অর্ণব দাম। — নিজস্ব চিত্র।
হুগলি জেল থেকে রবিবার অর্ণব দামকে বর্ধমান জেলে বদলি করা হল। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার তিনি সেখান থেকে পিএইচডিতে ভর্তির জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন। সে জন্য প্রয়োজনীয় অন্তর্বর্তী প্যারোল মঞ্জুর করেছেন এডিজি কারা। এই নিয়ে প্রয়োজনীয় ঘোষণা সোমবার হবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, জট কাটতে চলেছে। কথা রাখছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার কড়া নিরাপত্তার মাঝে হুগলির সংশোধনাগার থেকে বর্ধমানে স্থানান্তরিত করা হয় অর্ণবকে। দুপুর ১২ টার সময় অর্ণবকে হুগলির জেলা সংশোধনাগার থেকে বার করা হয়। তার পর ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে অর্ণবকে কড়া নিরাপত্তার মাঝে আনা হয় বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারে।
কুণাল অভিযোগ করেছিলেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাধা দিচ্ছেন অর্ণবের গবেষণার প্রক্রিয়ায়। উপাচার্য সেই দাবি মানেননি। এই আবহে শনিবার ফোনে গৌতমের সঙ্গে কথা বলেন কুণাল। সূত্রের খবর, তাঁকে ভর্তি সংক্রান্ত জট কাটার আশ্বাস দেন উপাচার্য। তার পরেই রবিবার প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, সোমবারই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চলেছেন অর্ণব। সে জন্য তাঁকে বর্ধমান জেলে বদলি করা হয়েছে। কুণাল রবিবার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘শনিবার উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলি। তিনি আশ্বাস দেন। প্রশাসনিক স্তরে যে যে পদক্ষেপ হয়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, তিনি কথা রাখছেন। জট কাটতে চলেছে।’’
কুণাল আগেই জানিয়েছিলেন, পড়াশোনার সুবিধার্থে অর্ণবকে বর্ধমান জেলে বদলি করার ব্যবস্থা হচ্ছে। এই নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং কারামন্ত্রী অখিল গিরির আলোচনাও হয়েছে। অখিল আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, কোন জেলে অর্ণব থাকবেন, তা দেখে নেওয়া হবে। সম্ভবত বর্ধমান জেলেই সুবিধা বেশি হবে। তাঁর কথায়, ‘‘হুগলি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতে খরচ বেশি। রাস্তাঘাটের বিষয় রয়েছে। সেখানে নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে। কোর্টের অর্ডার রয়েছে।’’ অর্ণবের গবেষণা আটকাবে না বলেও আশ্বাস দেন অখিল।
তার পরেই শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর মেলে, সোমবার বিকেল ৩টের সময় সেখানে পিএইচডির জন্য অর্ণবের কাউন্সেলিং হবে। ওই প্রক্রিয়ার পরে তিনি গবেষণা করতে পারবেন। মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে কারা দফতর থেকে পাঠানো চিঠির জবাবও এসে যাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে। কারা দফতরের কাছে দু’টি বিষয় জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁর কথায়, “আমি হুগলির জেল সুপারকে চিঠি দিয়ে দু’টি প্রশ্ন করেছিলাম। প্রথম প্রশ্ন, কী ভাবে অর্ণব বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিয়মিত ক্লাস করবেন? সে ক্ষেত্রে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি কে বা কারা দেখবেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন, অর্ণবকে পিএইচডি করতে দেওয়ার বিষয়ে জেল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা অনুমোদন রয়েছে কি না।” উপাচার্য এ-ও জানান, অর্ণব যে হেতু সংশোধনাগারে রয়েছেন, তাই কারা কর্তৃপক্ষের ‘নো অবজেকশন’ দরকার। কারামন্ত্রী অখিল জানিয়ে দেন, তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। সোমবারই পাঠানো হবে জবাব।
গত ২৬ জুন পুলিশি প্রহরায় ইন্টারভিউয়ের জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হন অর্ণব। গত ৫ জুলাই মেধাতালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাস বিভাগে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৬.৮৬৭০ নম্বর পেয়ে প্রথম হন অর্ণব। এই বিভাগে গবেষণা করার জন্য ইন্টারভিউয়ে ২৪৯ জনকে পিছনে ফেলে প্রথম হন অর্ণব ওরফে বিক্রম। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, মেধাতালিকায় থাকা পরীক্ষার্থীদের জন্য ৯ জুলাই কাউন্সেলিংয়ের দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ৮ জুলাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, অনিবার্য কারণে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া স্থগিত হয়েছে। অবশেষে সেই জট কাটতে চলেছে।
খড়্গপুর আইআইটির মেধাবী ছাত্র অর্ণব পড়াশোনা ছেড়ে সিপিআই (মাওবাদী)-এর রাজনৈতিক মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে সেই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। গত ফেব্রুয়ারিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy