Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

কোভিড ভয়ে রোগ নিয়ে ঘরেই

করোনার ভয়ে চিকিৎসকের কাছে না যাওয়ায় অজান্তে বিপদ বাড়িয়ে তুলছেন বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের।

ছবি: শাটারস্টক।

ছবি: শাটারস্টক।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৩
Share: Save:

জিভের ঘা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে ভুগছিলেন সাতষট্টি বছরের বৃদ্ধা দমদমের বাসিন্দা রুবি পাল। করোনা আবহে চেয়েও মা’কে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি মেয়ে। অগস্টে চিকিৎসকের কাছে যখন গেলেন তখন ক্যান্সার আক্রান্ত প্রাক্তন স্কুলশিক্ষিকার জিভ বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। একে কোভিড তার উপরে রোগিণীর শারীরিক পরিস্থিতি মিলে প্রতিকূলতা কম ছিল না। কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অস্ত্রোপচারে সফল চিকিৎসকদের বক্তব্য, ‘‘করোনা আতঙ্কে অনেকে রোগ নিয়ে ঘরে বসে থাকছেন। সময়ে হাসপাতালে আসার জন্য রোগীদের সচেতন করার বিষয়টি এখন অত্যন্ত জরুরি।’’

বেলঘরিয়ার রথতলা মোড়ে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালে গত ২৯ অগস্ট জটিল অস্ত্রোপচার হয় রুবিদেবীর। মেয়ে প্রিয়ঙ্কা দাস জানান, ফেব্রুয়ারি নাগাদ শারীরিক সমস্যা শুরু হলেও লকডাউনের জন্য মা’কে কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। আনলক পর্বে অগস্টে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল অ্যান্ড ওরাল অঙ্কোসার্জন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের কাছে যান রুমিদেবী। বায়োপসি রিপোর্টে দেখা যায়, ক্যান্সারের হানায় জিভের নব্বই শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বৃদ্ধার ওজন মাত্র ৩৯ কেজি। জটিল অস্ত্রোপচারে রক্তপাত হলে কী হবে তা চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তোলে। প্লাস্টিক সার্জন কল্যাণ দাস জানান, থাইয়ের অংশ থেকে বৃদ্ধার জন্য নতুন জিভ তৈরি করেন তিনি। নতুন জিভ তৈরি করার পাশাপাশি ধমনী এবং শিরার জোড়া লাগার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অ্যানাস্থেটিস্ট সুমন্ত কুমার-সহ আট চিকিৎসকের সহযোগিতায় দশ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং চিকিৎসক কল্যাণ দাস। প্লাস্টিক সার্জনের কথায়, ‘‘শহরতলির হাসপাতালের পরিকাঠামোয় পুরো মুখাবয়বগত জিভ যে বদল করা যাচ্ছে এটা খুব ভাল কথা।’’

অস্ত্রোপচার সফল হলেও বৃদ্ধার ‘স্পিচ থেরাপি’র প্রয়োজন। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে প্রাক্তন স্কুলশিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমি এখন ভাল আছি।’’

স্তন ক্যান্সারের শল্য চিকিৎসক তাপ্তি সেন জানান, মার্চে তাঁর এক রোগিণীর বুকে টিউমারের আকার ছিল ৩-৪ সেন্টিমিটার। নিয়মিত চেক-আপ না করানোয় এখন তারই আকার দাঁড়িয়েছে ১৪-১৫ সেন্টিমিটার! ক্যান্সার চিকিৎসকের আক্ষেপ, মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে তরুণীর পুরো স্তনই বাদ দিতে হবে!

ক্যান্সার শুধু নয়, কিডনি, ডায়াবিটিস, হার্টের রোগীরাও করোনার ভয়ে চিকিৎসকের কাছে না যাওয়ায় অজান্তে বিপদ বাড়িয়ে তুলছেন বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের। স্তন ক্যান্সারের শল্য চিকিৎসক তাপ্তিদেবীর কথায়, ‘‘করোনায় মৃত্যুর হার তো মাত্র দু’শতাংশ। কোভিডের ভয়ে রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে না আসায় অন্য রোগের প্রকোপ বৃদ্ধিতে সার্বিক মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কতদিন করোনা চলবে কেউ জানেন না। রোগীদের কাছে আর্জি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসকের কাছে যান। নিজেদের ঘরে বন্দি রেখে বিপদ ডেকে আনবেন না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy