Advertisement
E-Paper

সকাল থেকে বেজে চলেছে অভিযোগের ফোন, অফিস টাইমে দফতরে পৌঁছে সারা দিন নির্লিপ্তই রইলেন ‘সিংহ’

পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব থেকেই তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ভোটগ্রহণের দিনে বেশি প্রশ্ন উঠল প্রথম তিন ঘণ্টা রাজ্য নির্বাচন কমিশন দফতরে রাজীব সিংহের অনুপস্থিতি নিয়ে।

state election commissioner Rajiva Sinha

শনিবার নিজের দফতরে রাজীব সিংহ। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ১৮:৫৮
Share
Save

শনিবার বিকেলে যখন নবান্নে তাঁর হিতৈষীরা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, এর চেয়ে খারাপ সময় আর কারও জীবনে কী আসতে পারে, তখন তিনি নিজে নির্বিকার! সেই ‘নির্বিকার’ মুখেই তিনি বললেন, ‘‘কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না, কে কাকে গুলি করে মেরে দেবে!’’

বেশির ভাগ সময়েই তাঁকে সাদা পোশাকে দেখা যায়। আর সব সময়েই দেখা যায় সাদা হাতকাটা জ্যাকেটে। জনশ্রুতি— রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর থেকে ওই সাদা জ্যাকেট কেনেন তিনি। শনিবারেও সেই জ্যাকেটটি ছিল তাঁর পরনে। যদিও বিরোধীরা বলছে, দিনভর যা হল, তাতে সেই সাদা জ্যাকেটে কালো কালির পোচ পড়েছে গাঢ় হয়ে। যা ভবিষ্যতে উঠবে কি না, বলা কঠিন।

কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ নির্বিকার। সম্ভবত খানিকটা নির্বিকল্পও। বিরোধীরা যেমন আগাগোড়াই অভিযোগ করেছেন, পঞ্চায়েত ভোট করানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে রাজীবের ‘বিকল্প’ কেউ ছিলেন না।

শনিবার ভোট শুরু হয়েছিল সকাল ৭টায়। নির্বাচন কমিশনার দফতরে এলেন ঘড়ি ধরে। ‘অফিস টাইম’ মেনে। সকাল ১০টা ১ মিনিটে। সঙ্গে পুলিশের কনভয়। নীলবাতি লাগানো সাদা রঙের এসইউভি থেকে নামলেন রাজীব। গাড়ি থেকে নেমেই এগোলেন লিফ্‌টের দিকে। তাঁর সঙ্গে সঙ্গেই এগোল ঠোঁটের দু’পাশ দিয়ে প্রায় থুতনি পর্যন্ত লম্বিত দুর্ধর্ষ গোঁফ এবং দু’গাল জোড়া চওড়া জুলফি। ভোট শুরুর পর তিন ঘণ্টায় তাঁর জন্য অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছিল সংবাদমাধ্যমের। সে সব উড়েও গেল তাঁর দিকে। রাজীব নির্বিকার। লিফ্‌ট উঠে গেল দোতলায়। সেখানেই তাঁর চেম্বার। গোটা দিনে আর একটি বারের জন্যেও চেম্বার ছেড়ে বাইরে আসেননি রাজীব।

রাজীব আসার আগে পর্যন্ত খানিকটা ‘নিষ্প্রাণ’ই লাগছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন দফতর। ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল সকাল ৭টায়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে জানানো হয়, সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোটের হার ছিল ১০.২৬ শতাংশ। একই সঙ্গে এটাও জানা যায় যে, সকাল থেকে অনেক জায়গার ভোটের পরিসংখ্যানই পায়নি কমিশন! রাজীব আসার পর তৎপরতা শুরু হয় পুলিশেরও। সাড়ে ১০টা নাগাদ দফতরের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। খবর এসেছিল, বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি বিক্ষোভ দেখাতে আসতে পারে রাজীবের দফতরে।

সকাল ৭টায় ভোট শুরুর সময় কমিশনের দফতরে ছিলেন হাতেগোনা কয়েক জন কর্মী। বড়কর্তাদের মধ্যে হাজির শুধু সচিব নীলাঞ্জন শান্ডিল্য। ও দিকে কন্ট্রোল রুমে ফোন বেজেই চলেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগের পর অভিযোগ আসছে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে গেলেও কমিশন দফতর তখনও আড়মোড়া ভাঙছিল। অতীতে দেখা গিয়েছে, ভোট শুরু আগেই নির্বাচন কমিশনার দফতরে পৌঁছে গিয়েছেন। রাজীব আসেননি। তাই কি বাকিদেরও খানিক গা-ছাড়া ভাব? ভাবখানা, অভিযোগ আসছে। লেখাও হচ্ছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেবে কে?

সকাল ৮টার মধ্যে কমিশনে কয়েকটি মৃত্যুসংবাদ এসে গিয়েছিল। কন্ট্রোল রুমের ১২টি টেলিফোন টানা বেজেই যাচ্ছিল। সবগুলি ধরার লোকও নেই। ১২টি ফোনের জন্য জনা ছয় কর্মী। তাঁরাও যা পারেন বলছেন। কারণ, কমিশনার তখনও আসেননি। অভিযোগ শুনে কন্ট্রোল রুমের কর্মীরা কাউকে স্থানীয় থানায় যেতে বলছেন। কাউকে বলছেন, এখনই কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে যাবে!

কিন্তু অভিযোগের পাহাড় জমছিল। কন্ট্রোল রুম তো বটেই, কমিশনের হেল্পলাইন নম্বরেও বুথদখল, ব্যালট বাক্স ভাঙার অভিযোগ এসেই যাচ্ছিল। কমিশনের কর্মীরা জানাচ্ছিলেন, ই-মেল এবং ওয়েবসাইটেও পরের পর অভিযোগ! তার মধ্যেই আসছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাহিনীর তরফে রিপোর্ট। কারণ, ভোটগ্রহণের দু’ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুরো কেন্দ্রীয় বাহিনী তখনও পৌঁছয়নি। তারা এসেই চলেছে। কোথায় তাদের মোতায়েন করা হবে, তা-ও কেউ জানেন না! কমিশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, যে বাহিনী যেখানে নামবে, তারা সরাসরি সেই এলাকার বুথে চলে যাবে। কোথায় কোন বাহিনীর কত জওয়ান মোতায়েন হবে, তার কোনও পরিকল্পনা চোখে পড়ল না।

সাড়ে ৯টা নাগাদ কমিশনে আসেন আইএএস অফিসার সঞ্জয় বনশল। যাঁর সম্পর্কে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বার বার অভিযোগ করেছেন। দাবি করেছেন, কমিশনারকে সাহায্য করার জন্য নবান্নই সঞ্জয়কে নিয়োগ করে। যদিও সেই নিয়োগের কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। রাজীব পৌঁছনোর পরে সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে সিআরপিএফের ডেপুটি কমান্ড্যান্ট দিলীপ মালিক এসে রাজীবের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তখন কন্ট্রোল রুমে অভিযোগের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। সাড়ে ১১টার কিছু পরে বিএসএফ-এর আইজি এসসি বুদাকোটি এসে রাজীবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তখনই জানা যায়, এখনও আসছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সব মিলিয়ে এসেছে ৬৬০ কোম্পানি। এর পরে বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পরে কমিশনের তরফে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে জেলাশাসকদের বার্তা পাঠানো হয়। কোনটি ‘স্পর্শকাতর’ আর কোনটি ‘স্পর্শকাতর’ বুথ নয়, তার পৃথক তালিকাও পাঠাতে বলা হয় কমিশনের তরফে। তত ক্ষণে বিভিন্ন জেলায় সাত জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।

দুপুর ২টো নাগাদ প্রথম বার সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন রাজীব। নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে জানান, তখনও পর্যন্ত ১,২০০ থেকে ১,৩০০টি অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। তার মধ্যে ৬০০টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। রাজীব বলেন, ‘‘কোথাও ভোটদান আটকে গিয়েছে। কোথাও দুষ্কৃতীরা ব্যালট বাক্স নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে! এই ধরনের অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পেরেছি।’’ তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রাজ্য পুলিশের বিষয়। আমাদের কাছে খবর এলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে বলি। পুলিশ নিজের তাগিদে এফআইআর করবে। দরকারে গ্রেফতার করবে। তদন্ত করবে।’’

সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে কমিশনের কোনও ‘দায়’ বলেই দাবি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবের। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কাজ ব্যবস্থাপনা। কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না, কে কাকে গুলি করে মেরে দেবে। কিন্তু ব্যবস্থার দিক থেকে বলতে পারি, আমরা সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে ভোটারেরা ভোট দিতে পারেন।’’ শনিবার রাত ৮টা ৩৫ নাগাদ দফতর থেকে রাজীব বেরিয়ে যান।

Panchayat Election 2023 Rajiv Sinha TMC BJP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।