা পাবে।
আরও বেশি মানুষকে সরকারি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ জোর দিয়েছে বলে জানান সভাধিপতি। তিনি জানান, গত বছর দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জেলার অধিকাংশ ব্লক বন্যা কবলিত হয়। সেই সময় জেলা পরিষদ ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে সহায়তা দিয়েছে। গণবন্টন ব্যবস্থায় আরও বেশি স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। জেলার সড়ক ও পরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে মসৃণ করতে জেলা পরিষদ নতুন পিচ রাস্তা তৈরি, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার, নতুন বাস ও ট্রেকার রুট অনুমোদন ও রূপায়ন করেছে। ২০ হাজার গৃহহীন মানুষকে আমার ঠিকানা, ইন্দিরা আবাস, ও অধিকার প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়া হয়েছে।
সভাধিপতির কথায়, “জেলা পরিষদ আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করে যে স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে ঘরে ঘরে শৌচাগার তৈরি ও ব্যবহার, নিরাপদ পানীয় জল, শিশুদের শিক্ষা- স্বাস্থ্য ও পুষ্টি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাই আমাদের স্থায়ী উন্নয়ন এনে দিতে পারে।” তাঁর মতে, একদিকে যেমন জেলা পরিষদের আয় বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয়েছে, তেমনই খরচ কমানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। সঞ্চয়ের অর্থে জেলা পরিষদের স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি বা ঢিলেমির কারণে কোনও অবস্থাতেই যাতে উন্নয়ন ব্যাহত না-হয়, সেই জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতর, পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজের মাসিক মূল্যায়ন নিয়মিত ভাবে করার চেষ্টা হচ্ছে।
জেলা পরিষদের কংগ্রেস সদস্য বিকাশ ভুঁইয়ার অবশ্য অভিযোগ, “নিয়মিত কাজের মূল্যায়ন করার কোনও চেষ্টাই নেই তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের।” বিকাশবাবু জানান, প্রায় সব বৈঠকই অনিয়মিত হয়। জেলা পরিষদের সাধারণ সভা বছরে চারটে হওয়ার কথা। তা হয়নি। স্থায়ী সমিতির বৈঠকগুলো মাসে একটা হওয়ার কথা। তা-ও হয়নি।
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে অধিকার প্রকল্পে জেলা ১৬০০.৫০ লক্ষ টাকা পেয়েছিল। এই টাকায় ৩,৩০০টি বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা। এর মধ্যে ৩,১০১ জনকে প্রথম কিস্তির টাকা, ১,৩৭১ জনকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০১৩-’১৪ তে ১০৯১.৪০ লক্ষ টাকা এসেছে। এই টাকায় ১,৪০৬টি বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা। এরমধ্যে ১,৩৭১ জনকে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy