—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
তখন বাম আমল। ২০০৪ সালের গোড়ায় বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত জনজাতি গ্রাম আমলাশোলে অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। মাঝে কেটে গিয়েছে কুড়িটা বছর। আমলাশোল অনেক কিছু পেয়েওছে। তবে এখনও সেখানে অনেকেরই জন্মের শংসাপত্রটুকু নেই। ফলে আধার কার্ডও হচ্ছে না।
সম্প্রতি আমলাশোলে আধার কার্ডের শিবির করতে গিয়ে প্রশাসনের নজরে এসেছে, আমলাশোলের প্রায় ৫০ জনের জন্মের শংসাপত্র নেই। এঁদের বেশির ভাগেরই বয়স ১০ থেকে ২৫ বছর। আমলাশোল লাগোয়া এলাকাতেও আরও জনা পঞ্চাশেক বাসিন্দার খোঁজ মিলেছে, যাঁদের জন্মের শংসাপত্র নেই। যে আমলাশোলে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে প্রশাসন একসময় তৎপর ছিল, সেখানে কেন জন্মের শংসাপত্রটুকু হয়ে ওঠেনি, সেই প্রশ্ন উঠছে। এর ফলে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার এই বাসিন্দারা।
পুলিশ-প্রশাসন এখন সেই শংসাপত্র তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে। বেলপাহাড়ির বিডিও সুমন ঘোষ বলেন, “আধার কার্ড করানোর সময় দেখা যায়, অনেকের জন্মের শংসাপত্র নেই। দ্রুত ওই শংসাপত্র তৈরি করে তারপর আধার কার্ড করে দেওয়া হবে, যাতে মানুষজন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান।”
জানা গিয়েছে, গত এপ্রিল মাসে বাঁশপাহাড়ি ফাঁড়ির ওসি সৌরভ ঘোষ আমলাশোলে গ্রামবাসীর সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে জানতে পারেন, অনেকের আধার কার্ড নেই। ফলে, মহিলাদের কয়েক জন লক্ষ্মীর ভান্ডার, বয়স্করা বার্ধক্য ভাতা, স্কুল পড়ুয়ারা স্কলারশিপে বঞ্চিত হচ্ছেন। আধার কার্ড না থাকায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও হচ্ছে না। তারপর পুলিশ-প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে আধার কার্ডের শিবির করা হয়। গত ১২ জুলাই বাঁশপাহাড়ি ফাঁড়িতে ওই শিবিরে পুলিশের উদ্যোগে বাসে লোকজন আনা হয়েছিল। সেখানে মোট ৮৩ জনের মধ্যে মাত্র সাত জনের আধার কার্ড হয়েছিল। কয়েক জনের আধার আপডেট করা হয়েছিল। বাকিদের জন্মের শংসাপত্র না থাকায় আধার কার্ড হয়নি।
কাদের জন্মের শংসাপত্র নেই, সেই সমীক্ষা ইতিমধ্যেই সিভিক ভলান্টিয়ার ও আশাকর্মীদের দিয়ে করানো হয়েছে। দেখা গিয়েছে আমলাশোলে ৪৯ জনের, ঢেঁকিয়া গ্রামে ২১ জনের, জরাডাঙায় ১৩ জনের, কাঁকড়াঝোড়ে তিন জনের জন্মের শংসাপত্র নেই। এঁরা সকলেই লোধা-শবর সম্প্রদায়ের।
রাজ্যে পালাবদলের পরে এলাকায় রাস্তাঘাট হয়েছে, বিনা পয়সায় রেশন পাচ্ছেন বাসিন্দারা। আমলাশোলে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশেই রয়েছে কাঁকড়াঝোড়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র। আর আমলাশোল থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ওদলচুয়া হাইস্কুল। আমলাশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচার-ইনচার্জ শুকদেব রানাও মানলেন, “কিছু জনের আধার কার্ড নেই। আবার অনেকের জন্মের শংসাপত্র নেই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনেক বার বলেছি।” কাঁকড়াঝোড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যারা টিচার ধর্মাল মান্ডিরও মত, “এখনও অনেক বাবা-মায়ের গাফিলতি রয়েছে। তাই ছেলেমেয়েদের জন্মের শংসাপত্রও করান না।” তবে ধর্মাল জানালেন, যারা স্কুলে পড়ে, তাদের স্কুলের শংসাপত্র দিয়ে আধার কার্ড করানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy