Advertisement
২৪ জানুয়ারি ২০২৫
Sandeshkhali Incident

‘নুসরত দিদি কথা রাখলেন না’, বলছে ক্ষুব্ধ সন্দেশখালি

কয়েক মাস আগে দক্ষিণ কলকাতার একটি আবাসনে ফ্ল্যাট দেওয়া সংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পরে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন সাংসদ নুসরত।

Nusrat Jahan

তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান। — ফাইল চিত্র।

বিতান ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫৬
Share: Save:

প্রায় দেড় মাস ধরে খবরে সন্দেশখালি। কিন্তু তিনি কোথায়?

পাঁচ বছর আগে ভোটের প্রচারে বেরিয়ে তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, সব সময় পাশে থাকবেন গ্রামবাসীদের। ডাকলেই যাবেন। কিন্তু গত দেড় মাসে যখন গ্রামবাসীদের কাছে তাঁর সব থেকে বেশি প্রয়োজন, তখন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের এই দ্বীপাঞ্চলে পা পড়ল না তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানের। তাঁর দলও যেন তাঁকে দূরেই সরিয়ে রাখল পুরো ঘটনাপ্রবাহে। তাই দেখা গেল, ‘ক্ষত’ মেরামতে তৃণমূল উদ্যোগী হলেও তিনি নেই!

শুধু কি এই দেড় মাস? গ্রামবাসীদের দাবি, পাঁচ বছরে একবারও নুসরতের দেখা মেলেনি এ তল্লাটে। ভোটের প্রচারে তিনি শুধু সন্দেশখালির মূল দ্বীপে এসেছিলেন। শেখ শাহজাহানের হুডখোলা জিপে করে ঘুরেছিলেন। অথচ, এই এলাকায় অভিনেত্রী-সাংসদের ভক্তের সংখ্যা কম নয়।

সন্দেশখালিতে কোনও সিনেমা হল নেই। তবু এখনও তাঁর সিনেমা দেখতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উজিয়ে বসিরহাট বা হাসনাবাদের হলে ভিড় জমান সোমা পাত্র, সীমা পাল, রতন দাস, তরুণ হালদাররা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সাংসদ একবারও না-আসায় তাঁরা হতাশ। অথচ, কিছু দিন আগে মহিলাদের আন্দোলন যখন তুঙ্গে, রটে গিয়েছিল সাংসদ আসবেন। কিন্তু এলেন কই!

সীমা বলেন, ‘‘ওঁর সিনেমা প্রথম দিনে প্রথম শো দেখতে গিয়েছি প্রতিবার। প্রতিবাদ আন্দোলন তো অত্যাচারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরে শুরু হয়েছে। বাধ্য হয়েছি আমরা। রোজ মনে মনে প্রার্থনা করেছি, একবার নুসরত দিদি এই দ্বীপে আসুন। উনি তো ভোটের আগে ভরসা দিয়েছিলেন। সেই ভরসায় ভোট দিয়েছিলাম। দিদি কথা রাখলেন না।’’

ক্ষোভ শুধু সাধারণ গ্রামবাসীদেরই নেই, রয়েছে তৃণমূলের একাংশেরও। সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোও মানছেন, নুসরত সন্দেশখালিতে এলে দলের প্রতি ভরসার জায়গা আরও দ্রুত দৃঢ় হত। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ তো বিপর্যয়েই পাশে চাইবে আমাদের। এই দাবি তো স্বাভাবিক। প্রথমে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাবে, সেটা সামনে দাঁড়িয়ে শুনলে, তার প্রতিকার করতে উদ্যোগী হলে ভরসা বাড়বে।’’

চেষ্টা করেও নুসরতের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, এলাকায় না গেলেও সম্প্রতি সাংসদ বিবৃতি দিয়েছেন, ‘‘এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে উস্কানি দেওয়া বা অন্যদের উস্কানি দেওয়া থেকে বিরত রেখে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করা উচিত। রাজ্য সরকার অক্লান্ত ভাবে স্থানীয়দের সাহায্য করছে এবং এক জন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। আমার কাজ আগুন নেভানো, ইন্ধন জোগানো নয়!’’ এর বাইরে সমাজমাধ্যমে তাঁর আর কোনও সন্দেশখালি-উল্লেখ নেই।

প্রশ্ন উঠেছে, এইটুকু বিবৃতিতে কি ক্ষতি সামলানো যাবে?

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘একটা এলাকায় মহিলারা এমন নিগ্রহের অভিযোগ করছেন, প্রতিবাদে বেরিয়ে এসেছেন, তবু স্থানীয় সাংসদ, যিনি নিজেও এক জন মহিলা, তাঁর দেখা নেই। অথচ তিনি কলকাতায়। বিষয়টা দুর্ভাগ্যজনক!’’ কিছুটা কটাক্ষ করে সুজন বলেন, ‘‘শাহজাহান-বাহিনীর পক্ষে দাঁড়ানোর জন্যেও তো যেতে পারতেন!’’

বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘দেবীর এলাকা জ্বলছে। মহিলারা অত্যাচারিত হয়েছেন, প্রতিবাদ করছেন। আর উনি (সাংসদ) ডগ ডে, চকলেট ডে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে— এ সব নিয়ে ব্যস্ত! দেবীদের ভোট দিয়ে জেতালে এই রকমই হবে! কোনও সংবেদনশীলতা নেই এঁদের।’’

কয়েক মাস আগে দক্ষিণ কলকাতার একটি আবাসনে ফ্ল্যাট দেওয়া সংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পরে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন সাংসদ নুসরত। প্রশ্নের মুখে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়েও গিয়েছিলেন। তার পর থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিশেষ দেখা যায়নি তাঁকে। তৃণমূল সূ্ত্রের খবর, নুসরতের এ বার আর টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখনও পর্যন্ত তৃণমূল নেত্রীর ভাবনা তেমনই।

অন্য বিষয়গুলি:

Sandeshkhali Incident TMC Nusrat Jahan sandeshkhali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy