Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

কমিশনের ধমক খেয়ে তড়িঘড়ি হোর্ডিং সাফাই

বিকেলে নির্বাচন কমিশনের ধমক। রাতেই তড়িঘড়ি কলকাতা ও সংলগ্ন দুই ২৪ পরগনায় মুখ্যমন্ত্রীর ছবিওয়ালা সরকারি হোর্ডিং, পোস্টার, ব্যানার খুলে ফেলতে কোমর বেঁধে নেমে পড়ল কলকাতা পুরসভা ও পুলিশ। যা দেখে বিরোধীদের অনেকেই বলছেন, এই তৎপরতাতেই স্পষ্ট এত দিন নির্বাচনী বিধি ঠিকমতো মানা হচ্ছিল না কলকাতা ও শহরতলিতে।

সরকারি হোর্ডিং শহর জুড়ে। (বাঁ দিকে) যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের। (ডান দিকে) এসএসকেএম সংলগ্ন ফুটপাথে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী ও দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সরকারি হোর্ডিং শহর জুড়ে। (বাঁ দিকে) যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের। (ডান দিকে) এসএসকেএম সংলগ্ন ফুটপাথে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী ও দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৩
Share: Save:

বিকেলে নির্বাচন কমিশনের ধমক। রাতেই তড়িঘড়ি কলকাতা ও সংলগ্ন দুই ২৪ পরগনায় মুখ্যমন্ত্রীর ছবিওয়ালা সরকারি হোর্ডিং, পোস্টার, ব্যানার খুলে ফেলতে কোমর বেঁধে নেমে পড়ল কলকাতা পুরসভা ও পুলিশ। যা দেখে বিরোধীদের অনেকেই বলছেন, এই তৎপরতাতেই স্পষ্ট এত দিন নির্বাচনী বিধি ঠিকমতো মানা হচ্ছিল না কলকাতা ও শহরতলিতে।

মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দেয়, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনা এই ধরনের যাবতীয় হোর্ডিং-পোস্টার-ব্যানার খুলে ফেলতে হবে। একইসঙ্গে সরকারি এলাকায় রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন, ব্যানার, পোস্টারও সরিয়ে ফেলতে হবে বলে জানিয়ে দেয় তারা। এ দিন রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে ফুল বেঞ্চের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনায় নির্বাচনী বিধি সঠিক ভাবে পালন করা হচ্ছে না। আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই কাজ শেষ করতে বলেছি।’’

কমিশনের এই নির্দেশ পাওয়ার পরেই শোরগোল পড়ে যায় কলকাতা পুরসভা ও পুলিশের অন্দরে। এ দিনই কলকাতা পুলিশের তরফে এ ব্যাপারে দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, কমিশনের নির্দেশ পেয়ে পুরভবনে পৌঁছে পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতর ও জঞ্জাল অপসারণ দফতরের অফিসারদের জরুরি বৈঠকে ডাকেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। সেখানেই তাঁদের নির্দেশ মানতে ৪৮ ঘণ্টার এই সময়সীমা জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই মতো ওই দুই দফতরের অফিসার ও কর্মীদের নিয়ে ৬০টি দল করা হয়েছে। প্রতিটি দলে ১০ জন কর্মী, দু’জন সুপারভাইজার থাকছেন। সঙ্গে দু’টি করে গাড়ি। বিজ্ঞাপন দফতর সূত্রের খবর, তাঁদের ২০টি টিম ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। ওই দলের সঙ্গেই থাকছে জেলা নির্বাচনী দফতরের অফিসার এবং পুলিশও। এই কাজে কেউ বাধা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ভোটের দামামা বাজতেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে হোর্ডিং-ব্যানার লাগানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী তা নিয়মবিরুদ্ধ হলেও প্রশাসনের তরফে এ নিয়ে কিছু বলা যায়নি।

পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সারা রাত শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকে হোর্ডিং, ব্যানার নামানোর কাজ চলবে। কমিশনের নির্দেশ মেনে আজ, বুধবারের মধ্যে সবগুলি খুলে ফেলা হবে। বিজ্ঞাপন দফতরের এক আধিকারিক জানান, সরকারি বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সরকারি জায়গায় রাজনৈতিক দলের প্রচারের সব রকম বিজ্ঞাপনও সরিয়ে দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তার পাশে ফেস্টুন, রেলিংয়ে থাকা ব্যানার, পোস্টার এবং মিডিয়ান স্ট্রিপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারে থাকা ব্যানার-হোর্ডিংও।

কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনা জেলায় কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ-সংবলিত এত পোস্টার, ব্যানার, হোর্ডিং রয়ে গেল, তা নিয়ে রবিবার বিস্ময় প্রকাশ করেন উপ-নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা। অবিলম্বে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করারও নির্দেশ দেন। কিন্তু তার পরেও প্রশাসন সে ভাবে নড়ে বসেনি। তার জেরেই এ দিন রীতিমতো কমিশনের তোপের মুখে পড়েন দুই ২৪ পরগনা এবং কলকাতা পুরসভা ও পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমার এবং পুর-কমিশনার খলিল আহমেদকে ডেকে পাঠায় কমিশনের ফুল বেঞ্চ। এর পরেই দুই কর্তাকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হুকুম তামিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রতিদিন কাজের কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা-ও কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE