Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Marriage

ভিন্ন ধর্মে বিয়ে, বিবাহিত তরুণীকে বাড়ি ফেরার ‘চাপ’ পুলিশের

হাঁসখালি থানার পুলিশের যুক্তি, বছর একুশের ওই তরুণী বাড়িতে কিছু না জানিয়ে চলে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সম্রাট চন্দ
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২০ ০৪:২০
Share: Save:

ভিন্ন ধর্মের তরুণ-তরুণী ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন। তার পরেই ওই তরুণীকে নদিয়ার হাঁসখালি থানায় নিয়ে এসে নিজের বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য পুলিশের চাপ সৃষ্টি করার একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের কাজ অপরাধ দমন ও অপরাধীদের ধরা। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলা নিজের সম্মতিতে বিয়ে করলে সেটা অপরাধ তালিকাভুক্ত হতে পারে না। তা হলে পুলিশ কেন এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে? পুলিশের এই স্বঘোষিত সামাজিক অভিভাবকের ভূমিকা ‘বিপজ্জনক’ বলে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

হাঁসখালি থানার পুলিশের যুক্তি, বছর একুশের ওই তরুণী বাড়িতে কিছু না জানিয়ে চলে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন। গত ২৪ অগস্ট তাঁর বাবা থানায় ডায়েরি করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে কোতয়ালি থানার দুর্গাপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় তরুণীকে। তার পর থানায় আনা হয়। সেখানে ডাকা হয় তাঁর বাবা, ভাই এবং এলাকার এক বাসিন্দাকেও।

আরও পড়ুন: ভর্তিতে কি ফের দাদার দাপট? নাম বিভ্রাটে প্রশ্ন

পুলিশের দাবি, নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছিল বলেই তরুণীকে থানায় আনা হয়। এবং কোনও ভাবেই তাঁকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে যেতে বাধা দেওয়া হয়নি। তাঁকে মানবিকতার খাতিরে কিছু কথা বলা হয়েছে। যা কিছু হয়েছে আইন মেনেই হয়েছে। তরুণী পরে তাঁর স্বামীর কাছেই ফিরে গিয়েছেন। এ ব্যাপারে তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর পরিবারের এক সদস্য শনিবার বলেন, ‘‘যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ওটা নিয়ে কিছু ভাবছি না আর কিছু বলতেও চাইছি না।”

হাঁসখালি অঞ্চল রানাঘাট পুলিশ জেলার অন্তর্গত। সেখানকার পুলিশ সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, ‘‘পুলিশ তরুণীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছিল। তাঁকে চাপ দেওয়া হয়নি। তিনি সাবালিকা, তিনি তাঁর ইচ্ছামতো যেখানে খুশি যেতে পারেন।’’ সিপিএমের তরফ থেকে পুলিশের ‘অতি সক্রিয়তা’র সমালোচনা করা হলেও রানাঘাটের সাংসদ বিজেপির জগন্নাথ সরকারের দাবি, ‘‘ওই ভিডিয়ো আমি দেখেছি। পুলিশ চাপ দিচ্ছে বলে মনে হয়নি। ওরা বোঝাচ্ছিলেন।’’ প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ এ ক্ষেত্রে বোঝানোর কে?

আরও পড়ুন: কত শতাংশ কার্যকর হলে ভ্যাকসিন ব্যবহারযোগ্য

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, এক অফিসার তরুণীকে বলছেন, ‘‘আমি ওসি হাঁসখালি বলছি।’’ ওই তরুণী স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন বলে জানানোর পরেও ওই অফিসার তাঁকে বলেছেন, ‘‘আমরা প্রশাসনিক ভাবে চাই, আপনি বাবার কাছে ফিরে যান।’’ তরুনী তখন জানান, তিনি স্বামীর কাছে যেতে চান। অফিসার তখনও তাঁকে বলতে থাকেন, ‘‘আপনার বাবা কাঁদছেন। আপনার কষ্ট হচ্ছে না? আপনি বাবার সঙ্গে যান। আপনি যে কাজ করলেন তাতে দু’টো গ্রামের মধ্যে সমস্যা তৈরি হতে পারে।’’ তাঁর নাম নিয়েও কটাক্ষ করতে দেখা যাচ্ছে পুলিশকর্মীকে। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ওই তরুণী পুলিশকে বলছেন, ‘‘আমাকে যেখান থেকে এনেছিলেন সেখানে রেখে দিয়ে আসুন।’’ পুলিশ আধিকারিক উত্তর দিয়েছেন, ‘‘আমি আপনাকে পৌঁছে দেওয়ার ঠেকা নিয়ে বসে নেই।’’

তরুণীকে এর পর একটি চিঠি লিখে জমা দিতে বলেন পুলিশ আধিকারিক। সেই চিঠি ক্যামেরার সামনে তুলেও ধরেন। প্রশ্ন উঠেছে, থানার ভিতরের এই জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হল কী ভাবে? হাঁসখালি থানার আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘সেই সময়ে ঘরে অনেকেই ছিলেন। হতে পারে তাঁদের মধ্যে কেউই সবার অজান্তে মোবাইলে ভিডিয়ো তুলে পোস্ট করেছেন!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Religion Hanskhali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy