Advertisement
১৮ অক্টোবর ২০২৪
Citizenship Amendment Act

শান্তনু বলছেন নাগরিকত্ব ‘নিঃশর্ত’ই, কিন্তু আতঙ্কে ‘বাতিলরা’

যাঁরা কেন্দ্রের শাসক দলের আশ্বাসে আবেদন করছিলেন, নথির অভাবে আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা কার্যত আতঙ্কিত। কারণ বাংলাদেশে বসবাসের যে নথি চাওয়া হচ্ছে, তা তাঁদের কাছে নেই।

নাগরিকত্বের শংসাপত্র হাতে।

নাগরিকত্বের শংসাপত্র হাতে। —ফাইল ছবি।

সুস্মিত হালদার, সীমান্ত মৈত্র  
কৃষ্ণনগর ও গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৪ ০৮:৪০
Share: Save:

দুই পড়শি একই সঙ্গে অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। এক জন নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়ে গেলেও অন্য জনের আবেদন খারিজ হয়েছে। কারণ, প্রয়োজনীয় নথি নেই। একই বাড়িতে স্ত্রী শংসাপত্র পেলেও নথির অভাবে স্বামীর আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। যাঁদের আবেদন গ্রাহ্য হল না, তাঁদের ভাগ্যে কী রয়েছে— এই প্রশ্নের মধ্যেই শুক্রবার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিদায়ী কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর দাবি করলেন, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে। তখন তাঁর পাশে বসে সদ্য ‘নাগরিকত্ব’ পাওয়া শান্তিলতা বিশ্বাস, যাঁর স্বামী তারক বিশ্বাসের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) আবেদন জানানো নিয়ে নানা নেতা-মন্ত্রীর পরস্পরবিরোধী দাবিতে এমনিতেই উদ্বাস্তু মতুয়ারা দিশাহারা। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব চেয়ে এসে এই আইন পেয়েছেন। তবু যাঁরা কেন্দ্রের শাসক দলের আশ্বাসে আবেদন করছিলেন, নথির অভাবে আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা কার্যত আতঙ্কিত। কারণ বাংলাদেশে বসবাসের যে নথি চাওয়া হচ্ছে, তা তাঁদের কাছে নেই। অতএব, এত দিন যা-ও বা ভোটার কার্ড-আধার কার্ডের দৌলতে তাঁরা যে কোনও স্বাভাবিক নাগরিকের মতোই বসবাস করছিলেন, এখন নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করার পরে আবেদন বাতিল হওয়ায় তাঁদের নিজেদের অবস্থান ঠিক কী দাঁড়াল, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না।

বছর বারো আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা, নদিয়ার আসাননগরের বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল প্রথম দফায় নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে আবেদন জানিয়েও তা পাননি তাঁর প্রতিবেশী আলোক বিশ্বাস। শৈশবে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে চলে আসা অলোক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “ও দেশ থাকার কোনও নথি আমাদের কাছে নেই। কোনও মতে চলে এসেছিলাম। জানি না, ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে।”

এই সংশয় রয়েছে অনেকের মনেই। সেই ছোটবেলায় বাবার কোলে চেপে যশোরের কালিয়া এলাকা থেকে ভারতে চলে এসেছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের বাবলাবন এলাকার বাসিন্দা, বছর ষাটেকের রমেশ বিশ্বাস। নথি না থাকায় তিনি নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদনই করেননি। তাঁর কথায়, “ও দেশে থাকার নথি কোথায় পাব? কিছুই তো সঙ্গে করে নিয়ে আসা হয়নি। আর কোনও দিন যে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে, সেটাও কল্পনায় আসেনি।”

বগুলার কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা, মতুয়া সম্প্রদায়ের দীনেশ বিশ্বাসেরও একই দশা। তাঁর মা শোভা বিশ্বাসের বয়স প্রায় ৮৪ বছর। প্রায় ষাট বছর আগে তাঁরা পূর্ববঙ্গের গোপালগঞ্জ থেকে কার্যত খালি হাতে চলে এসেছিলেন। কোনও নথিপত্রই তাঁর নেই। এ দিন আতঙ্কের সুরে দীনেশ বলেন, “এখন মা যদি নাগরিকত্ব না পান, তা হলে কী হবে? এই বয়সে তিনি কোথায় যাবেন?” তাঁর প্রশ্ন, “এত দিন ভারতে থাকার পরেও তিনি কেন নাগরিক হবেন না?” বগুলারই আর এক মতুয়া বাসিন্দা গৌতম বিশ্বাসও বলছেন, “আমাদের কাছে কোনও নথি নেই। যদি আবেদন করার পরেও নাগরিকত্ব না পাই, তখন কী হবে?” তাঁর ক্ষোভ, “আমরা ভোট দিচ্ছি। আবার নাগরিকত্বের জন্য প্রমাণও দিতে হবে? এ কেমন কথা?”

শান্তনু ঠাকুর অবশ্য শান্তিলতাকে পাশে বসিয়ে দাবি করেন, “শান্তিলতা বিশ্বাস নিঃশর্ত নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তাঁকে কোনও নথিপত্র দেখাতে হয়নি।” সে ক্ষেত্রে তাঁর স্বামী কেন নাগরিকত্ব পেলেন না, সেই প্রশ্নের অবশ্য সদুত্তর মেলেনি। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুরও বলেন, “শান্তিলতা নাগরিকত্ব পেলেন আর তাঁর স্বামী তারক কেন পেলেন না? নদিয়ার বগুলাতেও অনেকে আবেদন করে নাগরিকত্ব পাননি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Citizenship Amendment Act CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE