দলের সদস্যদের জন্য প্রশ্নমালা সিপিএমের, বিড়ম্বনায় বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলা নেতারা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গত ৫ অগস্ট রাজ্য জুড়ে মুজফ্ফর আহমেদের জন্মদিবস পালন করেছে সিপিএম। ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার পুরোধা মুজফ্ফর আহমেদ ওরফে ‘কাকাবাবু’-র একটি উক্তি প্রায়শই উদ্ধৃত করেন সিপিএম নেতারা— বন্ধুর চেয়ে পার্টি বড়। কিন্তু এখন সিপিএমের তরুণ প্রজন্মের অনেকে বলছেন, বন্ধুর চেয়ে পার্টি না হয় বড় হল। কিন্তু বৌয়ের চেয়েও কি পার্টি বড়?
সম্প্রতি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি দেশ জুড়ে ‘ত্রুটি সংশোধন অভিযান’ শুরু করেছে। সেই অভিযানের অঙ্গ হিসাবে রাজ্য কমিটির তরফে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় একটি প্রশ্নমালা পাঠানো হয়েছে। সেখানে সাতটি প্রশ্নের মধ্যে অন্যতম হল মার্ক্সবাদী নেতাদের ধর্মচর্চা এবং বৈভব পরিত্যাগ নিয়ে। বৈভবের প্রশ্নে লেখা রয়েছে, বিবাহ বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে বিলাসবহুল ব্যয় পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকার বিষয়ে জানাতে। এতেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে-চলা অনেক তরুণ সিপিএম নেতাকে। তাঁদের কেউ দলের সর্ব ক্ষণের কর্মী। কেউ বা অন্য ছোট চাকরি করে এই বাজারেও দিনে পাঁচ-ছ'ঘণ্টা দলকে দেন।
যেমন দক্ষিণ হাওড়ার এক সৌম্যদর্শন তরুণ নেতা আগামী ডিসেম্বরে বিয়ে করবেন দীর্ঘ দিনের বান্ধবীকে। সেই নেতার বাবা কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। মা স্কুলশিক্ষিকা। বাবা-মায়ের সাধ— ছেলের বিয়ে দেবেন বেজায় ধুমধাম করে। কিন্তু পুত্র ভয় পাচ্ছেন, লোক খাওয়ালে সদস্যপদ চলে যাবে না তো? হুগলির এক ছাত্রনেতার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। সূত্রের খবর, তাঁর বাবা ব্যবসায়ী। মা সরকারি কর্মচারী। ফলে তাঁরা আশ মিটিয়ে পুত্রের বিবাহে আড়ম্বর করতে চান। সেই আর্থিক ক্ষমতাও তাঁদের রয়েছে। কিন্তু বাদ সাধছে ছেলের দলের প্রশ্নমালা। ওই নেতাও ঘনিষ্ঠমহলে ‘বিড়ম্বনা’র কথা জানিয়েছেন। একই অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের তরুণ নেতারও। তিনিও ঘনিষ্ঠদের কাছে স্পষ্টই বলছেন, ঘোর বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এক দিকে পরিবার। অন্য দিকে দল।
তবে এরই পাশাপাশি অনেকে ‘বিদ্রোহী’ মেজাজও দেখাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, অনেক নেতাকে দেখা যায় দলের কোনও কোনও নেতার বৈভববহুল বিবাহে গিয়ে বিয়ের রেজিস্ট্রি ফর্মে সাক্ষীর সই করতে। তখন কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না? সামনেই যাঁদের বিয়ে, তাঁদের অনেককে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মন্ত্র পড়ে শাস্ত্রমতে বিয়ে করতে হবে ‘বাড়ির চাপে’। কেউ কেউ বলছেন ‘সামাজিক চাপ’-এর কথাও। এঁদের অনেকে নিজেদের জেলার নেতৃত্বের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনাও করেছেন বলে খবর। কোথাও জেলা নেতৃত্ব বিষয়টি বুঝছেন, আবার কোথাও সিদ্ধান্তের ভার ছেড়ে দিচ্ছেন তরুণদের উপরেই।
সিপিএম নেতাদের একাংশের চালচলন এবং বেশভূষা নিয়ে দলের মধ্যেই আলোচনা এবং সমালোচনা রয়েছে। আতিশয্যের বিপণনও মাত্রাছাড়া জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে বলে দাবি অনেকের। তাতে সময়োপযোগী লাগাম টানতেই প্রশ্নমালায় বৈভব এবং বিলাস সংক্রান্ত প্রশ্ন রাখা হয়েছে বলে বক্তব্য সিপিএম নেতাদের অনেকের। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘ওই প্রশ্নমালা কোনও নির্দেশিকা নয়। জীবনযাপন সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা শুধু। দল এটা মনে করে না যে, রাতারাতি সকলেই সব কিছু করে ফেলবে। যাতে একটা নিয়ন্ত্রণ থাকে, তার জন্যই চেষ্টা করা হয়েছে।’’
তবে যাঁরা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন, তাঁদের অনেকেই বলছেন, এই প্রশ্নমালা তাঁদের মানসিক দোটানায় ফেলে দিয়েছে। বিবাহ তাঁদের কাছে আপাতত এক ‘বিভ্রাট’। অনেকেই নিমন্ত্রিতের সংখ্যায় কাঁচি চালাতে শুরু করে দিয়েছেন। রাজকীয় থেকে ছিমছাম করা হচ্ছে ভোজনের মেনুও। কারণ একটাই— পার্টি কী বলবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy