Advertisement
১৮ অক্টোবর ২০২৪
CAA Document Verification

রাজ্যে সিএএ আবেদনের শুনানি শুরু, নদিয়ায় নথি দিতে পারলেন না সকলে, এর পর কী হবে? প্রশ্ন

Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ ০৬:৫৭
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) নাগরিকত্ব দিতে শুনানি শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলায়। সূত্রের খবর, নদিয়ায় ইতিমধ্যে দুই শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। তবে এর অনেকেই উপযুক্ত নথি জমা দিতে পারেননি। প্রশ্ন উঠেছে, তাঁদের অবস্থান এখন কী হবে?

বস্তুত, এই প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করেই দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। বিরোধীরা দাবি করছেন, আবেদন বাতিল হলে নাগরিকত্বই থাকবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাল্টা বলেছেন, আসলে আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ার অর্থ, প্রমাণ হয়ে গেল আপনি নাগরিক। এ বারে হাতেকমলে কাজে নেমে যখন এত জন লোকের আবেদন বাতিল হয়েছে, তখন কিন্তু কোনও সদুত্তর মেলেনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্যের বাসিন্দাদের সিএএ পোর্টালে অনলাইন আবেদনের ভিত্তিতে ডাক বিভাগের সুপারেরা শুনানিও শুরু করেছেন। তবে আবেদনকারীদের একাংশ তাঁদের ছেড়ে-আসা দেশে বসবাসের নথি দেখাতে পারছেন না। তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ডাক বিভাগ সূত্রের খবর, নদিয়া থেকে এখনও পর্যন্ত ২২১ জন আবেদন করেছেন। তার মধ্যে মাত্র ৩৫ জন ঠিক মতো নথিপত্র আপলোড করতে পেরেছেন। সোমবার তার মধ্যে ২৮ জনকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছিল, ২৪ জন এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে আবার চার জন বাংলাদেশ থেকে আসার প্রমাণস্বরূপ নির্ধারিত ১০টি নথির মধ্যে একটিও দেখাতে পারেননি। তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বাকি সাত জনকে ডাকা হয়। তার মধ্যে দু’জন আসেননি, বাকি পাঁচ জনই বাংলাদেশের নথি দেখাতে পেরেছেন। নদিয়া জেলা ডাক বিভাগের সুপার গৌরাঙ্গচরণ ভেরা এ দিন বলেন, “নির্দেশিকা অনুযায়ী আবেদনকারীদের নথিপত্র খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

যাঁরা বাংলাদেশ থেকে আসার নথিপত্র দেখাতে পারলেন না, তাঁদের কী হবে? ডাক বিভাগের সুপার এই প্রশ্নের সদুত্তর দেননি। তবে বিভাগেরই একটি সূত্রের দাবি, নথি দেখানোর জন্য তাঁদের ফের ডাকা হবে। তখনও যদি তাঁরা নথি দেখাতে না পারেন? এই প্রশ্নের জবাব মেলেনি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, পদ্ধতিগত ত্রুটিতে আবেদন বাতিল হতেই পারে। পুরোটাই নির্ভর করছে এমপাওয়ার্ড কমিটির উপরে। তবে কারও আবেদন বাতিল হলে তিনি ফের আবেদন করতে পারবেন। প্রশ্ন হল, এই সময়ের মধ্যে তিনি কি আর নাগরিক থাকছেন না? এর কোনও সদুত্তর দিল্লি থেকেও মেলেনি।

বিজেপির স্টেট সিএএ ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির অন্যতম সদস্য সৌভিক চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করছেন, “ওই নথি পরে জমা দেওয়া হবে বলে ফর্মে একটা বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নথি জমা না দিতে পারা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকেই নাগরিকত্ব পেয়েছেন।” কিন্তু পরে যদি সেই নথি চাওয়া হয় এবং তখনও যদি কেউ তা জমা দিতে না পারেন? সৌভিকের দাবি, “আইনে নতুন ধারা যুক্ত করে বলে দেওয়া হবে, বিভিন্ন ধর্মীয়-সামাজিক সংগঠনের দেওয়া শংসাপত্র জমা দিলেই চলবে।” প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি এই ধোঁয়াশা কাটাতে নতুন ধারা যোগ করা হবে?

উদ্বাস্তু মতুয়া অধ্যুষিত রানাঘাট-বনগাঁয় নাগরিকত্বের দাবি দীর্ঘ দিন ধরে নির্বাচনের অন্যতম নির্ণায়ক বিষয়। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, নদিয়ায় এখনও পর্যন্ত মতুয়ারাই বেশি আবেদন করেছেন। বিজেপিপন্থী মতুয়া সংগঠনের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুশীল বসুর দাবি, “ভোট মিটলেই সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করবে মোদী সরকার।”

তৃণমূলপন্থী মতুয়া সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি প্রমথরঞ্জন বসুর পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপি গাঁজাখুরি গল্প দিচ্ছে। যাঁরা আবেদন করলেন, তাঁরা পরে বুঝবেন যে কত বড় ভুল করেছেন।’’

বেনাগরিক হয়ে যাওয়ার বিপদ রয়েছে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-তেআবেদন করতে নিষেধ করলেও তাঁরা আবেদন করছেন কেন? এ দিন ডাক বিভাগে শুনানিতে আসা গোপাল সরকার, ধ্যানেন্দ্রনাথ সরকারেরা পাল্টা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো আধার কার্ড করতেও বারণ করেছিলেন। আর এখন তো সবেতেই আধার কার্ড লাগে। ওঁর কথা শুনে বিপদে পড়তে চাই না!”

সহ-প্রতিবেদন: অনমিত্র সেনগুপ্ত

অন্য বিষয়গুলি:

CAA Citizenship Amendment Act
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE