Advertisement
E-Paper

বেতনের পোর্টালে চাকরিহারাদের নাম রাখছেন সহকর্মীরা

প্রধান শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে স্কুলের বেতন পোর্টালে শিক্ষকদের নাম তুলে রিকুইজ়িশন পাঠাতে হয় তাঁদের। সেই অনুযায়ী পরের মাসে বেতন হয়।

প্রধান শিক্ষকেরা জানিয়ে দিলেন, চাকরিহারাদের সকলের নামই স্কুলের বেতন পোর্টালে রেখে দিয়েছেন তাঁরা।

প্রধান শিক্ষকেরা জানিয়ে দিলেন, চাকরিহারাদের সকলের নামই স্কুলের বেতন পোর্টালে রেখে দিয়েছেন তাঁরা। —প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:০৯
Share
Save

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা কি চলতি মাসের বেতন পাবেন? এই প্রশ্ন ঘিরে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার কোনও সদুত্তর এখনও পর্যন্ত দিতে পারেনি শিক্ষা দফতর। দফতরের কয়েক জন কর্মী অবশ্য মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন, চাকরি হারানো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা হয়তো চলতি মাসের বেতন পাবেন। যদিও শিক্ষা দফতর থেকে এ বিষয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানিয়ে দিলেন, চাকরিহারাদের সকলের নামই স্কুলের বেতন পোর্টালে রেখে দিয়েছেন তাঁরা। এবং তাঁদের বেতন সংক্রান্ত রিকুইজ়িশনও পাঠানো হবে।

প্রধান শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে স্কুলের বেতন পোর্টালে শিক্ষকদের নাম তুলে রিকুইজ়িশন পাঠাতে হয় তাঁদের। সেই অনুযায়ী পরের মাসে বেতন হয়। এপ্রিল মাসের বেতনের জন্য আগামী ১০ তারিখের মধ্যে ওই পোর্টালে নাম তুলে রিকুইজ়িশন পাঠাতে হবে। কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে চাকরিহারা শিক্ষকদের নাম কি বেতন পোর্টালে তুলবেন?

বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, চাকরি খোয়ানো শিক্ষকদের একাংশ স্কুলে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। যদিও তাঁদের অনেকে আবার স্কুলে নিয়মিত আসছেনও। ক্লাসও নিচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, চাকরি বাতিল হওয়া বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুলে এসে ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য দায়িত্বও পালন করেছেন।

বাঙুরের নারায়ণদাস মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলে চাকরি হারিয়েছেন দু’জন শিক্ষক ও এক জন গ্রুপ-ডি কর্মী। তাঁরা কেউই স্কুলে আসছেন না। তবে তাঁদের নাম স্যালারি পোর্টালে আছে এবং থাকবে। কারণ, এখনও পর্যন্ত শিক্ষা দফতর বা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে এমন কোনও বিজ্ঞপ্তি আমরা পাইনি যে, তাঁদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হবে। স্কুলের শিক্ষকদের সুপারিশপত্র দেয় স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং নিয়োগপত্র দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে যে হেতু এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি, তাই আমি নিজের সিদ্ধান্তে ওঁদের নাম স্যালারি পোর্টাল থেকে বাদ দিতে পারি না।’’

একই কথা বললেন ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক রাজা দে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের দু'জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। কিন্তু তাঁরা স্কুলে আসছেন, ক্লাসও নিচ্ছেন। হাজিরা খাতায় সইও করছেন। শিক্ষা দফতরের কয়েক জন কর্তার পরামর্শে আমি ওই শিক্ষকদের নাম স্যালারি পোর্টালে রেখেছি। রিকুইজ়িশনও পাঠাচ্ছি। ১০ এপ্রিল হতে মাঝে কয়েকটা দিন বাকি। এর মধ্যে বেতন সংক্রান্ত নির্দেশিকা আসা খুবই দরকার।’’

কোনও কোনও প্রধান শিক্ষক আবার জানালেন, এই ব্যাপারে তাঁরা আইনি পরামর্শ নেবেন। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতির কথায়, ‘‘আমরা খুবই বিভ্রান্ত। আমরা যদি স্যালারি পোর্টালে নাম তুলে স্যালারি রিকুইজ়িশন পাঠাই, তা হলে আবার সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অমান্য করা হয়ে যাবে না তো? শিক্ষা দফতর নির্দেশিকা জারি করে খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারত। কিন্তু ওরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে বিষয়টি নিয়ে আরও বেশি জলঘোলা করছে। এই ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনও জবাব পাইনি। আমরা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেখব। তার পরে আইনি পরামর্শ নিয়ে যা করার করব।’’ এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দ্রুত জারি করার দাবি জানিয়ে শিক্ষা দফতরকে চিঠি লিখেছে ‘বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’।

কয়েক জন প্রধান শিক্ষক আবার জানাচ্ছেন, কাল, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইনডোরে কী বার্তা দেন, তার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁদের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই চাকরি হারানো শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ দেবেন। তবে শিক্ষকদের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর মুখের কথা শুনেই কি তা পালন করা আইনত ঠিক হবে? যেমন, মুখ্যমন্ত্রী গরমের ছুটি এগিয়ে এনে ৩০ এপ্রিল থেকে দেওয়ার কথা মৌখিক ভাবে বলেছেন। যদিও এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা স্কুলশিক্ষা দফতর এখনও দেয়নি। কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো তা আসবে। একই ভাবে চাকরিহারা শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত নির্দেশ শুধু মৌখিক নয়, বিজ্ঞপ্তির আকারেও আসতে হবে। এমনই দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষকেরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal SSC Scam SSC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}