Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আক্রা স্টেশনে আগুন দিল বিক্ষোভকারীরা, শৌচাগারে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচালেন রেলকর্মীরা

রেল সূত্রে খবর, বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রায় পাঁচশো বিক্ষোভকারী জমায়েত করেন আক্রা স্টেশন সংলগ্ন লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে। প্রথমে অবরোধ শান্তিপূর্ণ থাকলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ রেল লাইনে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। ওই সময়েই শিয়ালদহ থেকে বজবজগামী একটি ট্রেন লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে এসে অবরোধে দাঁড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভকারীরা ট্রেনের চালককে নেমে আসার নির্দেশ দেয়।

রণক্ষেত্র আক্রা স্টেশন চত্বর। নিজস্ব চিত্র

রণক্ষেত্র আক্রা স্টেশন চত্বর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:৩৫
Share: Save:

এবার অশান্তি ছড়ালো কলকাতা শহরের গায়েই। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ করতে নেমে বিক্ষোভকারীরা ট্রেন লাইনে টায়ার ফেলে আগুন জ্বালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করল শিয়ালদহ-বজবজ শাখার আক্রা স্টেশনে। পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি পাথর ছোড়েন। ঘটনায় জখম হয়েছেন রেল পুলিশের অন্তত দু’জন কর্মী। একই ভাবে এ দিন সকাল থেকে অশান্তি চলে মালদহ- নিউ জলপাইগুড়ি বিভাগের ভালুকা রোড স্টেশনে। সেখানেও স্টেশনে ভাঙচুর এবং আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফলে উত্তরবঙ্গগামী অধিকাংশ ট্রেনই বাতিল করেছে পূর্ব রেল।

রেল সূত্রে খবর, বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রায় পাঁচশো বিক্ষোভকারী জমায়েত করেন আক্রা স্টেশন সংলগ্ন লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে। প্রথমে অবরোধ শান্তিপূর্ণ থাকলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ রেল লাইনে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। ওই সময়েই শিয়ালদহ থেকে বজবজগামী একটি ট্রেন লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে এসে অবরোধে দাঁড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভকারীরা ট্রেনের চালককে নেমে আসার নির্দেশ দেয়। ট্রেনের চালক নামতে রাজি না হলে তাঁকে জোর করে নামানো হয়। তারপরই শুরু হয়ে যায় ট্রেনে ব্যাপক ভাঙচুর। চালকের কেবিন, যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করার পর প্রতিটি কামরায় বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর চালায়। রেলের দাবি, ট্রেনের সিট থেকে শুরু করে সমস্ত জিনিস কামরা থেকে উপড়ে লাইনে ফেলে দেওয়া হয়।

ওই সময় উপস্থিত রেল কর্মীদের একজন বলেন, ‘‘ট্রেনে ভাঙচুরের পরেই বিক্ষোভকারীদের একটি বিশাল দল সোজা স্টেশন চত্বরে উঠে আসে। প্ল্যাটফর্মে থাকা অটোমেটিক টিকিট ভেন্ডিং মেশিন উপড়ে ফেলে দেওয়া হয় ট্রেন লাইনে। বিক্ষোভকারীরা ঢুকে যান স্টেশন মাস্টারের অফিসে। সেখান থেকে আসবাব পত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বের করে লাইনে ফেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।”

আই বি চৌধুরি নামে আক্রা স্টেশনের এক কমার্শিয়াল ক্লার্ক বলেন,‘‘আমরা ওই অবস্থা দেখে বুকিং কাউন্টারের কোলাপসিবল গেট বন্ধ করে দিই। কিন্তু তাতেও আটকানো যায়নি বিক্ষোভকারীদের। তাঁরা কংক্রিটের বিদ্যুতের খুঁটি দিয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েন। ভেতরে আসবাবপত্র, কম্পিউটার সব ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেন। আমরা প্রাণভয়ে শৌচাগারে আশ্রয় নিই।”

আকড়া স্টেশনে আগুন নেভাচ্ছে দমকলবাহিনী। নিজস্ব চিত্র

লুকিয়ে প্রাণ বাঁচানো রেলকর্মীদের এক জন বলেন, ‘‘বিক্ষোভকারীরা আমাদের শৌচাগারে দেখতে পেয়ে বেরিয়ে আসতে বলেন। তারপরই আগুন লাগিয়ে দেন বুকিং কাউন্টার এবং কন্ট্রোল প্যানেলে। অন্যদিকে রাস্তায় চলা বিক্ষোভের জেরে দমকলও আটকে পড়ে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় স্টেশনে থাকা নথি থেকে যন্ত্রপাতি। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বড় পুলিশ বাহিনী। ঘটনাস্থলে পৌঁছন মেটিয়াব্রুজের তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল খালেক। তিনি বলেন,‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমি এসেছি যাতে অশান্তি রোখা যায়।” তিনি দাবি করেন, যারা ওই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁরা কেউই স্থানীয় নন। তাঁরা বহিরাগত।

অন্যদিকে একই রকম ভাবে দিনভর ভাঙচুর চলে মালদহ শাখার ভালুকা রোড স্টেশনে। ভালুকাতে উপড়ে দেওয়া হয় রেলের লাইন। সেখানেও প্ল্যাটফর্মে লাইনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। গোটা স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। কার্যত গোটা স্টেশনই গুড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। আগুন লাগানো হয়েছে চাঁচোল স্টেশনেও। ফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের রেলপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, বাতিল করা হয়েছে হাওড়া-গুয়াহাটি গামী সরাইঘাট এক্সপ্রেস, আগরতলা-শিয়ালদহ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস-সহ উত্তরবঙ্গগামী এক গুচ্ছ ট্রেন। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে মালদহের বৈষ্ণবনগর মোড় এবং মুর্শিদাবাদের সাগরদীঘি মোড়েও রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভের ফলে সড়কপথেও প্রায় বিচ্ছিন্ন উত্তরবঙ্গ।

অন্য বিষয়গুলি:

CAB NRC sunanda ghosh Akra CAB protest Citizen Ammendment bill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy