Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

কেন্দ্রীয় বাহিনী এত কম এল কেন? শাহের মন্ত্রক পাল্টা আঙুল তুলল রাজীবের কমিশনের দিকেই

রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে নিজের ঘরে বসে রাজীব সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দুপুর ২টো নাগাদ। পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর আসতে এত দেরি হল কেন?’’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েনের জন্য দেরিতে অনুরোধ করেছে কমিশন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েনের জন্য দেরিতে অনুরোধ করেছে কমিশন। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ২০:৪৪
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার দায় কার? প্রশ্ন শুনে শনিবার দুপুরে ভোট চলাকালীন রাজীব সিংহ ‘বল’ ঠেলেছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোর্টে। শনিবার সন্ধ্যায় ভোট শেষের পর দেখা গেল সেটি বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে তার দিকেই। কেন্দ্রের অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন সাহায্য করেনি বলেই বাহিনী যথা সময়ে আসতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গে। সহযোগিতা পেলে ভোটের আগে ৮২৫ কোম্পানি বাহিনী হাজির হত বাংলায়।

শনিবার সকাল ৭টার সময় পঞ্চায়েত ভোট শুরু হয় রাজ্যে। সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে হিংসা, বোমাবাজি, গুলি সংঘর্ষ, তার জেরে মৃত্যুর অভিযোগ আসতে শুরু করে। বুথ দখল, ব্যালট বাক্স নষ্ট করা, ভোট লুটের মতো খবরও আসতে থাকে। এর পরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে নিজের ঘরে বসে কমিশনার রাজীব সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দুপুর ২টো নাগাদ। পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। শনিবার পর্যন্ত ৬৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে এসে পৌঁছতে পেরেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আসতে এত দেরি হল কেন? আমরা তো বাহিনী চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম ২২ জুন। তার পর মনেও করিয়েছিলাম বেশ কয়েক বার। তা সত্ত্বেও ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী দিতে জুলাই মাসের ৩ তারিখ হয়ে গেল! আমার মনে হয় আরও কিছু আগে বাহিনী এলে সুবিধা হত।’’ তবে একই সঙ্গে রাজীব এ-ও জানান, তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে এর জন্য দায়ী করছেন না। তিনি মনে করেন, ওঁদেরও নিশ্চয়ই কোনও অসুবিধা ছিল, তাই দেরি হয়েছে। রাজীবের এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে একটি পাল্টা বিবৃতি জারি করা হয়। সন্ধ্যায় ভোট শেষ হওয়ার পর পাল্টা একটি বিবৃতি জারি করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাতে তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে দেরি হয়েছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ার কারণেই। কেন এই দায় কমিশনেরই, তা-ও এক এক করে যুক্তি দিয়ে জানিয়েছে তারা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, প্রথমত, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য দেরিতে অনুরোধ করেছে কমিশন। সাধারণত বাহিনীর জন্য ট্রেন এবং অন্যান্য ব্যবস্থা করতে সময় লাগে। রাতারাতি হয় না।

দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার জন্য তাদের কোথায় ট্রেন থেকে নামতে হবে বা কোথায় পৌঁছতে হবে তার একটা বিশদ তথ্য জানার দরকার হয়। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত সেই তথ্য রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানায়নি। বদলে বাহিনীর কো অর্ডিনেটরদের বলে দেওয়া হয় এ ব্যাপারে জানতে হলে জেলাশাসকদের জিজ্ঞাসা করুন। যেটা করার জন্য অতিরিক্ত সময় লেগেছে। উদাহরণ দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গে যে বাহিনী মোতায়েন করার দরকার ছিল, তাদের উত্তর-পূর্ব ভারত থেকেই আনানো যেত। তারা সহজে এবং কম সময়ে সেখানে পৌঁছেও যেত। কিন্তু যে হেতু কোথায় যেতে হবে, তা জানা ছিল না, তাই প্রথমে এই বাহিনীকে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে কলকাতায় আনাতে হয়। তার পর তাঁদের মোতায়েন করার জায়গা জেনে পাঠানো হয় উত্তরবঙ্গে। যার ফলে শুধু সফর করতে অতিরিক্ত দু’দিন সময় লেগে যায়।

তৃতীয়ত, কিছু বাহিনীর শনিবার সন্ধ্যাতেও পৌঁছনোর কথা বাংলায়। নোডাল অফিসার কমিশনকে বলেছিলেন, এই বাহিনীকে স্ট্রংরুমের পাহারার জন্য ব্যবহার করা হোক। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কিছু বাহিনীকে স্ট্রং রুমের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতে রাজি হয়নি কমিশন।

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, যে সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল, সেখানে কোনও অশান্তি হয়নি। বরং কোনও বুথ দখলের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখলেই কড়া হাতে দমন করেছে তারা। কিন্তু কোন বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে আর কোন বুথে থাকবে না, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জেলাশাসক। স্পর্শকাতর বুথগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানে আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার কথা ছিল তাদের। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে হয়তো তা হয়নি বলেই মত কেন্দ্রের।

তবে ভোট শেষের পর পঞ্চায়েত ভোটের হিংসা প্রসঙ্গে শাসকদল তৃণমূলও অবশ্য দায় ঠেলেছে কেন্দ্রের দিকেই। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘পুরোটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত স্ক্রিপ্ট। বাহিনী চাওয়া হল। অথচ তারা ধাপে ধাপে এল। অনেক এলও না। যতটা আসার কথা ছিল সবাই তো আসেইনি। বাহিনী পাওয়া যাচ্ছে না কেন সেটা তো হবে না। রিজার্ভ ফোর্স কি কেন্দ্রের কাছে নেই? দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে কেন? এত বাহিনী গেল কোথায়? অন্য কাজে ব্যবহার করছে? না কি নিয়োগ হচ্ছে না?’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2023 MHA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy