তৃণমূলের মিছিলে অবরুদ্ধ মেদিনীপুর শহরের রাস্তা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
মেদিনীপুর শহরে সভা করার অনুমতি চেয়েছিল বিজেপি। পুলিশের কাছ থেকে সেই অনুমতি মেলেনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের প্রস্তাবিত সভা তাই শেষমেশ হয়নি। বদলে বুধবার মেদিনীপুর শহরে বিজেপির বিশাল মিছিল হয়। পাল্টা হিসেবে বৃহস্পতিবার শহরে মিছিলের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। তৃণমূলের সেই মিছিল ঘিরে কর্মব্যস্ত দিনে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হল। যানজটে আটকে দুর্ভোগে পড়লেন বহু পথচলতি মানুষ। এদিন বিকেলে শহরের একাংশ কার্যত অচল হয়ে যায়। দলের মিছিলে নেতৃত্ব দিতে শহরে আসেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক মুকুল রায়।
শহর যে অচল হয়েছে, তা মানছেন মুকুলবাবুও। মিছিল শেষে শহরের গাঁধীমূর্তির পাদদেশে বক্তব্য রাখেন তৃণমূলের এই নেতা। তাঁর স্বীকারোক্তি, “মাত্র ১২ ঘন্টার নোটিসে আজ আমরা শহরের রাজপথে নেমেছি। যে মিছিল আজ মেদিনীপুর শহরে হয়েছে, সেই মিছিলে শহর অচল হয়ে গিয়েছে। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে!” শহরের এই গাঁধীমূর্তির পাদদেশেই সভা করতে চেয়ে পুলিশের কাছে শুরুতে অনুমতি চেয়েছিল বিজেপি। সভা হলে যানজট হবে, এই যুক্তিতে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এদিন এখানে পিক- আপ ভ্যানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখেন মুকুলবাবু। তৃণমূলের এই নেতা যতক্ষণ বক্তব্য রেখেছেন, তখন শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা প্রায় অবরুদ্ধই ছিল। মাইক্রোফোন হাতে মুকুলবাবু অবশ্য বলেন, “এটা শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে সভা করা উচিত নয়। সভা আমাদেরও নেই! তাই এই জায়গা বেশিক্ষণ আটকে রাখবো না!”
বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরের কলেজ মাঠের সামনে থেকে তৃণমূলের এই মিছিল শুরু হয়। দুপুর থেকেই বিভিন্ন ব্লক থেকে দলের কর্মী-সমর্থকেরা আসতে শুরু করেন। পথচলতি মানুষের দুর্ভোগ এড়াতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তাও শহরবাসীর ভোগান্তি এড়ানো যায়নি। মিছিলের জেরে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন এলাকার গতি থমকে গিয়েছে। কলেজ মাঠের সামনে থেকে মিছিল যায় বটতলাচক-কেরানিতলায়। সেখান থেকে কালেক্টরেট মোড়-এলআইসি মোড় হয়ে গাঁধীমূর্তির পাদদেশ। গাঁধীমূর্তির পাদদেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপির কড়া সমালোচনা করেন মুকুলবাবু। তিনি বলেন, “ভোটের আগে প্রচার চলল, সুদিন আসবে। কী সুদিন এলো? গ্যাসের দাম বাড়ছে। পেট্রোল-ডিজিলের দাম বাড়ছে।” সদ্য অনুষ্ঠিত ভিন্ রাজ্যের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “উপনির্বাচনের ফলাফলে হলটা কী? এখনও তো চার মাস হয়নি। আর চল্লিশ দিন গেলে সরকারের হাল- হকিকত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে!”
আগামী মাসে ফের উপনির্বাচন রয়েছে। তৃণমূলের এই নেতার দাবি, “উপনির্বাচনের ফলাফল বেরোলে দেখবেন নরেন্দ্র মোদী ভাববেন, আমার সরকার আছে কী নেই! আছে কী নেই!” সিপিএম, মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি এ জেলাকে ফের অশান্ত করতে চাইছে বলেও এদিন অভিযোগ করেন মুকুলবাবু। তাঁর কথায়, “যখন মাওবাদীদের অত্যাচার হয়েছিল, তখন তোমরা কোথায় ছিলে ভাই! বাংলায় যখন নৈরাজ্য বিরাজ করছিল, তখন তোমরা কোথায় ছিলে ভাই! এখন সিপিএমের সঙ্গে মিলে, মাওবাদীদের সঙ্গে মিলে এলাকা অশান্ত করতে চাইছো? বাংলার মানুষ জাগ্রত। শান্ত বাংলাকে অশান্ত করতে চাইলে জনগণ জবাব দেবে।” বিজেপিকে বিঁধে তিনি বলেন, “আপনাদের মনে হচ্ছে, কালকেই যদি ক্ষমতায় আসেন ভাল হবে। এটা ওত সহজ ব্যাপার নয়। ৩৪ বছর লড়াই করে বাংলায় তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে! আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই! আমরা তৃণমূল। আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো!”
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিজেপির বিশাল মিছিলে চিন্তিত হয়ে নিজেদের শক্তিপ্রদর্শন করতেই তড়িঘড়ি এই মিছিলের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। তৃণমূলের মিছিলে অবশ্য ভালই জমায়েত হয়েছিল। মিছিলের মাথাটা যখন কেরানিতলায়, তখন শেষটা ছিল বটতলাচকে। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন মুকুল রায়। অবশ্য মুকুলবাবু আসবেন কি না সেই নিয়ে দলেই সংশয় ছিল। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তিনিও এদিন মেদিনীপুরে আসেন। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এদিনের কর্মসূচিকে বিজেপির পাল্টা বলে মানতে নারাজ। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের একের পর এক জনবিরোধী নীতিগুলোর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার আমরা মেদিনীপুরে মহামিছিল করেছি। কেন্দ্রের সরকার রাজ্য সরকারের সঙ্গে নানা ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করছে। একশো দিনের কাজের মতো প্রকল্পের টাকা বকেয়া রাখছে। প্রতিবাদ-মিছিল হবে না!” তাঁর দাবি, “বিজেপির মিছিল নিয়ে আমরা ভাবছি না। এতটুকু চিন্তিতও নই!” তৃণমূলের এদিনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “যে কোনও রাজনৈতিক দলেরই সভা- মিছিল করার অধিকার রয়েছে। আমরাও শহরে সভা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অনুমতি পাইনি। আশা করি, আগামী দিনে তৃণমূলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে!” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “পরিবর্তনের সরকার আসার পরও রাজ্যে কোনও পরিবর্তন হয়নি! এ রাজ্যে বিজেপিকে না কি দূরবীন দিয়েও দেখা যায় না! আর আজ সেই বিজেপিকে রোখারই সমস্ত রকম চেষ্টা চলছে। এই অরাজকতা বাংলায় চলতে পারে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy