প্রতীকী ছবি।
জীবনের প্রায় প্রতিটি পদেই গণিত মানুষের সঙ্গী। আইনি মারপ্যাঁচের মধ্যে এ বার আদালতে মামলার শুনানিতে অভিযুক্তের সুলুকসন্ধানেও সহায়কের ভূমিকা নিল জটিল গণিত, ‘ন্যাট’ ও ‘লুন অ্যালগরিদম’-এর সূত্র!
বাংলার একটি সাইবার এবং ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে গাণিতিক পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলি। পুলিশি সূত্রের খবর, ২০২০ সালে অতিমারির মধ্যে জুলাইয়ে বাগুইআটির একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক অভিযোগ জানায়, তাদের এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা লোপাট হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে প্রায় দু’কোটি টাকা উদ্ধার হলেও বাকি এক কোটি টাকার হদিস মেলেনি। ওই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট চেন্নাইয়ের, কিন্তু সেই টাকা সরানো হয়েছে বাগুইআটির শাখা থেকে। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই ব্যাঙ্কের এক অফিসার-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে। পরে ওই অফিসার এবং তাঁর এক সঙ্গীর বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ করা হয়।
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই ব্যাঙ্ক অফিসার মোবাইলের সিম জালিয়াতি করে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বর এবং ই-মেল বদলে দেন। ওই গ্রাহকের নামে একটি ডেবিট কার্ড বার করে তা নিজের কাছে রাখেন। তার পরে সেগুলির সাহায্যেই টাকা সরিয়ে ফেলেন তিনটি ভুয়ো অ্যাকাউন্টে। ভুয়ো অ্যাকাউন্টটি তৈরি করে দিয়েছিলেন ওই ব্যাঙ্ক অফিসারের এক সঙ্গী, যিনি কোনও ব্যাঙ্কের সঙ্গেই যুক্ত নন।
ওই ব্যাঙ্ক অফিসার এবং তাঁর সঙ্গী জামিনের জন্য প্রথমে কলকাতা হাই কোর্টে এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। জামিন মেলেনি। শীর্ষ আদালত গত ১৩ মে নির্দেশ দেয়, দু’মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে বিচার শেষ করতে হবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী বারাসত আদালতে বিচারক ভবানীশঙ্কর শর্মার এজলাসে ওই মামলার বিচার চলছে। সরকার পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষহয়ে গিয়েছে।
সরকার পক্ষের একটি সূত্রের খবর, দ্রুত বিচার শেষ করার নির্দেশ থাকলেও এই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি যে-আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার (ইন্টারনেট প্রোটোকল) করেছিলেন, তা চিহ্নিত করাটাই ছিল বড় সমস্যা। কারণ, তদন্তে দেখা যায়, ওই একই আইপি একই সময় অন্তত দশ জন ব্যবহার করেছেন। তাই এই সমস্যা সমাধানে ‘ন্যাট’ নামে একটি গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায়। ওই পদ্ধতির মাধ্যমে একটি আইপি একাধিক লোক ব্যবহার করলেও তাঁদের মধ্যথেকে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা সম্ভব। এছাড়াও অভিযুক্ত ব্যক্তি যে-মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছিলেন, তার আইইএমআইনম্বর চিহ্নিত করতে ‘লুন অ্যালগরিদম’ব্যবহার করেছেন বিভাসবাবু। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক চেন্নাইয়ের বাসিন্দা হওয়ায় সেখানের থানাতেও অভিযোগ করা হয়েছিল এবং তামিল ভাষায় লেখা নথি ব্যবহার করা হয়েছে ওই মামলায়। সেগুলির অনুবাদ করা হয়েছে গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যে।
সরকার পক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুনানি শেষ করার তাগিদ থাকায় বহু দিন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গিয়েছে। বিচারের কাজ দ্রুত হচ্ছে। মামলার এই পর্যায়ে এসে তাই সরকার পক্ষের আশা, বিচারে জয় হবে তাদেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy